1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে লঙ্গরখানা

কারিন ইয়্যাগার/আরবি১৪ ডিসেম্বর ২০১২

জার্মানিতে কোনো মানুষকে ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না৷ কিন্তু খাবার দাবারে অর্থ বাঁচাতে হয়, এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বিশেষ করে প্রবীণদের মধ্যে অনেকেরই নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো অবস্থা৷

https://p.dw.com/p/172Ck
ছবি: picture-alliance/dpa

ক্যাথলিক গির্জার ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসীদের পক্ষ থেকে ড্যুসেলডর্ফ শহরে খোলা হয়েছে এক লঙ্গরখানা৷ সেখানে দরিদ্র মানুষরা নিখরচায় দৈনিক একবেলা গরম খাবার পান৷

অনেকেই আপন মনে খেয়ে চলে যান৷ পরিচয় দিতে বা কথা বলতে দ্বিধা তাঁদের৷ খাবার ঘরে দেখা গেল তিনজন রুশভাষী ব্যক্তিকে৷ তাঁদের একজন কিছুটা আলাপী৷ ইহুদি ধর্মের অনুসারী এই ব্যক্তি সাত বছর আগে শরণার্থী হিসাবে পরিবারসহ ইউক্রেন থেকে এসেছেন৷ ৬২ বছর বয়সে কুরিয়ারের কাজটা হারান তিনি৷ স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান৷ এখন তাঁকে ৩৫০ ইউরো দিয়ে মাস চালাতে হয়৷ গির্জা পরিচালিত এই লঙ্গরখানায় বিনা পয়সায় গরম খাবার পেয়ে খুব খুশি তিনি৷

দ্বিধা ঝেড়ে ফেলা

রাইনহার্ডও নিয়মিত আসেন এখানে৷ উল্কি আঁকা মাতাল মানুষদের ভিড়ে খেতে আসতে প্রথম প্রথম একটু দ্বিধা থাকলেও এখন সেটা তিনি ঝেড়ে ফেলেছেন৷ খাওয়ার জায়গাটিকেও খুব আকর্ষণীয় বলা যায় না৷ বেঞ্চের সামনে কয়েকটি টেবিল পাতা৷ ওপরে প্লাস্টিকের ছাদ৷ কারো যেন এখানে গড়িমসি করার ইচ্ছা না জাগে, তাই এই সাদাসিধা ব্যবস্থা৷

Symbolbild Altersarmut Rentner in einer Suppenküche
লঙ্গরখানায় দরিদ্র মানুষরা নিখরচায় দৈনিক একবেলা গরম খাবার পানছবি: picture-alliance/dpa

রাইনহার্ড আসল নামটা বলতে চান না৷ পরিচিত কেউ যেন জানতে না পারে, কোথায় তিনি দুপুরের খাবার খান, তাই এই নাম গোপন করা৷ প্রবীণ এই ব্যক্তি বাকপটু, পোশাক পরিচ্ছদও ভালো, কিন্তু স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে৷ বয়স ৮০ বছর৷ এই বয়সটাই তাঁকে বেশি কাবু করেছে৷ রাইনহার্ড জানান ,‘‘বৃদ্ধ হওয়াটা আমার মানতে ইচ্ছা করে না৷ আমরা সবাই বয়স্ক হতে চাই, কিন্তু বৃদ্ধ হতে চাই না৷''

কথা বলতে বলতে এক প্লেট খাবার পেলেন তিনি৷ আজ ছিল মুরগির মাংসের ভাজা, সঙ্গে ভাত ও সালাদ৷ ২৫০ ইউরো দিয়ে সারা মাস চালাতে হয় তাঁকে৷ বাড়িভাড়া, ইলেকট্রিক ও হিটিং-এর খরচ বহন করে রাষ্ট্র৷ দামি ওষুধ কিনতেই অনেকটা হিমশিম খেতে হয় তাঁকে৷ দুইবার ক্যনসারের অপারেশন ও একবার স্ট্রোক হওয়ার পর বর্ষীয়ান এই ব্যক্তিকে সবসময় ওষুধ নিতে হয় এবং দামের বেশ কিছুটা অংশ নিজেকেই বহন করতে হয়৷ শ্রবণযন্ত্র কিনতেও খানিকটা অর্থ বের হয়ে যায়৷ বৃদ্ধকালে যে এইরকম অবস্থা হবে, তা তিনি আগে কল্পনাও করতে পারেননি৷

পতিত ভুবন

অবসর নেওয়ার আগে এক আন্তর্জাতিক মাল পরিবহণ কোম্পানিতে ভালো চাকরি করতেন রাইনহার্ড৷ বসবাস করেছেন বিদেশে৷ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর৷ এই সব গল্প করার সময় ক্ষণিকের জন্য হলেও চোখে ঝিলিক দিয়ে ওঠে প্রবীণ এই মানুষটির৷ পরিবার গড়ে তোলা হয়নি তাঁর৷ যদি সম্ভব হতো, আর একবার ভ্রমণের ইচ্ছা রয়েছে৷ হামবুর্গ বা অন্য কোথাও৷ এরপরই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন রাইনহার্ড৷ বাড়িতে প্রচুর মালপত্র জমে গিয়েছে তাঁর৷ কিন্তু অনেক কিছু ফেলে দিতে মন চায় না৷ এর কারণটাও জানান তিনি, ‘‘আমি যুদ্ধের সময়ের মানুষ৷ সে সময় আমাদের প্রায় কিছুই ছিল না৷ তাই তো এখন যা আছে তা ফেলতে মন চায় না৷ কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেমন করে যেন হারিয়ে গেছে৷'' বিদেশ থেকে জার্মানিতে পেনসন খাতে যে অর্থ জমা দিয়েছিলেন, সে সব নথিপত্রের হদিশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেলেনি৷ অগত্যা হাল ছেড়ে দিয়ে অল্প অর্থেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাঁকে৷ তবে কোনো বন্ধু যদি কনসার্টে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান, খুশি হন তিনি৷ বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে কোর্স করায় আগ্রহ রয়েছে রাইনহার্ডের, পড়তে ভালবাসেন বই৷

Düsseldorf Bruder-Firminus-Klause Franziskaner-Kloster
অবসরপ্রাপ্ত অনেক বৃদ্ধই গোপনে আত্মীয় স্বজনদের এড়িয়ে এসব লঙ্গরখানায় খাবার খেতে যানছবি: DW/Karin Jäger

বাতাসে পূতিগন্ধ

ড্যুসেলডর্ফের এই লঙ্গরখানায় দরিদ্র, গৃহহীন মাদকাসক্তদের ভিড় জমে৷ বাতাসে ছড়িয়ে যায় পূতিগন্ধ৷ ফাদার আন্তনিয়ুসকেও প্রথম প্রথম এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রথম দিকে এই গন্ধ ভীষণ খারাপ লাগতো৷ এখন অবশ্য কাজটা অনুরাগে পরিণত হয়েছে৷ ১৬ বছর আগে রুটি মাখন বিলি করে যাত্রা শুরু৷ তারপর দৈনিক ৪০ প্লেট খাবার দেওয়া হতে থাকে দুঃস্থদের৷ এখন তো গড়ে ১৮০ জনের মত মানুষ খাবার পান এখানে৷''

মাসের শেষে এই সংখ্যাটা ২২০ তেও দাঁড়ায়৷ প্রয়োজন হলে টয়লেট ও শাওয়ারও ব্যবহার করতে পারেন আগতরা৷ সম্পূর্ণভাবে দানের টাকা দিয়ে চলে সংস্থাটি৷ এছাড়া মেট্রো, হেঙ্কেল, টে-কানের মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পণ্য দিয়ে সাহায্য করে থাকে৷ ইদানিং এইসব সাহায্য অবশ্য কমে আসছে৷ এখানে ধর্মপ্রচার করা হয় না৷ শুধু খাবার ঘরের দেওয়ালে ঝুলতে দেখা যায় একটি ক্রুশ৷

ফাদার আন্টোনিয়ুস অতিথিদের আপ্যায়ন করতে পেরে খুশি হন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি খুশি হই, যখন অতিথিরা সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান৷ কেউ কেউ ধন্যবাদ জানান কিংবা বলেন, খাবারটা খুব সুস্বাদু ছিল৷ এর চেয়ে বেশি কিছু আমি চাই না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য