জার্মানিতে উগ্র ইসলামপন্থি সালাফি আন্দোলন
১২ জুলাই ২০১১জার্মান অভ্যন্তরিণ গোয়েন্দা দপ্তরের সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট অনুযায়ী জার্মানিতে কট্টর ইসলামি সংগঠনের সংখ্যা ২৯৷ তাদের সদস্য সংখ্যা হবে অন্তত ৩৭ হাজার৷ তবে সালাফিদের ওপর এই দপ্তরের বিশেষ দৃষ্টি৷ কেননা অন্যদের তুলনায় এই গোষ্ঠীর বৃদ্ধি ঘটছে ব্যাপক হারে এবং আরো দ্রুত৷ তবে শুধুমাত্র এই কারণেই সালাফিদের গোষ্ঠী বিপজ্জনক, তা নয়৷ এই দপ্তরের প্রধান হাইনৎস ফ্রম্ বলছেন: ‘‘সালাফিদের প্রত্যেকেই এক একজন সন্ত্রাসী, তা নয়৷ তবে আমাদের জানা সন্ত্রাসীদের প্রায় সবারই হয় সালাফিদের সঙ্গে যোগ ছিল, নয় তারা নিজেরা সালাফি৷''
আরবি ‘সালাফ' শব্দ থেকে এসেছে কথাটা - যার অর্থ পূর্বপুরুষ৷ চতুর্দশ শতকের ইসলামি ধর্মমত অনুযায়ী পূর্বপুরুষদের ধর্মবিশ্বাস এবং জীবনচর্যা কঠোরভাবে মেনে চলে সালাফিরা৷ তিনশো বছর পরে এই ধর্মীয় মত ও পথই সৌদি আরবে ওয়াহাবিবাদের ভিত গড়ে তোলে৷ আজও তা চালু আছে৷ জার্মানিতে সালাফি গোষ্ঠীর অনুসারীরা তাদের প্রচারকাজে ইন্টারনেট আর অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে৷ এবং তাদের লক্ষ্য হলো তরুণ মুসলিমরা৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় মুসলিম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইমান মাজিয়েক মনে করেন সালাফি মতকে ঘিরে যে উগ্রবাদী প্রবণতা জার্মানিতে, এরকম উগ্রবাদ অন্যান্য ধর্মেও মাঝে মাঝে প্রকাশ পায়৷ তবে তিনি বলেন, ব্যাপারটা দেখছে মুসলিম সম্প্রদায়ও৷ তরুণদের উগ্র ইসলামপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়াটা ব্যাহত করতে চায় তারা, বলেন তিনি৷
সালাফিদের কট্টর মতের প্রবক্তা যারা তারা কিন্তু চায়না যে, মুসলমানরা এদেশের সমাজের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হোক৷ ইব্রাহিম আবু নাজি তাদেরই একজন৷ তিনি একটি ইন্টারনেট সাইট চালান যার নামের বাংলা করলে দাঁড়ায় - ‘সত্য ধর্ম'৷ এই সাইটে রাখা বক্তব্য ও বিষয় যাতে অভ্যন্তরিণ গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি এড়িয়ে অফলাইনেও অনুসরণ করা যায় তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা দুই জার্মান - প্রাক্তন বক্সার পিয়ের ফোগেল ও তার মুখপাত্র সোয়েন লাউ গড়ে তুলেছিল ‘বেহেশতের আমন্ত্রণ' নামে একটি উগ্রপন্থি ইসলামি সংগঠন৷ মোয়েনশেনগ্লাডবাখ শহরে তাদের কেন্দ্রীয় দপ্তরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়তে থাকে৷ সন্ত্রাসি নেতা ওসামা বিন লাদেনের স্মরণে সমাবেশের ডাক দিয়ে বিপাকে পড়ে এই সংগঠন৷ ইতিমধ্যে সংগঠন ভেঙে দিলেও তাদের কাজকর্ম তারা চালিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করা হয়৷
জার্মানিতে সালাফিদের সাফল্যের কারণ খুঁজছেন রাজনীতিকরা, বিশেষজ্ঞরা৷ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী রাজনীতিক ও জার্মান সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি ভল্ফগাং বোসবাখ মনে করেন, এমন হতে পারে যে আপোশ করতে রাজি নয় এমন এক আদর্শের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে যেসব মানুষ ভিন্ন ধর্মের ও ভিন্ন মতের অনুসারীদের মুখোমুখি অসহিষ্ণু, মেয়েদের সমান অধিকারে বিশ্বাস করেনা, তাদের কাছে কট্টর ধর্মীয় মত আকর্ষণ করে বইকি৷
বোসবাখ-এর সঙ্গে আইমান মাইজেক অন্তত একটি ব্যাপারে একমত৷ এবং তা হলো উগ্র ইসলামি মত জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমানদের সামগ্রিকভাবে ক্ষতিই করছে৷
প্রতিবেদন: পেটার ফিলিপ ভাষান্তর: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন