জিশু ‘নির্ভয়া' নয়, সে দলিত
৪ মে ২০১৬মেয়েটির নাম জিশু৷ বড় অভাবের সংসার ছিল তাঁর৷ মায়ের সঙ্গে একটা এক কামরার বাড়িতে থাকতেন, এর্নাকুলাম কলেজে পড়াশোনা করতেন আইন নিয়ে৷ গত বৃহস্পতিবার সেই এক-কামরার বাড়ির মধ্যেই সন্তানের ক্ষতবিক্ষত দেহ আবিষ্কার করেন জিশুর মা৷
ঘটনার বীভৎসতা সামনে আসার পর, ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডের সঙ্গে এর একটা তুলনা টানা হচ্ছে৷ মর্মান্তিক এই দুই মৃত্যুর মধ্যে কোথায় যেন একটা ‘মিল' খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে৷ কিন্তু কই? নির্ভয়ার কষ্টে যেভাবে আমরা ভারতকে, ভারতবাসীকে দরদি হয়ে উঠতে দেখেছিলাম, জিশুর জন্য তাদের হাহাকার কেন আলোড়ন তুলছে না সমাজে? কেন ঘটনার পাঁচদিন পরেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ? কেন এখনও পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাত্র দু'জনকে আটক করেছে তারা?
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, ঘটনার সময় পরিষ্কার দিনের আলো ছিল৷ পুলিশের সন্দেহ, প্রতিবেশীরা নিশ্চয় আওয়াজও শুনেছেন৷ তাহলে? তাহলে পুলিশ সেই প্রতিবেশীদের জেরা করছে না কেন? জিশু দলিত বলে? নাকি জিশুকে নির্ভয়ার তুলনায় কম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল?
না, প্রতিবাদ যে একেবারে হয়নি, তা নয়৷ রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে সচিবালয়ের সামনে মঙ্গলবার সকাল থেকেই তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে৷
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও #JuticeForJishu (জাস্টিসফরজিশু) – এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অগুন্তি মানুষ দলিত এই যুবতীর হত্যার প্রতিকার দাবি করেছেন৷ তারপরও নির্ভয়ার জন্য ভারতব্যাপী যে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছিল, তার তিলমাত্র এবার দেখা যায়নি৷ অন্তত এখনও যায়নি৷ মোমবাতি হাতে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেনি আবালবৃদ্ধবনিতা৷
অবশ্য একটা উপায় আছে৷ আগামী দু'সপ্তাহের মধ্যেই কেরালায় নির্বাচন৷ তাই দলিত জিশুর নির্মম খুনকে মন্ত্রী-আমলা সকলেই হয়ত এবার ঠিক এইভাবে কাজে লাগাতে চাইবে৷ আর আসন্ন নির্বাচনের পটভূমিতে বেশ একটা আলাদা রাজনৈতিক মাত্রাও পেয়ে যাবে এই ধর্ষণকাণ্ড৷
কিন্তু এতে করে কী বিচার পাবে জিশু? নির্ভয়া চলে যাওয়ার এতগুলো বছর পরও যে দেশে পুলিশ-প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে একটার পর একটা ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, যৌন নির্যাতনের ঘটে, সে দেশে শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরে প্রয়োজনে সরকারের দিকে কি আঙুল তুলতে পারবে সুশীল সমাজ?
ভারতের সুশীল সমাজ কি পারবে জিশু হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷