জীবন বাঁচানোয় বাতিল ওষুধ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২‘‘আমরা ওষুধগুলি প্রথমে বাছাই করি৷ এরপর একটি টেবিলে সেগুলো রেখে বড় চশমা ও অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয় ওষুধগুলির মেয়াদ কতদিন রয়েছে৷'' এই ভাবেই জনে লেড্ডিন তাদের কাজকর্ম কীভাবে হয় তার ব্যাখ্যা দিলেন৷ ১৯৯৬ সালে নৃত্যশিক্ষাবিদ লেড্ডিন ‘মেডিকেশনস ফর পিপল ইন নিড' সংগঠনটি গড়ে তোলেন৷ তবে এরও আগে থেকে ২০ বছর ধরে এ ক্ষেত্রে সক্রিয় তিনি৷
জনে লেড্ডিন জানান, ‘‘সেই সময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধ চলছিল৷ আমরা পত্রপত্রিকায় ছবি দেখে চিন্তাভাবনা করছিলাম, কীভাবে যুদ্ধে বিপর্যস্ত মানুষদের সাহায্য করা যায়৷'' এক ক্লিনিকের ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় সেই সময়, যিনি প্রথমে ছোট গাড়িতে, পরে ট্রাকে করে ওষুধপত্র সংকটপূর্ণ এলাকায় পৌঁছে দিতেন৷ জনে লেড্ডিন তাঁর কাজকর্মে মুগ্ধ হন এবং তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন৷ চার বছর তিনি এই চিকিত্সকের সঙ্গে কাজ করেছেন৷ এই সময়টা তাঁর জন্য বেশ শিক্ষণীয় ছিল, জানান এই মানব দরদি নারী৷
কাজে লাগে বর্জিত ওষুধ
‘মেডিকেশনস ফর পিপল ইন নিড' সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধপত্র পাঠিয়ে থাকে৷ তবে ঘরের কাছের লোকজনকেও অবহেলা করা হয় না৷ যেমন হামবুর্গ শহরেও গৃহহীন যে সব মানুষের ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সংস্থাটি৷ চিকিত্সকরা হামবুর্গের বিভিন্ন জায়গায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন৷ প্রটেস্টান্ট গির্জার ‘আলিমাউস' ও ক্যাথলিক গির্জার ‘গৃহহীনদের জন্য রোগনিরাময় কেন্দ্র' ইত্যাদি সংস্থা একযোগে কাজ করছে সাহায্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে৷ এই সব ওষুধপত্র আসে ওষুধের দোকান ও চিকিত্সকদের কাছ থেকে৷ হামবুর্গে প্রায় ৭০টির মত ডাক্তারখানা নিয়মিত এই সাহায্য প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা দিচ্ছে৷ ওষুধের কোম্পানিগুলি নমুনা হিসাবে পাওয়া যেসব ওষুধ বিতরণ করে ও ছোটখাট ত্রুটির জন্য যে সব ওষুধ বাতিল করা হয়, সেগুলি সংগ্রহ করা হয় এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য৷ সংস্থাটির পৃষ্ঠপোষক ডাঃ টর্স্টেন ডিটরিশ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে এ কথা জানান৷ বিশেষ করে যেসব ওষুধের প্যাকেট একটু ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফেলে দেয়া হয়, সেগুলি কাজে লাগানো হয়৷ ডাঃ ডিটরিশ জানান, ‘‘যেমন থরে থরে সাজানো ওষুধের প্যাকেটগুলি কোনো কারণে পড়ে গেলে নীচেরটা একটু দুমড়ে মুচড়ে যেতে পারে, তখন সেই প্যাকেটটা বাতিল করে দিতে হয়৷ আর এই ধরনের প্যাকেটগুলিই সাহায্য প্রতিষ্ঠানে আসে৷'' তবে এক্ষেত্রে ওষুধগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে চলবে না৷ এ ছাড়া ওষুধ সংক্রান্ত নির্দেশনাপত্র নষ্ট হতে পারবে না৷ আর এসব ওষুধ শুধুমাত্র চিকিত্সক অথবা ওষুধ বিক্রেতা বা ওষুধের দোকানগুলিই রোগীদের কাছে পাঠাতে পারবে৷
জনে লেড্ডিন জানান, ‘‘আমাদের ল্যুনেবুর্গ থেকে হামবুর্গ পর্যন্ত ওষুধ সংগ্রহ করার অনুমোদন আছে৷ আমাদের ওষুধ আনার জন্য নির্দিষ্ট কুরিয়ার আছে৷ তারা বছরে দুই এক বার চিকিত্সকদের কাছে গিয়ে জানতে চান, দেয়ার মত কোন ওষুধ তাঁদের কাছে আছে কিনা''
বাছাই করতে হয় ভালভাবে
ওষুধগুলি রোগীদের কাছে পৌঁছাবার আগে প্রায় ৩০ জনের মত স্বেচ্ছাসেবী মন দিয়ে ছোটখাট কাজগুলি সারেন৷ এইসব ওষুধ রোগ অনুযায়ী ১৬ ভাগে ভাগ করা হয়৷ এই দায়িত্বের ভারটা নেন চিকিত্সক ও ওষুধ বিক্রেতারা৷ পিচবোর্ডের বাক্সে ভর্তি করে সাবধানে পাঠানো হয় ওষুধগুলি৷ ওপরে স্পষ্টভাবে লেখা থাকে, ভেতরে কী ধরনের ওষুধ আছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক ও হৃদরোগের ওষুধের প্রয়োজন হয়৷
ট্যাবলেট, ড্রপ বা মলম, এসব ওষুধ আগেই বাছাই করা হয় বলে স্থানীয় ডাক্তারদের পক্ষে রোগীদের ওষুধ দিতে সুবিধা হয়৷ কেননা এর ফলে যে রোগীর যে ওষুধ প্রয়োজন, তাকে সাথে সাথে সেই ওষুধ দিতে পারেন তারা৷ এটা সব জায়গার রোগীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ রোগী হামবুর্গের হতে পারেন কিংবা আফগানিস্তানেরও হতে পারেন৷ অথবা লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেন কিংবা তিব্বতের বাসিন্দাও হতে পারেন৷ জনে লেড্ডিন গর্বভরে জানান, একবার এক চিকিত্সককে তারা সাহায্য করতে পেরেছিলেন, যিনি তিব্বতে চার হাজার মিটার উঁচুতে একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন৷
‘মেডিকেশনস ফর পিপল ইন নিড' সংস্থাটির প্রচেষ্টায় একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র পেয়েছিলেন তিনি৷ এই ধরনের তত্পরতা অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রমী কাজ৷ সংস্থাটির মূল লক্ষ্য দুঃস্থ রোগীদের এমন সব ওষুধপত্র দিয়ে সাহায্য করা, যেগুলি ভাল অবস্থাতেই ফেলে দেয়া হয়৷ যেসব রোগীকে সংগ্রহ করা ওষুধ দিয়ে সাহায্য করা হয়, তাদের মধ্যে এমন অনেক রোগীও আছেন, যাদের মাথাব্যথা কমানোর মত ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই৷
প্রতিবেদন: গুডরুন হাইজে/আরবি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক