জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য যথাযথ থাকার জায়গা
৭ মার্চ ২০১১জার্মানির প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব ডর্ম বা হল রয়েছে৷ সেখানে রুমের ভাড়া খুবই কম৷ একেকটি ছাত্র বা ছাত্রীকে একটি রুম দেওয়া হয়৷ করো সঙ্গে রুম শেয়ার করতে হয় না৷ তবে টয়লেট বা বাথরুম এবং রান্নাঘর শেয়ার করতে হয়৷ হ্যাঁ, নিজের রান্না নিজেকেই করে খেতে হবে তাই জার্মানিতে আসার আগে বেশ ভাল করে রান্না শিখে আসা জরুরি৷ আর ছেলেদের বা মেয়েদের হল বলে কিছু নেই৷ প্রতিটি হলে ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গেই থাকে৷
তবে স্টুডেন্ট ডর্মে থাকা যে কোন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক৷ কোন ধরণের সমস্যা হলে যে কারো কাছ থেকেই সাহায্য পাওয়া যায়৷ আর পড়াশোনার বিষয়ে কোন কিছু না বুঝলে বা একটি ক্লাস মিস করলে অন্যান্য সহপাঠীর কাছে থেকে তা সহজেই জানা যায়, যদি সে থাকে একই গণ্ডির মধ্যে৷
ডর্ম ছাড়া আরেক ভাবে বসবাস করার সুযোগ রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের৷ একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী একসঙ্গে থাকতে পারে৷ তাকে বলা হয় ভোনগেমাইনশাফ্ট সংক্ষেপে ভেগে৷ এখানে রুম ভাড়া ছাড়াও, বিদ্যুৎ এবং পানির খরচ বহন করতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের৷ কোন কোন সময় তা হতে পারে বেশ ব্যয়বহুল৷
ইয়েমেনের ছাত্র আব্দুল রহমান৷ জার্মানিতে প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে সে পড়াশোনা করছে৷ ছাত্র হিসেবে থাকার সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সে বলল, ‘‘আমি প্রথমে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতাম৷ আমার বাড়িওয়ালাও একই বাড়িতে থাকতো৷ আমার সমস্যা ছিল আমি পুরো বাড়িতে একা থাকতাম৷ এরপর আমি যোগাযোগ করি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট সার্ভিস সেন্টারে৷ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটি রুমের জন্য আবেদন করি৷ আমাকে প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল কারণ কোন রুমই ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছিল না৷ এরপর যখন আমি হলের রুমে উঠে যাই তখন আমার অনেক সুবিধা হয়৷ নিঃসঙ্গতার হাত থেকে আমি মুক্তি পাই৷ চাইলেই পাশের রুমে চলে যেতাম গল্প করার জন্য৷ এছাড়া রান্নাঘরে রান্নার পাশাপাশি সারাক্ষণই চলতো আড্ডা৷ আর হলের রুমে ফার্নিচার ছিল৷ আমাকে কিছুই কিনতে হয়নি৷ বিছানা, টেবিল, চেয়ার, বুক শেল্ফ৷ রান্নাঘরে ফ্রিজ, কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিংমেশিন৷ হলে থাকার পর আমার খরচ প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছিল৷ আমাকে প্লেট-গ্লাস পর্যন্ত কিনতে হয়নি৷ এছাড়া হলে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়৷ এর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে একটি পয়সাও নেওয়া হয় না৷''
কথা ঠিক৷ যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকলে অনেক ধরণের খরচ বেঁচে যাবে৷ আপনি যদি কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে চান তাহলে অনেক কিছুই হয়তো আপনাকে কিনে নিতে হবে৷ যেমন ধরা যাক – প্লেট, বাটি, চামচ, শোবার বিছানা, টেবিল, চেয়ার, বুক শেল্ফ এবং কাপড় রাখার জন্য ওয়াড্রোব বা আলমারি৷ এই খরচগুলো খুব সহজেই বাঁচানো সম্ভব যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকা যায়৷
আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মে থাকতে চান তাহলে জার্মানিতে আসার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে হবে অন্তত তিন মাস আগে৷ তা নাহলে আপনার জন্য হয়তো কোন রুম ফাঁকা থাকবে না৷ যেহেতু ডর্মের ভাড়া যে কোন ফ্ল্যাট বাড়ির চেয়ে অনেক কম তাই – ডর্মগুলোই হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম পছন্দ৷ আর ডর্মগুলো সবসময়ই হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাছে তাই অনেক সময় যাতায়াত খরচও বাঁচানো সম্ভব৷
ডর্মে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা৷ ক্লাসের অনেককেই আপনি পেতে পারেন আপনার ডর্মে৷ যে বিষয়টি বোঝেননি তা ডর্মে বসেই সহপাঠীর কাছ থেকে বুঝে নিতে পারেন বা বুঝিয়ে দিতে পারেন৷ আর ডর্মে থাকার মধ্যে আনন্দও অনেক বেশি কারণ প্রতি সেমেস্টারে ডর্ম কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে বিশাল পার্টির৷ নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত জানানো হয় এই পার্টির মাধ্যমে আর যেসব ছাত্র-ছাত্রী চলে যাচ্ছে তাদের জানানো হয় বিদায়৷ বেশ কয়েকটি রুম তখন ফাঁকা হয়ে যায়৷ জায়গা করে দেওয়া হয় নতুন অতিথিদের জন্য৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক