জার্মান শিষ্টাচার জেনে নিন
বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতোই জার্মানিরও কিছু নিজস্ব সামাজিক শিষ্টাচার রয়েছে৷ জার্মানিতে বসবাসরত কিংবা আসতে আগ্রহীরা সেগুলো পাবেন এখানে৷
করমর্দন
জার্মানরা প্রায়ই করমর্দন করেন৷ যে-কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক থেকে শুরু করে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের পর, কিংবা কারো সাথে প্রথমবার দেখা হলে বা কাউকে অভিনন্দন জানাতে হলেও করমর্দন করেন তাঁরা৷ এমনকি কাউকে ‘শুভ জন্মদিন’ জানাতে বা ‘হ্যালো’ বলার সময়ও হ্যান্ডশেক বা করমর্দনকে বেছে নেন তাঁরা৷ অবস্থা এমন যে, শিশুরাও নানা উপলক্ষ্যে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করে৷
চুমু, নাকি আলিঙ্গন?
অনানুষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত পরিসরে একে অপরের পরিচিতরা হ্যান্ডশেকের পাশাপাশি একে অপরের দুই গালে বা এক গালে চুমু দিয়ে অভিবাদন জানান৷ তবে বিষয়টি ব্যক্তি বিশেষে অন্যরকমও হতে পারে৷ আর হ্যান্ডশেকের পাশাপাশি চুমুর বিষয়টি শুধু চুমুর চেয়ে একটু বেশি ফর্মাল৷ আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা কিংবা পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে আলিঙ্গন করতে পারেন৷ এটা অল্প পরিচিত বা অপরিচিতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷
তুমি, নাকি আপনি?
বাংলা ভাষার মতো জার্মান ভাষাতেও আপনি এবং তুমি/তুই বলার জন্য আলাদা আলাদা শব্দ রয়েছে৷ প্রথমবার কারো সঙ্গে দেখা হলে তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে আপনি বলাটা জার্মান আদব-কায়দার মধ্যে পড়ে৷ আর ঘরোয়া পরিবেশে নিজের সমবয়সি বা কম বয়সিদের তুমি/তুই বলা যেতে পারে৷ আপনি সবসময় বয়োজ্যেষ্ঠ এবং পরিবারের বাইরের সদস্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যদি না সেই ব্যক্তি তাঁকে তুমি/তুই বলার অনুমতি দেন৷
টেলিফোন শিষ্টাচার
আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও ফোন করলে অবশ্যই ‘আপনি’ সম্বোধন করে কথা বলবেন৷ তবে শুরুতে নিজের পরিচয় দেবেন৷ আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, কারো বাড়িতে বা সরাসরি এক্সটেনশনে ফোন করলে সেই ব্যক্তি ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলার বদলে শুধু নিজের নামের শেষাংশ বলতে পারেন৷ জার্মানরা এভাবে নিজের নাম বলে বোঝায় যে, আপনি সম্ভবত সঠিক নম্বরেই ফোন করেছেন৷
‘‘মাফ করবেন’’
আপনার যদি অপরিচিত কারো সঙ্গে ধাক্কা লাগে বা চেনা পরিচিত নন এমন কারো কাছ থেকে যদি কোনো সহায়তা নিতে চান তাহলে শুরুতে ‘‘এন্টশ্যুলডিগুং বিটে’’ বা ‘‘মাফ করবেন’’ বলে কথা শুরু করতে পারেন৷ ছোটখাট কোনো ভুল করলে জার্মানরা ইংরেজিতে ‘‘স্যরি’’ বলেন৷ এটা ঠিক আনুষ্ঠানিক ভাষা না হলেও অনাড়ম্বর পরিবেশে বেশ চলে৷
দরজায় টোকা দিন
কারো ঘরে প্রবেশের আগে দরজায় টোকা দেয়ার বিষয়টি অনেক দেশে আছে নিশ্চিয়ই৷ তবে জার্মানরা এটা খুব মেনে চলেন৷ আর কারো সদর দরজায় গেলে ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলে দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন৷
যা উপহার দিতে পারেন
জার্মানরা সাধারণত একটু চিন্তা-ভাবনা করে কারো জন্য উপহার কেনেন৷ আপনাকে যদি কারো বাড়িতে রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাহলে সঙ্গে এক বোতল ওয়াইন, চকলেট কিংবা ফুল নিয়ে যেতে পারেন৷ কারো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া নিয়ে যেতে পারেন৷ এমনকি তিনি যদি আপনার কম পরিচিত হন, তাহলেও সমস্যা নেই৷ ফুলের তোড়া প্রায় সবার পছন্দ৷
সময়নিষ্ঠ হোন
যে-কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক বা সাক্ষাতে সময়মতো হাজির হোন৷ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় আপনি একটু দেরি করে যেতেই পারেন, কিন্তু সেই দেরি যেন দশ বা পনের মিনিটের বেশি না হয়৷ জার্মানিতে সময়ানুবর্তিতার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়৷ আর একান্তই যদি কোনো কারণে দেরি হয়, তাহলে যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে দিন৷
জুতা বাইরে রাখুন
আনুষ্ঠানিক পরিসরে অবশ্যই জুতা পরে থাকবেন৷ তবে নিজের বা কারো বাড়িতে প্রবেশের সময় জার্মানরা জুতা খুলে প্রবেশ করেন৷
ঘরে পরার আলাদা জুতা
বাইরে পরার জুতা খুলে ঘরে প্রবেশ করলেও ঘরের ভেতরে পরার জন্য আলাদা জুতা ব্যবহার করেন জার্মানরা৷ এগুলো ‘হাউজশ্যু’ নামে পরিচিত৷
টেবিলের আদব-কায়দা
টেবিলে খাওয়ার সময় দুই হাতই টেবিলের উপর (কনুইসহ নয়) রাখাটা জার্মানিতে ভদ্রতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ খাওয়ার সময় সাধারণত বাম হাতে কাঁটা চামচ এবং ডান হাতে ছুরি রাখেন জার্মানরা৷ আর ওয়াইনের গ্লাস ধরতে হয় নীচের লম্বা অংশে, উপরের গোলাকার অংশে নয়৷
খাওয়া শেষের সঙ্কেত
খাওয়ার মাঝখানে বিরতি নেয়ার সময় কাঁটাচামচ প্লেটের বামদিকে উল্টো করে রাখুন, আর ছুরি রাখুন প্লেটের ডানদিকে৷ আর খাওয়া শেষ হলে দু’টোই এই ছবির মতো একদিকে রাখতে হবে৷ বলা বাহুল্য, এই নিয়ম অনেকেই জানেন না৷ ফলে সবাই এটা মেনে চলেন, এমনটা ভাবার কারণ নেই৷
‘গ্যুটেন আপেটিট’
জার্মানরা খাবার শুরুর আগে বলেন ‘‘গ্যুটেন আপেটিট’’৷ এই শব্দ দু’টির সমার্থক কোনো বাংলা শব্দ জানা নেই৷ আপনি জানলে লিখুন আমাদের৷