জার্মানিতে গর্ভপাত নিয়ে বিতর্ক
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭থমাস ব্যর্নার একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান এবং ২৬ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গাইনোকোলোজিস্ট৷ ২০১০ সাল থেকে তিনি জার্মানির ডানেনব্যার্গের কোপিও এলবে-ইটজেল ক্লিনিকে কাজ করছেন, যেখানে শুধু ২০১৬ সালেই ৩১ নারীর গর্ভপাত করা হয়েছে৷
তবে সেসব গর্ভপাতের কোনোটিই ব্যর্নার করেননি৷ বরং গত বছরের ডিসেম্বরে যখন তাঁকে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়, তখন তিনি পুরো হাসপাতালেই গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেন৷ তিনি মনে করেন, ধর্মে আছে যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে একটি জীবনকে রক্ষা করতে হবে৷ তাই ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে তিনি একক সিদ্ধান্তে হাসপাতালটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছেন৷ জার্মানিতে একজন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এমন সিদ্ধান্ত এটাই প্রথম৷
গর্ভপাত নিষিদ্ধে বিতর্কের মুখে পড়া হাসপাতালটি কাপিও গ্রুপের৷ ইউরোপের অন্যতম বড় স্বাস্থ্যসেবাদাতা এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত সমর্থনও করেছে, কেননা, তারা মনে করে, গর্ভপাতে আগ্রহী নারীরা চাইলেই অন্য হাসপাতালে যেতে পারেন৷ কিন্তু চিকিৎসকের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে গোটা জার্মানিতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
আইনি পরিস্থিতি
জার্মান আইন অনুযায়ী, আঠারো বছরের বেশি বয়সে যে কোনো নারী গর্ভধারণের বারো সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত ঘটাতে পারেন৷ তবে সেজন্য তাঁকে অবশ্যই গর্ভপাতের আগে একটি কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিতে হবে৷ ধর্ষণের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য গর্ভপাতের সময় এই শর্ত প্রযোজ্য নয়৷ চিকিৎসকের অনুমতি থাকলে তাঁরা কোনো রকমের কাউন্সেলিং ছাড়াই গর্ভপাত করাতে পারেন৷ তবে আঠারো বছরের কম বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত তাঁর পরিবার বা অভিভাবককে নিতে হবে৷ আর বারো সপ্তাহের পরে গর্ভপাত ঘটালে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷
জার্মানির সব হাসপাতাল গর্ভপাতের সুযোগ রাখতে বাধ্য নয়৷ তবে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হয় যে কোনো নারী যদি গর্ভপাত ঘটাতে চান, তিনি যেন সেটা করতে পারেন৷
ডানেনব্যার্গের পরিস্থিতি ভিন্ন
তবে ডানেনব্যার্গের ক্লিনিকের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেই অঞ্চলে এটিই একমাত্র হাসপাতাল যেটির গাইনোকোলজিক্যাল বিভাগ রয়েছে৷ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো চিকিৎসক গর্ভপাতে সহায়তা করতে বাধ্য নন৷ কোনো কারণ ছাড়াই তারা সেটা করতে অস্বীকার করতে পারেন৷ আর গির্জা পরিচালিত হাসপাতালগুলোতেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তবে জরুরি পরিস্থিতিতে, যেখানে একজন নারীর জীবন হুমকির মুখে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য৷
আবার জার্মানির সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালতের রুল অনুযায়ী, একজন চিকিৎসককে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে বৈধ গর্ভপাতে তার সায় থাকার বিষয়টি একটি পূর্বশর্ত৷
ফলে ডানেনব্যার্গের পরিস্থিতি বেশ জটিল৷ কেননা, সেখানে একজন চিকিৎসক তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ভিত্তিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছেন যদিও হাসপাতালটি গির্জা পরিচালিত নয়৷ তবে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা ব্যর্নারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ আর ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালটির মালিকপক্ষও সুর পাল্টাতে শুরু করেছে৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইপিডি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন, কিন্তু একটি বিভাগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের৷
ডাক্তার ব্যর্নার অবশ্য নিজের নীতিতে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এজন্য ভবিষ্যতে তাঁর ক্যারিয়ারে যেকোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত তিনি৷
প্রতিবেদন: রিনা গোল্ডেনব্যার্গ/এআই
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী