জীবন বৃত্তান্ত ছাড়াই চাকুরির আবেদন?
১১ এপ্রিল ২০১৩জার্মানিতে চাকুরির আবেদন করতে গেলে আজও চিরাচরিত পদ্ধতিতে, সুন্দর একটি ছবি সহ, নাম-ধাম, পারিবারিক খুঁটিনাটি ইত্যাদি দিয়ে আবেদনপত্র পাঠাতে হয়৷ কিন্তু ভবিষ্যতে এ' পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে৷ নাম পড়ে কিংবা ছবি দেখে আবেদনকারী সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়, যা সেই আবেদনকারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ প্রচ্ছন্ন বহিরাগত বিদ্বেষ, এমনকি জাতিবাদ মাথা চাড়া দিতে পারে; নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
এই সব বৈষম্য এড়ানোর শ্রেষ্ঠ পন্থা হল আবেদনপত্রে যদি এ'ধরনের কোনো তথ্য না থাকে; থাকে শুধু ঐ বিশেষ চাকরির জন্য প্রার্থীর যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার খতিয়ান৷ তাহলে স্বভাবতই প্রার্থী নির্বাচনে অন্য কোনো ধরনের প্রসঙ্গ-বহির্ভূত, অকিঞ্চিৎকর, বৈষম্যমূলক বিবেচনা স্থান পাবে না৷ জার্মান ফেডারাল সরকারের বৈষম্য প্রতিরোধী দপ্তরের মতে সেটাই সঠিক পন্থা৷
‘আপনার শুভনাম?'
নিম্ন স্যাক্সনি রাজ্যের সেলে শহরের পৌর প্রশাসন এবার ঠিক সেই পরীক্ষাই চালিয়েছে৷ সেল'এর ‘স্টাটভ্যার্কে', অর্থাৎ পানি ও যানবাহনসংক্রান্ত পৌরসেবার প্রধান হিসেবে ৪৮ বছর বয়সি টোমাস এডাটি'কে নির্বাচন করা হয়েছে, যিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত৷ টোমাস এডাটির ভাই সেবাস্টিয়ান এডাটি জার্মান সংসদে সামাজিক গণতন্ত্রী দলের বিশিষ্ট সদস্য৷
সেলে নগর প্রশাসন এ'যাবৎ ২৩টি চাকুরির জন্য যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পেয়েছে এই বেনামা আবেদন পদ্ধতির মাধ্যমে৷ তার একটি কারণ: ২০১০ সালে বৈষম্য প্রতিরোধী দপ্তর যে পথিকৃৎ প্রকল্প চালু করে, সেলে তা'তে অংশগ্রহণ করেছিল৷ অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ফেডারাল সরকারের পরিবার মন্ত্রণালয়, ডাক কোম্পানি ডয়চে পোস্ট এবং টেলিকম'এর মতো বড় পরিষেবা সংস্থা, লোরিয়াল'এর মতো শিল্পসংস্থা ছিল৷
সবখানেই একবছর ধরে বেনামা আবেদন পদ্ধতিটি পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ তার ফলাফল সব সংস্থার পক্ষে সন্তোষজনক হয়নি৷ যেমন টেলিকম বলেছে, বেনামা আবেদন পদ্ধতির ফলে যে আরো বেশি বিদেশি-বহিরাগত, একা সন্তান প্রতিপালনকারী জননী কি প্রবীণ কর্মীরা চাকরি পেয়েছেন, এমন নয়৷ কাজেই টেলিকম এই পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দিহান৷
নামে কী বা আসে যায়!
তবে ঐ পথিকৃৎ প্রকল্প চালু হবার আগে বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের জরিপ হয়েছে, যেগুলোর ফলাফল চমকে যাবার মতো৷ যেমন একটি তুর্কি নাম থাকলেই ইন্টারভিউ'এর জন্য ডাক পাবার সম্ভাবনা কমে যায়৷ কমবয়সি মহিলাদের ক্ষেত্রে চাকুরিদাতাদের আশঙ্কা থাকে, মহিলা সন্তানসম্ভবা হয়ে ছুটিতে চলে যেতে পারেন৷
এছাড়া জার্মানিতে বেনামা আবেদন পদ্ধতি বিরল হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা বা ব্রিটেনে তার চল বহুদিনের৷ ইউরোপেও একাধিক দেশ ইতিমধ্যেই বেনামা আবেদন পদ্ধতি নিয়ে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে: যেমন সুইডেন , ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং সুইজারল্যান্ড৷
ফ্রান্সের নরসিস নামের একটি সংস্থায় বেনামা আবেদন পদ্ধতি চালু হওয়া যাবৎ মহিলা কর্মীদের সংস্থা দ্বিগুণ হয়েছে৷