জি-টোয়েন্টিতেও সিরিয়া
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩সিরিয়ায় মার্কিন হানার সম্ভাবনা – স্রেফ মুখরক্ষার খাতিরেই – প্রায় আসন্ন এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠার মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলটা মার্কিন কংগ্রেসের কোর্টে ফেলে দিয়ে নিজের ও বাকি বিশ্বের জন্য কিছুটা সময় কিনলেন বটে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ওবামা পিছপা হচ্ছেন৷
ওবামা নিজেকে নয়, বাকি বিশ্বকেই সময় দিচ্ছেন, তাদের নীতি ও মনোভাব ঠিক করার জন্য৷ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে যে প্রতিষ্ঠান, তার নাম জাতিসংঘ৷ রাশিয়ায় জি-টোয়েন্টি বৈঠকের অবকাশে জাতিসংঘের সিরিয়া মধ্যস্থ লাখদার ব্রাহিমিকে মস্কো পাঠানো একটা সুঠাম কূটনৈতিক চাল – যদিও সিরিয়ার মতো কণ্টকিত সমস্যার ক্ষেত্রে সেই চালও ব্যর্থ হবার সম্ভাবনাই বেশি৷
সিরিয়ার উপর সামরিক হানার জন্য ওবামা যে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সমর্থন পাবেন, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই: ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ডেভিড ক্যামেরনকে যে ধাক্কাটা খেতে হয়েছে, ক্যাপিটল হিলে ওবামাকে সে ধাক্কা খেতে হবে না – প্রধানত এই কারণে যে, মার্কিনিরা তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টের কান কাটার আগে পঞ্চাশ বার ভেবে দেখবে৷
ওবামা সেই নিশ্চয়তা নিয়েই জি-টোয়েন্টিতে গেছেন৷ বিশ্বনিরাপত্তা পরিষদে ধ্যাঁতামির খেলায় তিনি প্রতিপক্ষদের চেনেন: যেমন রাশিয়া, তেমনই চীন৷ সিরিয়ায় মার্কিন কিংবা মার্কিন ও মিত্রবাহিনীর হামলা যদি সাময়িক ও শাস্তিমূলক হয়, তবে তা নিয়ে রাশিয়া বা চীন অনেক উচ্চবাচ্য করলেও, শেষমেষ তার বেশি আর কিছু করবে না৷ সিরিয়ায় হানার পরে কি ঘটবে, তা নিয়ে আপাতত কারো মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু ওবামা, তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল, সকলেই যখন বড় গলা করে সিরিয়ায় হানা দাবি করেছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের খুব বড় কোনো ভীতি কিংবা কারণ না থাকলে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷
ওবামা স্টকহোমেই বলেছেন, ‘‘আমি তো আর সহ্যের সীমা নির্দ্দিষ্ট করে দিইনি৷ বিশ্ব সহ্যের সীমা নির্দ্দিষ্ট করে দিয়েছে৷'' ‘রেড লাইন', মানে সহ্যের সীমা৷ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার মানে সেই ‘রক্তরেখা' অতিক্রম করা৷ ওদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনও সম্ভবত মার্কিনিরা মস্কোর সম্মতি ছাড়াই হানা দিতে উদ্যত দেখে হঠাৎই যেন আপোশের সুর ধরেছেন: অবস্থাবিশেষে নাকি শাস্তিমূলক অভিযানের কথাও ভাবা যেতে পারে, তবে তিনি আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের আরো বিশদ সাক্ষ্যপ্রমাণ চান, জাতিসংঘের সনদ চান, ইত্যাদি৷
এমনকি চীন পর্যন্ত সিরিয়ায় সামরিক হানার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছে! সব মিলিয়ে এর অর্থ দাঁড়ায়: যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে করে, যুক্তরাষ্ট্রকে মরিয়া করে তুলে বিশ্বের কোনো লাভ নেই৷ ওবামা প্রশাসন যদি এখন সত্যিই সিরিয়ায় হানা দেয়, তবে রাশিয়া বা চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অথবা জাতিসংঘের বিশেষ কিছুই করার থাকবে না৷ কাজেই বাকি বিশ্বকে এখন দেখতে হবে, তারা তাদের নিজেদের মুখ রক্ষা করে কি করে৷
সোমবার মার্কিন সেনেটে যে প্রস্তাবটি পেশ করা হবে, তা-তে ৯০ দিনের মধ্যে অভিযান চালাতে হবে এবং মার্কিন সৈন্যদের স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা চলবে না৷ কাজেই সামগ্রিক আপোশ হিসেবে ঐ ধরনের একটি সংক্ষিপ্ত, বস্তুত প্রতীকী হানার কথাই কল্পনা করা যেতে পারে, যার আগে ও পরে এই কূটনৈতিক পাখা ঝাপটানো চলছে ও চলবে৷
এসি/ডিজি (এএফপি)