‘জার্মানিতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কোনো জায়গা নেই’
৩ নভেম্বর ২০২৩মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি যে জার্মান সমাজের উপরও গভীর প্রভাব রাখছে, গত কয়েক সপ্তাহের বিভিন্ন ঘটনা তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদ দেখাতে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে কিছু মানুষ৷ কিন্তু সেইসঙ্গে বেড়ে চলেছে ইহুদি-বিদ্বেষের ঘটনা৷ ফলে জার্মানিতে ইহুদি স্থাপনা থেকে শুরু করে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জীবনযাত্রা চাপের মুখে পড়েছে৷ রাজনৈতিক নেতারা বার বার সে বিষয়ে সতর্ক করে দিলেও বাস্তবে তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না৷ এমনই প্রেক্ষাপটে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেকের এক ভিডিও বার্তা দলমত নির্বিশেষে যথেষ্ট প্রশংসা পাচ্ছে৷ বুধবার পোস্ট করা সেই ভিডিও ৭০ লাখেরও বেশি দেখা হয়েছে৷
প্রায় দশ মিনিটের ভাষণে হাবেক সবার আগে ইহুদি-বিদ্বেষের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন, জার্মানিতে ইহুদি নিধন যজ্ঞের প্রায় ৮০ বছর পর তার ইহুদি বন্ধুবান্ধব ও নেতারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন৷ হাবেক জার্মানির মুসলিম নেতাদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট ভাষায় ইহুদি-বিদ্বেষের নিন্দার আহ্বান জানান৷ তার মতে, ইসরায়েলের সমালোচনা ন্যায্য হলেও হামাসের কুকীর্তির সঙ্গে ইসরায়েলের বাহিনীর কার্যকলাপ সমানভাবে দেখা গ্রহণযোগ্য নয়৷ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার ও নিজস্ব রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়াও অন্যায় নয়৷ তবে বিশেষ করে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কড়া রাজনৈতিক জবাবের ডাক দেন তিনি৷ যারা হামাসের প্রশংসা করে ও ইসরায়েলি পতাকা পোড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা করেন হাবেক৷ যে সব অভিবাসী এমন কার্যকলাপ চালাচ্ছেন, তাদের রেসিডেন্সি পার্মিট হারানো বা বিতাড়িত হবার ঝুঁকির কথা ভাবতে হবে৷
হাবেক মনে করিয়ে দেন, যে জার্মানিতে মুসলিমরাও বৈষম্যের শিকার হন৷ সে কারণেই অন্যান্য গোষ্ঠী হুমকি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হলে তাদের প্রতি সংহতি দেখানো জরুরি৷ হাবেক বলেন, জার্মানিতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কোনো জায়গা নেই৷ একই সঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে মুসলিম অভিবাসীদের মধ্যে ইহুদি-বিদ্বেষের ঘটনা বাড়লেও বিশেষ করে চরম দক্ষিণপন্থি মহলে সেই মনোভাব রোপীত রয়েছে৷ মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানির স্বার্থে সেই শক্তি আপাতত নীরব রয়েছে৷ হাবেক বামপন্থি রাজনীতিকদের মধ্যেও ইহুদি-বিদ্বেষের সমালোচনা করেন৷
জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর হাবেকের সেই ভাষণ বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ জার্মানিতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রন প্রোসোর সাহস, নৈতিকতার মানদণ্ড ও স্পষ্টতার জন্য হাবেকের প্রশংসা করেন৷ বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের একাধিক নেতাও সবুজ দলের এই নেতার স্পষ্ট বক্তব্যকে স্বাগত জানান৷ বৃহস্পতিবার হাবেক নিজে ইহুদি-বিদ্বেষ নিয়ে আরো তর্কবিতর্কের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও বিভিন্ন ভাবে এ বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরছেন বলে হাবেক মনে করিয়ে দেন৷ শলৎসও হাবেকের ভাষণের প্রশংসা করেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)