উচ্চপদে বাঙালি
২৭ জুলাই ২০১২রবিনের বাবা সব্যসাচী দত্ত কলকাতা থেকে পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি বিয়ে করেন এক জার্মান নাগরিককে৷ ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তাঁদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন রবিন৷ বাংলা ভাষাটা বলতে না পারলেও একটু একটু বোঝেন তিনি৷
ফুটবল পাগল জার্মানির হাওয়ায় বেড়ে ওঠা রবিনও একদিন ফুটবল খেলা শুরু করেন৷ যদিও পেশাদার ফুটবল খেলা হয়ে ওঠেনি কোনোদিন৷ তবে খেলার চেয়ে কোচিং'এর দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি৷ তাই ২৭-২৮ বছরের দিকেই কোচিং লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন ক্লাবে কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি৷
রবিন দত্তকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন জার্মানিতে থাকা আরেক বাঙালি ফুটবল বিশেষজ্ঞ অরুণাভ চৌধুরী৷ তাই রবিনের এই নিয়োগে তিনি বেশ খুশি৷ রবিন সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘কোচ হিসেবে রবিন ২০০৭ সালে এফসি ফ্রাইবুর্গের দায়িত্ব নেন৷ তখন দলটি বুন্ডেসলিগার দ্বিতীয় বিভাগে খেলতো৷ পরের বছর ফ্রাইবুর্গকে তিনি সফলভাবে খেলিয়ে প্রথম পর্বে তুলে দেন৷ এরপর ২০১১ সালে রবিনকে বুন্ডেসলিগার অন্যতম সেরা দল বায়ার লেভারকুজেনের দায়িত্ব দেয়া হয়৷ তবে সেখানে তিনি থাকতে পেরেছিলেন মাত্র নয়মাস৷ চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলায় বার্সেলোনার কাছে ৭-১ গোলের হার আর বুন্ডেসলিগায় লেভারকুজেনের খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে রবিনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷''
জার্মান ফুটবল ফেডারেশন ডিএফবি কেন রবিন দত্তকে এত বড় দায়িত্ব দিল? এ সম্পর্কে অরুণাভ চৌধুরী বললেন, ‘‘ডিএফবি এমন একজনকে খুঁজছিল যিনি শুধু পেশাদার ফুটবলই বোঝেন তা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তিনি অ্যামেচার, মানে বাচ্চা ফুটবলারদের কীভাবে পেশাদারে পরিণত করা যায় সেটাও জানেন৷''
স্পোর্টস ডাইরেক্টরের মূল কাজ দুটো৷ প্রথমত তরুণদের উন্নতি ঘটানো, আর দ্বিতীয়ত কোচদের প্রশিক্ষণ দেয়া৷ অরুণাভ বললেন, ‘‘১৫-১৬ বছরের কিশোরদের কীভাবে জার্মানির বর্তমান কৌশল ৪-২-৩-১ পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ানো যায়, সেটা নিশ্চিত করা একজন স্পোর্টস ডাইরেক্টরের কাজ৷ এছাড়া যেসব কোচ এসব তরুণদের নিয়ে কাজ করবে তাদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও তার অন্যতম কাজ৷''
এসব কাজ খুব একটা সহজ নয় বলেই মনে করেন অরুণাভ৷ বিশেষ করে এর আগে যিনি স্পোর্টস ডাইরেক্টর ছিলেন তিনি বেশ সফলতা দেখিয়েছেন৷ তাই রবিনকে সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ তবে রবিন সেটা সফলভাবেই করতে পারবেন বলে বিশ্বাস অরুণাভ চৌধুরীর৷
তিনি মনে করেন, রবিন জার্মান ফুটবলে এত বড় দায়িত্ব পাওয়ায় সেটা জার্মানির সঙ্গে ভারতের ফুটবল সম্পর্ক উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘গত বছর জার্মানির সঙ্গে ভারতের একটা ফুটবল সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি নিয়ে কথা হয়েছিল৷ পরে সেটা হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত ডাচ ফেডারেশনের সঙ্গে সেই চুক্তিটা করে ভারত৷ এখন জার্মান ফেডারেশনে রবিন থাকায় দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে৷''
ভারতের ফুটবল নিয়ে রবিনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে অরুণাভর৷ সেসময় ভারতে গিয়ে সেখানকার ফুটবল উন্নয়নে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন রবিন৷ অরুণাভ বলছেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলে বর্তমানে যে পরিবর্তন আসছে সে সম্পর্কে খবরাখবর রাখেন রবিন৷ ভবিষ্যতে ভারতের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছাও আছে তাঁর৷''
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ