জার্মানিতে ‘নিরামিষ’ মাংস নিয়ে বিতর্ক
১ ডিসেম্বর ২০২৩ডানিয়েল কিস সসেজ তৈরি করেন৷ তবে যে সে সসেজ নয়৷ তাঁর সসেজে কোনো মাংস নেই, পুরোপুরি ভিগান৷ জার্মানির অনেক মানুষের কাছে সেটাই একটা সমস্যা৷ ডানিয়েল বলেন, ‘‘আমরা বেশ কিছু কটু মন্তব্য পেয়েছি৷ অনেকে আমাদের দ্রুত বিনাশ কামনা করেছেন৷ চেয়েছেন, আমাদের গোটা কোম্পানি যেন বন্ধ হয়ে যায়, বা কেউ সেটা ধ্বংস করে দেয়৷’’
জার্মানি মাংসের দেশ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় এমন উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে৷ শুকরের মাংসের নানা রূপ ও কারি সসেজ চিরায়ত পদের মধ্যে পড়ে৷ অনেকের ভয়, তাদের কাছ থেকে সেই সব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু ভিগান বিকল্প কি সত্যি জার্মান জীবনযাত্রার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে?
ড্রেসডেন শহরে ‘ভেগান কসাইখানা’ নজর আকর্ষণ করছে৷ সেখানে এমন সব বিকল্প পাওয়া যায়, যা মাংসের প্রয়োজন মেটাতে পারে৷ সে কারণে অনলাইনে অনেক প্রশংসার পাশাপাশি হুমকি ও গালিগালাজও শোনা গেছে৷
নিল্স স্টাইগার ও তাঁর সহযোগীরা কিন্তু মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চান না৷ মাংস ছাড়াও বিকল্প খাদ্যতালিকা যে সম্ভব, শুধু সেটাই তাঁরা তুলে ধরতে চান৷ নিল্স বলেন, ‘‘আমি নিজে পাঁচ বছর আগে ভিগান হয়েছি৷ আগে বেশি মাংস খাবার কারণে আমি পরিচিত ছিলাম৷ আমি বন্ধুদের সঙ্গে বারবিকিউ করতাম এবং মাংসের স্বাদ খুব উপভোগ করতাম৷ আমি এখনো সেই স্বাদ পছন্দ করি৷ শুধু মাংস ছাড়া৷ আমি চাই না, সে কারণে প্রাণীহত্যা হোক বা কৃষিজমি ব্যবহার করা হোক৷''
জার্মানিতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা কমেই চলেছে৷ ২০২২ সালে সে দেশে বছরে মাথাপিছু ‘মাত্র' ৫২ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়েছে৷ ১৯৮৯ সালের পর যা সবচেয়ে কম হার৷ কম মাংস খাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে৷ গবেষণা অনুযায়ী বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের জন্য পশুকেন্দ্রিক শিল্পক্ষেত্র দায়ী৷
কোম্পানির রন্ধন বিষয়ের প্রধান হিসেবে ডানিয়েল কিস মূলত ভালো রান্না করতে চান৷ মাংসের স্বাদ নকল করা মোটেই কঠিন নয়৷ তার জন্য বিশেষ মসলা রয়েছে৷ সঠিক টেক্সচার সৃষ্টি করাই আসল চ্যালেঞ্জ৷ ডানিয়েল বলেন, ‘‘আমি যখন সবাইকে বলি গুলাশ রান্না করছি, তখন সেই পদের মধ্যে ছোটবেলায় মা বা দাদি-নানির রান্নার স্বাদ কিছুটা হলেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হয়৷ তাছাড়া সসেজ খাওয়ার সময় কার্টিলেজে কামড় দেবার মতো অনুভূতি পেতে হবে৷ অথবা স্টেক খাওয়ার সময়েও মাংসের মতো স্বাদ পেলে ভালো হয়৷’’
বার্লিনেও ২০১৭ সাল থেকে এক ভিগান মাংসের দোকান রয়েছে৷ সেখানেও উত্তেজনা কম নয়৷ মালিক পাউল পলিঙার বলেন, ‘‘আমরা নাকি এই পেশাকে অপবিত্র ও অসম্মান করছি, এমন সব কথা শুনতে পাই৷’’
তবে ড্রেসডেনের ‘ভিগান' মাংসের দোকানের তুলনায় তাঁদের উদ্দেশ্য আলাদা৷ তাঁরা মাংস ও সসেজের মৌলিক স্বাদ অনুকরণের চেষ্টা না করে একেবারে নিজস্ব স্বাদ ও পণ্যের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন৷ পাউল বলেন, ‘‘আমাদের কাছে স্বাদই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আমরা কিছু সৃষ্টির সময় খতিয়ে দেখি, নিজেরাই সেই স্বাদ উপভোগ করছি কি না৷’’
জার্মানির মতো মাংসপ্রধান দেশেও চিরায়ত সসেজের বিকল্প দেখা যাচ্ছে৷ একবার চেখে দেখলে ক্ষতি কী?
ইয়েন্স ফন লার্খার/এসবি