‘সাইবার মবিং’
২২ মে ২০১৩সহজ বাংলায় একে এককালে বলা হতো একঘরে করা, অথবা স্রেফ গুণ্ডামো৷ কিন্তু স্কুলের গুণ্ডা যদি কমপিউটারের কল্যাণে সোজা বাড়িতে এসে ঢোকে? স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আর বলা সম্ভব নয়: আমি এখন বাড়িতে, এখানে আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা ধরনের অপমানজনক মন্তব্য এখন শোবার ঘরে, পড়ার ঘরেও তাড়া করে আসে৷
বছরের পর বছর ধরে সেই চাপ সহ্য না করতে পেরেই ক্যানাডার কিশোরী অ্যাম্যান্ডা টড একাধিকবার স্কুল বদলায়, শেষমেষ ২০১২ সালে আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যার আগে অ্যাম্যান্ডা নেটে একটি ভিডিও রেখে যায়৷ ভিডিও-তে অ্যাম্যান্ডা ৭৪ পাতার একটি পাণ্ডুলিপির একটি পর একটি পাতা ক্যামেরায় তুলে ধরেছে: তার চরম হতাশার কাহিনি ও ইতিহাস৷
এ বছরের এপ্রিল মাসে ক্যানাডার আরো এক কিশোরী আত্মহত্যা করে৷ ইন্টারনেটে তার একটি সম্ভাব্য ধর্ষণের ছবি ও সেই সঙ্গে অপমানজনক বিবরণ তার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি৷ সাইবার মবিং-এর ফল যে সর্বক্ষেত্রেই এ রকম চূড়ান্ত হবে, এমন নয়৷ তবুও সামাজিক মনস্তত্ববিদ কাটারিনা নেট্সার ‘‘সাইবার মবিং-এর বিরুদ্ধে জোট'' নাম দিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছেন, যে সমীক্ষায় জার্মানির স্কুলগুলিতে সাইবার মবিং-এর ব্যাপ্তি দেখানো হয়েছে৷
নেট্সারের সমীক্ষা অনুযায়ী, জার্মান ছাত্রছাত্রীদের ১৭ শতাংশ অন্তত একবার ইন্টারনেটে গালিগালাজ এবং হাসিঠাট্টার লক্ষ্য হয়েছে৷ সাধারণভাবে জার্মানির প্রতি তৃতীয় স্কুলে সপ্তাহে অন্তত একটি সাইবার মবিং-এর ঘটনা ধরা পড়ে৷ বিশেষ করে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীরাই এর শিকার হয়, তবে তার অনের কম বয়সের, এমনকি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যেও নাকি সাইবার মবিং-এর ঘটনা ঘটে থাকে৷
পুলিশ বিশেষ আমল দেয় না
স্কুলে সাইবার মবিং রোখার একটি, হয়ত একমাত্র পন্থা হল ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা, ব্রিটেনে যা ইতিমধ্যেই করা হচ্ছে৷ পদ্ধতিটা হল, মিডিয়া নিয়েও প্রাইমারি স্কুল থেকেই পড়াশুনো করানো, ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা৷ এছাড়া যারা সাইবার মবিং-এর শিকার হয়েছে, তাদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যুরোর ব্যবস্থা করা দরকার, বলেন কাটারিনা নেট্সার, যেখানে তাদের শুনতে হবে না, ‘‘ও সব ইন্টারনেটের গালগল্পকে এত সিরিয়াসলি নিও না৷'' পুলিশ যা সাধারণত বলে থাকে৷
সেবাদাতাদের দায়িত্ব
ফেসবুকের মতো প্রোভাইডারদের যদি অপমানজনক পোস্টিং নেট থেকে অপসারণ করতে বাধ্য করতে হয়, তাহলে সবার আগে লাগে ধৈর্য৷ সেবাদাতাদের পক্ষেও প্রতিটি রিপোর্টের সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হওয়া সম্ভব নয়, কেননা তার একটা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আছে৷ তবে হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রথম রিপোর্টে আসার পরেই বিষয়টি ফেসবুকের জ্ঞাত৷ কাজেই তারা সে হিসেবে আইনত দায়ি৷ নীতিগতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশেই ব্যবহারকারীদের এই আইনগত অধিকার আছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই সাইবার মবিং-এর বিরুদ্ধে আইন করা হয়েছে৷ তবে জার্মানিতে অবমাননা, অপপ্রচার কিংবা ‘স্টকিং'-এর বিরুদ্ধে যে আইন আছে, সাইবার মবিং-এর মোকাবিলার জন্য তা পর্যাপ্ত, বলে অনেক আইনজ্ঞ মনে করেন৷ অপরদিকে শুধুমাত্র মবিং-এর জন্যই ইতিমধ্যে অনেক সাইট সৃষ্টি করা হয়েছে৷ সেগুলোর বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে৷