এসপিডি’র ১৫০ বছর পূর্তি
২৩ মে ২০১৩ফার্ডিনান্ড লাসাল ছিলেন ছিলেন ধনি ব্যবসায়ীর সন্তান৷ ১৮৬৩ সালের ২৩শে মে স্যাক্সনি প্রদেশের লাইপসিশ শহরে মূলত তাঁরই উদ্যোগে ‘সাধারণ জার্মান শ্রমিক সমিতি' গঠিত হয়৷ সমিতির লক্ষ্য ছিল শিল্পপতিদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ৷ সেই শ্রমিক আন্দোলন থেকেই ঊনবিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগে সামাজিক গণতন্ত্রী আন্দোলন জন্ম নেয়, যা আবার কালে জার্মানির এসপিডি দলের রূপ নেয়৷
শ্রমিকদের প্রতি লাসাল-এর বার্তা ছিল, ‘‘তোমরা যদি তোমাদের অবস্থার উন্নতি চাও, তাহলে তোমাদের রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে, তোমাদের সমমর্যাদার, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সম্পন্ন নাগরিকে পরিণত করতে৷'' শ্রমিক সমিতি ও নবীন সামাজিক গণতন্ত্রী আন্দোলনের কল্যাণে জার্মানির দরিদ্র দিনমজুরেরা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক বিচারে বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পায়৷
সে সময় জার্মানির অর্ধেক মানুষ ছিল নিরক্ষর৷ স্বাধীন ও গোপন ভোটাধিকার ছিল না৷ সামাজিক গণতন্ত্রীদের একটি প্রিয় কাহিনি হল: সে আমলের একটি সিগারেটের কারখানায় ন'জন শ্রমিক সিগারেট তৈরি করছে আর দশম জন তাদের একটি বই থেকে পড়ে শোনাচ্ছে৷ এরই নাম ছিল শিক্ষা, রাজনীতির সহজ পাঠ৷ লাসাল বলেছিলেন, সামাজিক উন্নতির পথ হল শিক্ষা৷ যা আজও এসপিডি দলের একটি মুখ্য দাবি৷
নিপীড়ন, উগ্রপন্থা, প্রতিরোধ
‘‘মাত্র এক লাখ সদস্য হলেই এই সমিতি একটি শক্তি হয়ে দাঁড়াবে,'' লিখেছিলেন লাসাল৷ ১৮৭১ থেকে ১৯১৮, অর্থাৎ কাইজারি আমলে সামাজিক গণতন্ত্রীদের সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দশ লক্ষে৷ নির্বাচনে তারা এক-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে শুরু করে৷ সামাজিক গণতন্ত্রীরা এতই সফল হয়ে দাঁড়ায় যে, আয়রন চ্যান্সেলর অটো ফন বিসমার্ক তাদের নিষিদ্ধ করেন৷ বারো বছর ধরে সামাজিক গণতন্ত্রীদের নিপীড়ন ও অপমানের শিকার হতে হয়, বহু সামাজিক গণতন্ত্রী দেশত্যাগ করেন৷
নিপীড়নের একটি ফল হয়, দলের একাংশ উগ্রপন্থি হয়ে ওঠে – ক্রমেই আরো বেশি সামাজিক গণতন্ত্রী মার্ক্সবাদকেই একমাত্র পথ বলে গণ্য করতে শুরু করে৷ যার ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে শ্রমিক আন্দোলনে প্রথম বড় বিভাজন ঘটে: একদিকে সংস্কারপন্থি, অন্যদিকে বিপ্লবী৷ কাইজার দ্বিতীয় ভিলহেল্ম সিংহাসন পরিত্যাগ করার পর ১৯১৮ সালের ৯ই নভেম্বর এসপিডি রাজনীতিক ফিলিপ শাইডেমান বার্লিনের রাইখস্টাগের সোপান থেকে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন৷ অপরদিকে কার্ল লিবকনেশ্ট একটি সমাজতন্ত্রী-কমিউনিস্ট প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন৷ ভাইমার প্রজাতন্ত্র বলে পরিচিত সেই জার্মানিতে গণতন্ত্র বেশিদিন স্থায়ী হয়নি৷ ১৯৩৩ সালের ২৩শে মার্চ আডল্ফ হিটলার গণতন্ত্রের অন্ত ঘোষণা করেন৷
শ্রমিক দল থেকে আধুনিক রাজনৈতিক দল
বামপন্থি গণদল হিসেবে পরিচিত হলেও, এসপিডি দল ১৯৫৯ সালে খোলাবাজারের অর্থনীতির প্রতি তাদের আনুগত্য স্বীকার করে৷ ১৯৬৬ সালে সিডিইউ-সিএসইউ দলের সঙ্গে ‘বৃহৎ জোটে' আসে এসপিডি৷ ১৯৬৯ সালে এসপিডি চ্যান্সেলর ভিলি ব্রান্ড ওয়ারশ'র স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ প্রদানের সময় নতজানু হয়ে জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক ভাবমূর্তির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেন৷
কিন্তু রক্ষণশীল চ্যান্সেলর হেলমুট কোল'এর দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনকালে, যেমন ১৯৮৯ সালে জার্মানির পুনর্মিলনের সময় এসপিডি'র বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না৷ পরে এসপিডি চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার দলকে তাদের বাম-ঘেঁষা প্রবণতা থেকে উদ্ধার করেন বটে, কিন্তু শ্র্যোডারের ‘এজেন্ডা ২০১০' এসপিডি'কে তার নিজের মূল থেকেই বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় – এসপিডি'র সর্বাধুনিক চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী পেয়ার স্টাইনব্রুক যা সংশোধন করার চেষ্টা করছেন৷