জাপানের আকাশসীমায় চীনা বিমান
১৩ ডিসেম্বর ২০১২১৯৫৮ সাল যাবৎ জাপান তার বায়ু সীমানার উপর নজর রেখে আসছে, কিন্তু চীনা বিমানের জাপানের বায়ু সীমানা লঙ্ঘণের ঘটনা এই প্রথম৷ অবশ্য দ্বীপগুলির মালিকানা নিয়ে চীন ও জাপানের মধ্যে বিরোধ, তকরার, এমনকি উত্তেজনা অনেকদিনের৷ চীনা ভাষায় এই দ্বীপপুঞ্জের নাম দিয়াওউ, জাপানি ভাষায় নানকাকু৷ জাপান গত নভেম্বর মাসে দ্বীপগুলি ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত'' করার পর বেইজিং সরকার অতিমাত্রায় ক্ষুব্ধ এবং চীনের জনতা ঠিক সেই পরিমাণ ক্ষিপ্ত৷ দ্বীপগুলির আশেপাশে চীনা মাছধরা ট্রলারের আসা-যাওয়া নিয়ে জাপানি উপকূলরক্ষা বাহিনির সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো ‘‘ঘটনা''-ও ঘটে চলেছে৷
কিন্তু চীন যে এবার একটি ওয়াই-১২ গোত্রীয় টুইন-টার্বোপ্রপ নৌ-পর্যবেক্ষণ বিমান পাঠিয়েছে, তার ফলে বিরোধ আরো এক পর্যায় উপরে উঠল, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ তাঁদের ধারণা, এটা চীনের একতরফাভাবে একটা ‘‘নতুন স্বাভাবিক অবস্থা'' নির্ধারণ করার অভিযানের অঙ্গ৷ ঐ ‘‘নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে'' চীনের জাহাজগুলি তাদের মর্জি মতো বিতর্কিত দ্বীপগুলির কাছে আসা-যাওয়া করতে পারবে, এটাই হল সম্ভবত চীনের উদ্দেশ্য৷
তার উপর আবার ১৯৩৭ সালের নানজিং হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী পড়েছে ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে, জাপানি সম্রাটের সৈন্যরা যখন চীনের সে আমলের রাজধানীতে প্রায় তিন লাখ মানুষকে হত্যা করে বলে চীনের ইতিহাসবেত্তাদের দাবি৷ দক্ষিণ চীন সাগরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে প্রচারণার উদ্দেশ্যটাও খানিকটা যোগ হয়ে থাকতে পারে৷
জাপানের প্রতিক্রিয়া সতর্ক এবং কূটনীতিকসুলভ৷ জাপান সরকারের মুখ্য সচিব ওসামু ফুজিমুরা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক৷ আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করছে, এমন যে কোনো কর্মের আমরা এ'দেশের আইন ও নিয়মাবলী অনুযায়ী পূর্বাপর দৃঢ়বদ্ধভাবে মোকাবিলা করব৷'' অপরদিকে এটাও ঠিক যে, জাপান আটটি এফ-১৫ জঙ্গিজেট এবং একটি ই-২-সি শীঘ্র সতর্কতা বিমান আকাশে পাঠিয়ে চীনকে জানান দিয়েছে যে, চীনের ‘‘নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতি'' জাপানের নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়৷
অপরদিকে বেইজিং'এর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নৌ-পর্যবেক্ষণ বিমানটির উড়ালকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে বর্ণনা করেছে৷ মুখপাত্র হং লেই যোগ করেছেন, ‘‘চীন চায় যে জাপানি তরফ থেকে দিয়াওউ দ্বীপপুঞ্জের পানি তথা বায়ু অঞ্চলে বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ করা হোক৷''
এসি / জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)