জার্মানিতেই ‘ফ্রি-ক্লাইম্বিং’ শুরু হয়েছিল
১৭ মে ২০১৪জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের একটি অংশকে ‘সুইজারল্যান্ড' বলা হয়৷ ১৮৬৪ সালে পর্বতারোহীরা যে পথ দিয়ে প্রথমবার চূড়ায় উঠেছিলেন, আজও বেশিরভাগ মানুষই সেই একই রুট বেছে নেন৷ স্থানীয় পর্বতারোহী স্টেফান ইয়াকব বলেন, ‘‘এটা অসাধারণ এক চূড়া, এই পর্বতের অনবদ্য ইতিহাস রয়েছে৷ ওঠার রোমাঞ্চই আলাদা! পর্বতারোহীদের জন্যও এই চূড়া অনবদ্য৷ এই চূড়া ছাড়া আমাদের জীবন ভাবাই যায় না৷'' আরেক পর্বতারোহী কনস্টানৎসে ইয়াকব বলেন, ‘‘পর্বতারোহনের ১৫০ বছর পালন করছি আমরা৷ একবার এই পথ দিয়ে টিলায় না উঠলে জীবনটাই বৃথা৷ এখানে আসতেই হয়৷''
ড্রেসডেন-এর ক্রিস্টিয়ান ভাল্টার-ও একই টানে এখানে এসেছেন৷ স্থানীয় পর্বতারোহী ক্রিস্টিয়ান ভাল্টার বলেন, ‘‘আমার জীবনেও এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে৷ প্রায় ৩০ বছর ধরে পাহাড়ে উঠছি, আজকের অনুভূতিও সেই প্রথম দিনের মতোই৷''
স্যাক্সনির সুইজারল্যান্ডের নরম স্যান্ডস্টোন বেয়ে ওঠা পর্বতারোহীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ৷ ক্রিস্টিয়ান ভাল্টার বলেন, ‘‘কোথায় খুঁটি লাগাতে হবে সেটা ভাবতে হয়৷ তার উপর নির্ভর করা যায় কিনা, ভালো করে সেটাও ভেবে দেখতে হয়৷ এটা করা উচিত কিনা, স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিনা, এ সব ভাবতে হয়৷'' স্থানীয় পর্বতারোহী বেটিনা ভবস্ট বলেন, ‘‘এই টিলা সত্যি অনবদ্য, অন্য পাহাড়-পর্বতের থেকে একেবারে আলাদা৷ অনেক নরম, মোলায়েম, মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন্ত৷ স্যাক্সনির সুইজারল্যান্ডে পাহাড়ে চড়া অনেকটা মেডিটেশন বা ধ্যানের মতো৷ নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া, নিজের সীমা বোঝার জন্য আদর্শ৷''
প্রথমে একটা সিঁড়ি ব্যবহার করা হতো৷ প্রায় ১০ বছর পর পাশের টিলায় ওঠা সম্ভব হলো৷ সেটাই ছিল সরাসরি পাহাড়ে চড়ার হাতেখড়ি৷ তারপর ‘ফ্রি-ক্লাইম্বিং' গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷ স্যাক্সনির সুইজারল্যান্ডে আল্পস-এর মতো হুক ও দড়ির ব্যবহার করা হয় না৷ এমন সব উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যাতে স্যান্ডস্টোনের ক্ষতি না হয়৷ বেটিনা ভবস্ট বলেন, ‘‘এমন এক উচ্চতায় উঠলে সেখান থেকে পড়ে যাবার ভয়ও রয়েছে৷ কীভাবে ফেরা যায়, তা কেউ জানে না৷ আমার কাছে তাঁরা পাঁচজন সাহসী পুরুষ ছিলেন৷''
পাহাড়ে চড়ার কায়দা রপ্ত করতে পারলেও বিপদের ভয়, ঝুঁকি থেকেই যায়৷ তবে মানুষকে থামিয়ে রাখা কঠিন৷ ক্রিস্টিয়ান ভাল্টার বলেন, ‘‘নিজের নিরাপত্তার খাতিরে এখানে এমন পাতলা ফিতে বসাচ্ছি৷ স্যাক্সনি-তে আমরা এমন অনেক সহজ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করি৷''
পর্বতারোহীদের নিয়ে কাহিনি সম্পর্কে ব্যার্ন্ড আর্নল্ড-এর মনে সংশয় রয়েছে৷ ৯০০ বারেরও বেশি তিনি এই পাহাড়ের চূড়াগুলিতে উঠেছেন৷ বিশ্বের সেরা পর্বতারোহীদের মধ্যে তাঁর নাম রয়েছে৷ তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি এক আদর্শ হয়ে উঠেছেন৷ ব্যার্ন্ড আরনল্ড বলেন, ‘‘তোমাকেই লক্ষ্য স্থির করতে হবে আর তুমিই তোমার মানদণ্ড৷ অন্যদের সঙ্গে তুলনার প্রয়োজন নেই৷ তুমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, সেটাই সবচেয়ে সুন্দর৷ আমার মতে, তুলনা করলেই নিজেকে খারাপ করা হয়৷''
এই স্যাক্সনির অভিবাসীরাই গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকে তাদের ‘ফ্রি ক্লাইম্বিং'-এর কৌশল অ্যামেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন৷ ১৯৭০ সালের পর ‘ফ্রি ক্লাইম্বিং' ইউরোপেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ গত কয়েক বছরে পর্বতারোহনের প্রবণতা বাড়ার পেছনে এরও অবদান রয়েছে৷
বড় শহরেও কৃত্রিম প্রাচীর বেয়ে ওঠার ধুম পড়ে গেছে৷ ক্রিস্টিয়ান ভাল্টার বলেন, ‘‘এ এমন এক স্পোর্টস, যাতে থ্রি-ডায়মেনশনাল অ্যাডভেঞ্চারের ছোঁয়া রয়েছে৷ কৃত্রিম ক্লাইম্বিং হলে বিপদের মাত্রা বেশি না হলেও মানুষের মনে নীচে পড়ার একটা অন্তর্নিহিত ভয় তো থাকেই৷ তবে সেই ভয় কাটাতে হয়৷ এটাই ক্লাইম্বিং-এর বিশেষত্ব৷''
ক্লাইম্বিং বা পর্বতারোহণ আজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে৷ দেড়শ বছর আগে স্যাক্সনির ফালকেনস্টাইন-এ এর সূচনা ঘটেছিল৷