সৌরবিদ্যুৎ
২৩ মার্চ ২০১২চলতি দশক শেষ হবার আগেই দেশের মোট বিদ্যুৎ খরচের ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে মেটানো বিশেষ করে জার্মানির পক্ষে দুরূহ হবে৷ কেননা জার্মানি আগামী ১০ বছরে তার আণবিক চুল্লিগুলিও বন্ধ করবে৷ কাজেই বিপুল সরকারি অর্থব্যয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে৷
অপরদিকে ধীরে ধীরে এটাও উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে, জার্মানির সৌরশক্তিতে টাকা ঢেলে বিশেষ কোনো লাভ নেই৷ স্বয়ং চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সমালোচনা করে বলেছেন: জার্মানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থের ৫০ শতাংশ যায় সৌরশক্তি খাতে; অথচ সৌরশক্তি থেকে মাত্র দুই শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়৷ ম্যার্কেলের প্রস্তাব: নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের ব্যাপারটি ইইউ পর্যায়ে সমন্বয় করা হোক৷ এছাড়া গ্রিসে সূর্যালোকের কোনো অভাব নেই; সেখান থেকে সৌরবিদ্যুৎ আনা হোক৷
গ্রিস থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির ধারণাটা প্রথম এসেছিল অর্থমন্ত্রী ভোল্ফগাং শয়েবলে'র মাথায়৷ এক বছরের বেশি আগে তিনি এ'বিষয়ে গ্রিসের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমান পরিবেশ মন্ত্রী গিয়র্গোস পাপাকনস্তান্তিনু'র সঙ্গে কথা বলেন৷ ইত্যবসরে সেই ধারণা থেকেই হেলিওস প্রকল্প জন্ম নিয়েছে৷ পাপাকনস্তান্তিনু জানান, ‘‘হেলিওস একটি সরকারি শিল্পসংস্থা হবে৷ তার শাখাসংস্থাগুলি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে৷ বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এই শাখাসংস্থাগুলিতে অংশীদার হতে পারবেন৷''
হেলিওস প্রকল্পে প্রায় দু' লাখ বর্গমিটার এলাকায় প্যানেল বসিয়ে একাধিক ‘সৌরকানন' সৃষ্টি করা হবে৷ বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এই সব সৌরকানন ইজারা নিতে আগ্রহী হবে বলে পাপাকনস্তান্তিনু আশা করছেন৷ কিন্তু সেই বিনিয়োগকারীরা প্রথমেই জানতে চাইবে, এই বিদ্যুৎ কোথায় বিক্রি করা হবে৷ ইইউ'এর সদস্যদেশগুলির হাতে ২০১৭ সাল অবধি সময় রয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে ভরতুকি দিয়ে তাদের নিজেদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্প গড়ে তোলার৷ এবং ঠিক এই ভরতুকির কারণেই গ্রিসে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ দামের হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না৷ যেমন জার্মান গ্রিড বা সরবরাহ প্রণালীতে দেবার পক্ষে গ্রিসে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতের দাম বড় বেশি৷
কিন্তু একটা সমাধানের আভাস দিয়েছেন গ্রিক পরিবেশ মন্ত্রী গিয়র্গোস পাপাকনস্তান্তিনু৷ তাঁর কথায়, ‘‘জার্মান সরকার প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তারা আপাতত জার্মান বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রণালীতে বিদেশি সরবরাহকারীদের ঢুকতে দিতে রাজি নন৷ তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০০৯ সালে প্রদত্ত একটি নির্দেশ আছে৷ তা অনুযায়ী ইইউ সদস্যদেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা চলতে পারে৷ এর ভিত্তিতে আমরা জার্মান সরকার ও অপরাপর সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি, কীভাবে হেলিওস প্রকল্পের প্রথম পর্যায়টিকে মদত দেওয়া যায়৷''
অর্থাৎ গ্রিসে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতের জন্য বিদেশে ক্রেতা না খুঁজে পেলে, কেউ হেলিওস প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করবে না৷ ওদিকে জার্মানিতে ভরতুকি দিয়ে সস্তা করা সৌরবিদ্যুৎ গ্রিক সৌরবিদ্যুতের চেয়ে অনেক কম মূল্যের হলে চলবে না৷ কিন্তু জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতের দামের একটা কাঠামো নির্ধারণ করা সম্ভব৷ মুশকিল এই যে, সেই চুক্তির অর্থ যদি ভরতুকি কমানো হয়, তাহলে জার্মানিতে সৌরবিদ্যুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার৷ এবং সেটা জার্মান সরকারের কাম্য হতে পারে না৷
তাই জার্মান সরকার এবং গ্রিক সরকারের প্রচেষ্টা হল সহযোগিতা৷ জার্মান সৌরশক্তি ও সৌরবিদ্যুৎ সংস্থাগুলি গ্রিসে অর্থ বিনিয়োগ করবে, এবং গ্রিক সরকারকে সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে৷ এমনকি গ্রিসের বিপুল ঋণের ভার কমানোর প্রক্রিয়াতেও এই জার্মান বিনিয়োগকে ইতিমধ্যেই ধরা হয়েছে৷ কাজেই পাপাকনস্তান্তিনু'র আশা: ‘‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হেলিওস প্রকল্পের কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস এবং প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হতে পারবে৷... ২০১৩ সালে ফোটোভোলট্যাইক পদ্ধতিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি নির্মাণ শুরু হতে পারবে এবং ২০১৪ সালে সেগুলি চালু হতে পারবে৷''
প্রতিবেদন: পানাগিওটিস কুপারানিস / অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ