আগামী প্রেসিডেন্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২কেলেঙ্কারিতে জেরবার ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ গত শুক্রবার জার্মানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদত্যাগ করেছেন৷ শূ্ণ্যস্থান দ্রুত পূরণ করতে চায় চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল'এর সরকার৷ পর পর সরকারি জোটের দুই প্রার্থীর পদত্যাগের পর আর কোনো ঝুঁকি নিতে চান না ম্যার্কেল৷ কিন্তু তিনি যখন উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজতে ব্যস্ত, তখন তাঁকে অবাক করে জোটসঙ্গী এফডিপি দল রবিবার আচমকা গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী সামাজিক গণতন্ত্রী ও সবুজ দলের প্রার্থী ইওয়াখিম গাউক'এর প্রতি সমর্থন জানায়৷ এই অবস্থায় ম্যার্কেল'এর সিডিইউ দলও গাউক'কেই মেনে নেয়৷ দলের মধ্যে এফডিপি'র এমন আচরণের প্রতি অবশ্য সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
যাই হোক, জার্মান সংসদে উপস্থিত ৪টি দলের প্রার্থী হচ্ছেন গাউক৷ একমাত্র ব্যতিক্রম পঞ্চম দল – বামপন্থী ‘ডি লিংকে'৷ তারা বিকল্প কোনো প্রার্থী তুলে ধরবে কি না, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তারা এই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে৷ সম্ভবত আগামী ১৮ই মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন ইওয়াখিম গাউক৷
গাউক'এর অতীত পরিচয়
গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামাজিক গণতন্ত্রী দল ও সবুজ দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইওয়াখিম গাউক ছিলেন সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মান আমলের বিরুদ্ধবাদী ও নাগরিক অধিকারবাদী যাজক৷ সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর৷ জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তিনি৷
ইওয়াখিম গাউক-এর জন্ম ১৯৪০ সালে, জার্মানির পূর্বাঞ্চলের বাল্টিক সাগরবর্তী রস্টক শহরে৷ বড় হয়েছেন কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে৷ অল্প বয়স থেকেই স্বাধীনচেতা মানুষ তিনি৷ ১৯৫১ সালে কমিউনিস্ট গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মীরা তাঁর বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ গাউকের বয়স মাত্র ১১৷ বাবা ছিলেন ক্যাপ্টেন৷ তাঁকে আবার দেখেন তিনি ১৫ বছর বয়সে৷ তখন তিনি ভেঙে পড়া এক মানুষ৷ সাইবেরিয়ায় ২৫ বছরের শ্রমশিবির বাসের দণ্ড জোটে তাঁর৷ কোথায় তাঁকে রাখা হয়, তিনি আদৌ জীবিত কিনা পরিবারের কেউই তা জানতেননা৷ স্বৈরশাহীর ফল কি হতে পারে তার ছবিটা বাবার ওপর এই নিগ্রহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় গাউকের মনে অল্প বয়সেই৷ মুক্তি ও স্বাধিকারের পক্ষ নিতে তাঁর দেরি হয় নি৷ ধর্মযাজক হিসেবেও এই কাজ করেছেন তিনি নির্দ্বিধায়৷ এবং তাঁর ওপর কড়া চোখ ছিল কমিউনিস্ট সরকারের গোয়েন্দা পুলিশের৷
পূর্ব জার্মানির মানুষের শান্তিপূর্ণ বিপ্লবেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ইওয়াখিম গাউক৷ লুপ্ত হয় কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি৷ জার্মানি হয় পুনরএকত্রিত৷ পূর্ব জার্মানির কুখ্যাত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর স্টাসির নাগরিকদের ওপর নিয়মিত নজরদারির সব দলিলপত্র সংরক্ষণ করতে যে সংস্থা গঠিত হয় তার পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে ইওয়াখিম গাউক-এর ওপর৷ ২০০০ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব তিনি মর্যাদার সঙ্গে পালন করেন৷ এই দলিল দেখার সুযোগ দেন তিনি জনসাধারণকে৷ গণতন্ত্রের স্বচ্ছতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা তাঁর চরিত্রের সহজাত৷
গাউক'এর বক্তব্য
গত নির্বাচনের আগে গাউক বলেছিলেন, ‘‘আমি এই পদে নিযুক্ত না হলেও জনসংখ্যার সেই অংশেরই অংশ হয়ে থাকবো যারা আমাদের রাজনীতিকদের পাশাপাশি এই কথাটি বলবে যে, এই হল আমাদের গণতন্ত্র, এই হল আমাদের স্বাধীনতা৷''
মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন ইওয়াখিম গাউক৷ এবং এই কাজটি করে যেতে চান তিনি৷ জনগণের সরাসরি ভোট হলে তাঁর নির্বাচিত হবার ভাল সম্ভাবনা ছিল বলে অনেকে মনে করেন৷ ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ'এর পদত্যাগের পরেও জনমত সমীক্ষায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন ইয়োখিম গাউক৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন ও আব্দুল্লাহ আল ফারূক
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম