জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির তুলনায় বাকি দলগুলো জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ ওই দুই দলের বাইরে এ পর্যন্ত যে দলগুলো সংসদে আসন পেয়েছে, তাদের নিয়েই এই ছবিঘর৷
প্রথম সংসদ প্রায় বিরোধীদলশূন্য
১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরো ১১ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়৷ সেই দলের মধ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ, মুজাফ্ফর), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ, ভাসানী), বাংলাদেশ ন্যাশনাল লীগ (বিএনএল), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি উল্লেখযোগ্য৷ এর মধ্যে জাসদ ও বিএনএল ১ আসন করে পায়৷ ৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে৷ বাকি ২৯৩ আসন পায় আওয়ামী লীগ৷
বাম দলের ১৬ আসন
তিন বছর সামরিক শাসনের পর দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদ্য গঠিত বিএনপির জয়-জয়কার থাকলেও ক্ষুদ্র দলগুলোর মধ্যে বামেরা ছিল এগিয়ে৷ সেই নির্বাচনে জাসদ ৮, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (মার্ক্সিস্ট-লিনিয়েস্ট) ১, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ৮ আসন পায়৷ বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৫ আসন, মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২ আসন ও ন্যাপ (মুজাফ্ফর) ১ আসন পায়৷ মোট ১২ দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে৷
জামায়াতের ১০ আসন!
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পাওয়া জামায়াতে ইসলামী প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে৷ সেই নির্বাচনে ১০ আসন পায় জামায়াত৷এরশাদ শাসনামলে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মোট ১১টি দল অংশগ্রহণ করে৷ দুই দলে ভাগ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জাসদ৷ আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ ৪ আসন এবং সিরাজুল আলম খানের জাসদ ৩ আসন পায়৷ বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি এবং ন্যাপ পায় ২টি করে আসন৷
সিংহভাগ দলের নির্বাচন বর্জন
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিসহ অনেক দল অংশ নেয়নি৷ ৮৮ সালের সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে অংশ নেয় নির্বাচনের পূর্বে গঠিত সম্মিলিত বিরোধী দল ও ফ্রিডম পার্টি৷ সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯ আসন পায়৷ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আসামী কর্নেল আব্দুর রশিদ, কর্নেল সাঈদ ফারুক রহমান ও মেজর বজলুল হুদার দল ফ্রিডম পার্টি পেয়েছিল ২ আসন৷
৭৫ দলের অংশগ্রহণ
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নেয়৷ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পর তৃ্তীয় সর্বোচ্চ আসন পায় জাতীয় পার্টি৷ তারা ৩৫টি আসন পায়৷ এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ৫টি করে আর ইসলামী ঐক্য জোট, ন্যাপ (মুজাফ্ফর), গণতান্ত্রিক পার্টি, ন্যাশনাল ডোমোক্র্যাটিক পার্টি, জাসদ (সিরাজ) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১ টি করে আসন পায়৷
শুধু ফ্রিডম পার্টি
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূলত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টি ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টি এক আসনে জয় লাভ করে বিরোধী দলের আসনে বসে৷ মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পড়ে সেই নির্বাচনে৷
মোট দল ৮১টি!
১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সংসদ ভেঙে সেবছরই নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় বিএনপি৷ প্রথমবারের মতো তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ মোট ৮১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় সেই নির্বাচনে৷ ২৮১জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ২৫৭৪ জন প্রার্থী অংশ নেয় নির্বাচনে৷ ৩২ পায় জাতীয় পার্টি৷ জামায়াতে ইসলামী ৩, ইসলামী ঐক্য জোট ১, জাসদ (রব) ১ আসনে জয় লাভ করে৷ বাকি ৭৪টি দল কোনো আসন পায়নি৷
জাতীয় পার্টির ভরাডুবি
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অংশ নেয়৷ ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টসহ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি মাত্র ১৪টি আসন পায়৷ মঞ্জুর জাতীয় পার্টি পায় ১টি আসন৷ সেই সময় জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসনে জয়লাভ করে৷ নবগঠিত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি - বিজেপি পায় ৪ আসন৷ এছাড়া ইসলামী ঐক্য জোট ২ আসন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২ আসন পায়৷
জোটের নির্বাচন
১০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মূলত জোটের নির্বাচনের জন্য মনে রাখা যেতে পারে৷ সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় মহাজোট গঠিত হয়৷ সেই জোটে জাতীয় পার্টি ২৭, জাসদ ৩, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২ এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি ১ আসনে জয় লাভ করে৷ অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী ২ আসন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি ১ আসন পায়৷
মাত্র ১৭ দলের অংশগ্রহণ
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়৷ রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে জয় লাভ করে৷
সূত্র: বাংলাপিডিয়া, জাসদের উত্থান-পতন-মহিউদ্দিন আহমদ, তথ্যবাতায়ন, বাংলাদেশ ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন আর্কাইভ, অ্যাডাম কারের নির্বাচনি আর্কাইভ৷