জার্মানি আসতে চান আসিয়া বিবি
১২ নভেম্বর ২০১৮ব্লাসফেমি আইনে প্রায় এক দশক জেলে থাকার পর আসিয়া বিবি মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পান৷ তাঁর হয়ে মামলাটি লড়ছিলেন আইনজীবী সাইফ-উল-মুলুক৷ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট আসিয়ার মৃত্যুদণ্ডাদেশ খারিজ করে৷ কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেলেও এখনও পাকিস্তানেই রয়ে গেছেন আসিয়া বিবি৷
জার্মান পত্রিকা ‘বিল্ড আম সনটাগ’-কে আসিয়ার আইনজীবী বলেন, আসিয়া সপরিবারে জার্মানি চলে যেতে পারলেই খুশি হবেন৷ ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বের নজর পড়ায়, এই মামলায় আসিয়ার পক্ষে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷ ২০১৫ সালে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের সাথেও এ বিষয়ে দেখা করে আলোচনা করেন আসিয়া বিবির কন্যা৷ সব মিলিয়ে, এই মুহূর্তে বিশ্ব খবরে অন্যতম আলোচিত নাম ‘আসিয়া বিবি'৷
২০০৯ সালের জুন মাসে লাহোরের কাছে শেখুপুরা এলাকায় ফল পাড়তে গিয়ে অন্য নারীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চার সন্তানের জননী আসিয়া বিবি মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটুক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে৷ ওই অভিযোগে ব্লাসফেমি আইনের আওতায় ২০১০ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ এরপর দীর্ঘ আট বছর কারাভোগ করতে হয় তাঁকে৷ এই রায়ের প্রতিবাদে কট্টর ইসলামপন্থিরা লাহোর ও ইসলামাবাদে মূল সড়কগুলো অবরোধ করে৷ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় তেহরিক-ই-লাবায়েক (টিএলপি)-র মতো চরমপন্থি সংগঠন৷
দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ মুসলমান হওয়ায় পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে আইন ব্যবস্থা৷ সে কারণেই দেশে ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে জনমত রয়েছে বলে জানা যায়৷ বিভিন্ন সমাজকর্মীদের মতে, এই আইন ব্যবহার করে ধর্মের প্রতি আঘাত কম ও ব্যক্তিগত কলহ নিয়ে বেশি জলঘোলা করা হয়৷
আসিয়ার ভবিষ্যৎ?
একাধিক ইউরোপীয় দেশ আসিয়ার জন্য তাদের দরজা খুলে দিলেও তাঁর পাকিস্তান ছেড়ে যেতে পারা বিষয়ে এখনও রয়ে গেছে বেশ কিছু অস্পষ্টতা৷ অবশ্য তাঁর আইনজীবী ইতিমধ্যেই নেদারল্যান্ডসে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে৷
ডয়চে ভেলেকে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান যে আইনি কাজকর্ম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আসিয়াকে পাকিস্তানেই থাকতে হবে৷
আসিয়ার মৃত্যুদণ্ড খারিজ হবার পর এই রায়ের বিরোধিতা করে আদালতে পেশ করা হয় আরেকটি আপিল৷ আইনজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এই আপিল আদৌ টিকবে না এবং সরকারও আশ্বাস দিয়েছে এই রায়ের পাশে থাকার৷
আসিয়ার আইনজীবী সরকারের গতিবিধি সম্পর্কে পুরোপুরি আস্থাশীল না হলেও প্রতি নাগরিকের যে কোনো রায়ের বিরোধিতা করবার সাংবিধানিক অধিকার পক্ষে৷ কিন্তু ব্লাসফেমি আইনের বর্তমান ব্যবহার নিয়ে তিনি রীতিমত উদ্বিগ্ন৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানে প্রায় সব ব্লাসফেমি মামলাই মনগড়া হয় ও এই আইনের অপব্যবহার অহরহ ঘটে৷ কিন্তু তবুও কারো বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠলে তার প্রাপ্য একটি নিরপেক্ষ ও ন্যায্য বিচার৷’’
শামিল শামস/এসএস