জিএসপির জন্য কাজ চায় যুক্তরাষ্ট্র
৬ মার্চ ২০১৪যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপির এ শুনানি হবে আগামী মে মাসে৷ বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বলেন, ‘‘অ্যামেরিকার বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি ফিরে পাওয়ার পথে আরো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো ইপিজেডগুলোতে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা৷''
বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, শ্রম সচিব মিকাইল শিপারের সঙ্গে বৈঠকে মোজেনা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত উইলিয়াম হানা এবং নেদারল্যান্ডস, ক্যানাডা ও স্পেনের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন৷
২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে ১১২ জন এবং গত বছরের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১,১৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ এরপর গত বছর জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি স্থগিত করে দেশটি৷ এই সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু শর্তসহ একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে ওবামা সরকার৷ ওই কর্মপরিকল্পনার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়ে গেছে এবং বাকিগুলো 'নির্ধারিত' সময়ের আগেই বাস্তবায়িত হবে বলে গত মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ জানান৷
গত ১১ই ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে এক শুনানিতে দেশটির ব্যুরো অফ ইন্টারন্যাশনাল লেবার অ্যাফেয়ার্সে ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকা এরিক বিয়েল বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে৷ জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে যে কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী যথেষ্ট অগ্রগতি বাংলাদেশ দেখাতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি পুনর্বহাল হবে কিনা সে বিষয়ে শুনানি হবে আগামী মে মাসে৷
এনিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পোশাক কারাখানার কাজের পরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রমিকদের মজুরি এবং ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ দেয়া এই চারটি হলো মূল শর্ত৷ স্বল্প মেয়াদে কিছু শর্ত পূরণ করা গেলেও কাজের পরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব হবেনা, কারণ, পোশাক কারখানার ভবনগুলো মানসম্মত করতে অনেক সময় লাগবে৷ তাছাড়া ট্রেড ইউনিয়নও একটি জটিল বিষয়৷ পোশাক কারখানা পরিদর্শন এবং নিরাপত্তার মান উন্নয়নেও আরো সময় লাগবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘এসব পূরণ করে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে আরো সময় লাগবে৷ সেটা আগামী মে মাসে সম্ভব না-ও হতে পারে৷'যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধায় বাংলাদেশ যে পণ্য বিক্রি করত, তা দেশের ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ১ শতাংশের মতো৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশকে বড় ধরনের অসুবিধায় পড়তে না হলেও এর প্রভাব ইউরোপের ক্ষেত্রে পড়লে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন ড. হেলাল উদ্দিন৷