পানিতে ওষুধের মিশ্রণ
৭ জানুয়ারি ২০১৩জার্মানির পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথা ও উচ্চরক্তচাপ কমানোর ওষুধ, এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধের অবশিষ্টাংশও পাওয়া যায়৷ পানীয় জলও বাদ যায় না এই দূষণ থেকে৷ অবশ্য ফেডারেল পরিবেশ দপ্তরের মতে, দূষণের পরিমাণ এত কম যে, তা মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়৷ তবে নদী ও জলাশয়ে মিশে যাওয়া এই সব ওষুধের রেশ প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের জন্য বিপজ্জনক৷
নদীতে হরমোন মাছের জন্য ক্ষতিকর
জার্মানিতে এই সমস্যার কথাটা ১৯৯০ সালে প্রথম জানা যায়৷ সেই সময় এক গবেষক পানির নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ করেই এক ওষুধের রেশ আবিষ্কার করেন, যা মানুষের শরীরের অতিরিক্ত কলেস্টরেল-এর মাত্রা হ্রাস করে৷
ফেডারেল পরিবেশ দপ্তর এই সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে৷ ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় এটি৷ পরিবেশ দপ্তরের মুখপাত্র সাবিনে টিয়ারবাখ জানান, ‘‘১৯২টি উপাদান খোঁজা হয়েছিল, যার মধ্যে ১৫৬টি পাওয়া গিয়েছে৷''
তুলনামূলকভাবে কয়েকটি ওষুধের অবশিষ্টাংশ বেশি দেখা গিয়েছে৷ যেমন, এক্সরের রেডিও কনট্রাস্ট উপাদান, ব্যথার ওষুধ ইত্যাদির অবশিষ্টাংশ৷ হরমোন জাতীয় ওষুধ খুব কমই পাওয়া গেছে৷
মাছেরজন্য বিপজ্জনক
বিশেষ করে মাছের মধ্যে হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ টিয়ারবাখ বলেন, ‘‘দেখা গেছে, জলাশয়ে হরমোনের ফলে পুরুষের তুলনায় নারী মাছের সংখ্যাই বৃদ্ধি পায়৷ অর্থাৎ মাছের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় লিঙ্গ ভারসাম্য৷ বিলুপ্ত হয়ে যায় মাছের জনসংখ্যা৷''
পশু পাখির রোগ বালাই দূরীকরণে প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়৷ আর এই সব ওষুধ বিভিন্ন রকমের সারের মাধ্যমে উদ্ভিদের সংস্পর্শে চলে আসে৷ যার ফলে তাদের বর্ধনের সমস্যা দেখা দেয়৷ অ্যান্টিবায়োটিক আবার পানীয় জলেও চলে আসতে পারে৷
জার্মানির এক বৃহৎ বেসরকারি সংস্থা, ‘পরিবেশও প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন' বা ‘বুন্ড' মনে করে যে, কোনো চিন্তাভাবনা না করেই জার্মানিতে ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়৷ বুন্ডের বাভারিয়া অঙ্গরাজ্যের উপপ্রধান সেবাস্টিয়ান শ্যোনাউয়ার এ জন্য ওষুধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিকে দায়ী করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ওষুধের অনুমোদন দেয়ার আগে জলাশয়ের সহ্য সীমাটা বিবেচনা করা প্রয়োজন৷ কোনো রোগ ভালো করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের ওষুধ থাকলে, যেটি জলাশয়ের পক্ষে কম ক্ষতিকর, সেটিকেই কেবল অনুমোদন দেওয়া উচিত৷ অথবা ক্ষতিকারক ওষুধটিকে বাজার থেকে তুলে নেওয়া উচিত৷''
ওষুধ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা
শ্যোনাউয়ার একটি পদ্ধতি পুনর্বহালের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যা কয়েক বছর আগে বাতিল হয়ে গিয়েছে৷ এতে রোগীদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধগুলি দোকানে ফেরত দিতে হতো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ওষুধ বেসিনে বা টয়লেটে ফেলে দিয়ে ফ্লাশ করা হয়৷ এমনটি করা হয় রোগীদের অতিরিক্ত ওষুধ ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না বলেই৷ জার্মানিতে রোগীদের জন্য প্রায়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ প্রেসক্রিপশন করা হয়, যা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়৷''
ক্লাউডিয়া টিয়ারবাখ অবশ্য এক্ষেত্রে জলশোধন পদ্ধতির উন্নয়নের ওপর জোর দেন৷ তাঁর মতে, ‘‘সুয়েজ প্ল্যান্টে দূষিত পানি পরিশোধন প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ বৃদ্ধি করলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে৷ তবে এটাও জানা দরকার, ওষুধের উপাদানগুলি অত্যন্ত গতিশীল, যা ছেঁকে আটকানো যায় না৷ কিন্তু পরিশোধন প্রক্রিয়ায় আরো কিছু ধাপ আছে, যার মাধ্যমে ওষুধ ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানকে ফিল্টার করে ধরে রাখা যায়৷ এই পদ্ধতি জনঅধ্যুষিত শহরগুলিতে ব্যবহার করা যেতে পারে৷''
ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাব
ইউরোপীয় কমিশনও কিছুদিন ধরে পানিতে রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে৷ এ জন্য ৩৩টি উপাদানের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যে গুলির ওপর নজর রাখা হবে৷ কিছু দিনের মধ্যে আরো ১৫টি পদার্থকে তালিকায় ঢোকানো হবে, যাতে রয়েছে প্রথম বারের মতো ওষুধও৷
টিয়ারবাখ ও শ্যোনাউয়ার দুজনেই ইউরোপীয় কমিশনের এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন কতটা হবে, সে ব্যাপারে সন্দিহান৷ শ্যোনাউয়ার এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও মনে করেন, বিষয়টি দূষিত পানি পরিশোধন ব্যবস্থার মধ্যেই আটকে থাকবে৷
থিয়ারবাখ বলেন, ‘‘এখানে কোনো ওষুধকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আসছে না৷ মূল কথা হল, পানিতে একটা সমস্যা দেখা গিয়েছে, যার প্রতিকার করা প্রয়োজন৷ কীভাবে তা করা যায়, এটাই এখন প্রশ্ন৷''