জার্মানিতে শুধু নারীরা ভোট দিলে কী হতো?
৮ মার্চ ২০২৪জার্মানিতে নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছে ১৯১৮ সালে। তারপর ১০৬ বছর কেটে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নারীরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সমানাধিকার পেয়েছে। এখন নারী ও পুরুষ ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় সমান।
নারীরা কোন দলকে বেশি পছন্দ করে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুধু পশ্চিম জার্মানিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। তারপর থেকে জার্মানির নারীদের পছন্দ অনেক বদলে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে জার্মানির নারীরা রক্ষণশীল সিডিইউ এবং ম্যার্কেলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে অর্ধেকের বেশি নারী সিডিইউ-কে ভোট দিয়েছে। গবেষক এলকে উইশমান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''সম্ভবত সিডিইউ পরিবারের মূল্যবোধের উপর জোর দিত এবং সেটা নারীদের ভালো লাগতো।''
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘পরে ধর্ম, পরিবার ও বাড়ি আর নারীদের জীবনের কেন্দ্র থেকে সরে গেল। আর ম্যার্কেল-জমানা শেষ হওয়ার পর জার্মান নারীদের ভোট দেয়ার ধরণও বদলে গেল। ২০২১ সালে যখন ম্যার্কেল আর ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন থেকেই সিডিইউ নারীদের অনেক কম ভোট পেতে শুরু করলো।''
যদি পার্লামেন্টে শুধু নারীরা থাকতেন?
উইশমান জানিয়েছেন, যদি ২০২১ সালে শুধু নারীরাই ভোট দিতেন, তাহলে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এসডিইউ) নেতা শলৎস আরো বেশি ভোট পেতেন। এছাড়া গ্রিন পার্টিও বেশি ভোট পেত। ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি(এফডিপি) ও অতি-দক্ষিণপন্থি এএফডি কম আসন পেত।
তিনি জানিয়েছেন, এখনো কাজের বাইরে জার্মানির কন্যা সন্তানেরা পু্ত্রদের চেয়ে বেশি দায়িত্ব নেয়, বাড়ির কাজও বেশি করে। তারা নতুন হাইওয়ের থেকে সরকারি পরিবহণকে আরো উন্নত করার পক্ষে। তারা এসপিডি, গ্রিন, বামপন্থিদের মতো প্রগতিশীল দলকে বেশি করে সমর্থন করেন।
জার্মানির পার্লামেন্টে নারীরা
গত দশকগুলিতে জার্মানির পার্লামেন্টে নারীদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছে।
গবেষক এলিসা ডেইস-হেলবিগ জানিয়েছেন, ''পার্লামেন্টে বিভিন্ন পটভূমিতে থাকা নারীদের প্রতিনিধিত্ব দরকার।'' তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''তখনই নারী প্রতিনিধিরা এমন বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে আসবেন, যা পুরুষ-প্রাধান্যের পার্লামেন্টে আসে না।''
তিনি এই প্রসঙ্গে ১৯৫৭ সালের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন। তখন পার্লামেন্টে মাত্র ১০ শতাংশ নারী ছিলেন। সেসময় প্রশ্ন ওঠে, বিবাহ বা স্বামী-স্ত্রী সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে পুরুষদের প্রাধান্য কি থাকা উচিত? সেসময় নারীদের ভোটেই বিভেদের অবসান হয়।
কিছু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নারীদের ভোট খুব বেশি করে প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন জার্মানিতে ১৯৯৭ সালে এসে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। তার আগে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দলের নারী প্রতিনিধিরা চেষ্টা করেও সংখ্যায় কম থাকার জন্য আইন পরিবর্তন করতে পারেননি।
এখন কার কত নারী সাংসদ?
জার্মানিতে এখন ৭৩৬ জন পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে নারী সদস্যের সংখ্যা ২৬৩। তার মধ্যে গ্রিন পার্টির নারী সাংসদের সংখ্যা ৭০, আর এএফডির নারী সাংসদের সংখ্যা মাত্র নয়জন।
গ্রিন পার্টি নিজে থেকেই ৫০ শতাংশ নারী প্রার্থী দাঁড় করায়। এসপিডি ৪০ শতাংশ নারী প্রার্থীকে দাঁড় করায়। সিডিইউ-ও এখন নারী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
যদি পার্লামেন্টে শুধু নারী সদস্যরাই ভোট দিতেন?
জার্মানিতে পার্লামেন্ট সদস্যদের সবসময় দলের নীতি মেনে ভোট দিতে হয়। তাই নারীরা শুধু ভোট দিলে কী করতেন তা বলা কঠিন। তবে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা পছন্দমতো ভোট দিতে পেরেছেন। তার ফল সামনে আছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নারী ও পুরুষ প্রতিনিধিদের চিন্তাভাবনা আলাদা।
যেমন বিবাহ-সাম্য নিয়ে ভোটাভুটিতে ৫৪ শতাংশ পুরুষ ওপেন ম্য়ারেজের পক্ষে ভোট দেন, কিন্তু ৭৬ শতাংশ নারী এর পক্ষে ছিলেন। ২০২৩ সালে আত্মহত্যায় সাহায্য করা নিয়ে বিলের পক্ষে ২৮৬ ও বিপক্ষে ৩৭৫টি ভোট পড়ে। শুধু নারীরা ভোট দিলে বিলের পক্ষে ১২৮ ও বিপক্ষে ১০৫টি ভোট পড়ত। বিল পাস হয়ে যেত।
কোভিড ১৯-এর সময় পার্লামেন্টে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের জন্য বাধ্যতামূলক টিকা ও ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং নিয়ে ভোটাভুটি হয়। বিলটি পাস হয়নি। শুধু নারীরা ভোট দিলে এই বিল পাস হতো।
কিরা শাখত/জিএইচ