1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলতে চাই : মেঘ

সমীর কুমার দে ঢাকা
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে মেঘ তার মা-বাবাকে হারিয়েছে। এখন মামা নওশের রোমানের কাছে থেকেই বড় হচ্ছে মেঘ।

https://p.dw.com/p/46pwP
Bangladesch Sohn der ermordeten Journalisten
ছবি: Nawsher Roman

১০ বছর আগের সেই ছোট্ট মেঘ এখন কিশোর। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটে মনোযোগ তার। একদিন আগেও সিরাজগঞ্জে বিসিবির ইয়ুথ টাইগার্স অনুর্ধ্ব-১৬ জোনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে পঞ্চগড় জেলা দলের হয়ে খেলে এসেছে। লক্ষ্য তার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা। সে লক্ষ্যেই ক্রিকেটকে ধ্যান-জ্ঞান করে নিয়েছে মেঘ।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর নানি নুরুন্নাহার মির্জার কাছেই বড় হচ্ছিল মেঘ। গত ৫ জানুয়ারি নানিও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। মেঘকে ভালোবাসার চাদরে আগলে রাখা আরেকজন তার খালা নাবিলা ইফাত ধ্রুবও গত জুনে মারা গেছেন। ভালোবাসার মানুষগুলোকে একে একে হারিয়ে এখন মামা-মামীর স্নেহের চাদরে বড় হচ্ছে মেঘ। মামা নওশের রোমান বলছিলেন, "কোথাও আমরা মেঘকে একা যেতে দেই না। সর্বশেষ বুধবার সিরাজগঞ্জে ইয়ুথ টাইগার্স টুর্নামেন্ট-১৬-এ ম্যাচ খেলেছে, আমি ওর সঙ্গেই ছিলাম। ও যখন বাসার পাশেই ইন্দিরা ক্রিকেট একাডেমিতেও প্র্যাকটিস করতে যায়, তখনও আমরা কেউ না কেউ ওর সঙ্গে থাকি। ওর ইচ্ছাটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করি। যাতে বাবা-মায়ের অভাবটা ওর মধ্যে কাজ না করে।”

মেয়ে-জামাতাকে হারিয়ে নুরুন্নাহার মির্জা নাতিকে অবলম্বন করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বুনেছিলেন। সাগর-রুনির খুনি কারা এটা শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারলেন না তিনি। দেখা হলো না সদ্য কৈশোরে পা রাখা নাতির ঘুরে দাঁড়ানো ভবিষ্যৎ। নওশের রোমান বলছিলেন, মেঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটাও তার দেখা হলো না। খালা মারা যাওয়ার পর কয়েকবার মেঘ আজিমপুর কবরস্থানে ছুটে গেছে। একই জায়গায় ওর মা-বাবা, নানি ও খালা ঘুমিয়ে আছে। রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড ৯-এ পড়ছে মেঘ। সাংবাদিক ফারজানা রূপা মেঘের স্কুলে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে মেঘ বলছিল, "আমার নানি ছিলেন ক্রিকেটর খুবই ভক্ত। ইন্ডিয়ার আইপিএলের নিলামের সময় নানি স্বপ্ন দেখতেন আমিও একদিন অত টাকার নিলামে খেলব। মূলত নানির উৎসাহেই আমি ক্রিকেটকে ভালোবেসেছি। এখন আমার মূল লক্ষ্য জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলা। যেভাবে চলছে, আমি আশা করি অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতে পারব। অনুর্ধ্ব-১৪ দলে প্রায় চান্স পেয়েই গিয়েছিলাম। চার ধাপে সেখানে পরীক্ষা দিতে হয়। চতুর্থ ধাপের শেষ মুহুর্তে আমি বাদ পড়েছি। আসলে অনেক বেশি নার্ভাস থাকার কারণে ভালো করতে পারিনি। প্রথম ম্যাচটা খারাপ করলেও পরের দু'টি ম্যাচ ভালো করেছি।”

নওশের রোমান

বিসিবির ইয়ুথ টাইগার অনূর্ধ্ব-১৬ জোনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট তিনটি ম্যাচ খেলার কথা ছিল মেঘের। প্রথমটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি বুধবার সে খেলেছে। আর শেষ ম্যাচটি ছিল শুক্রবার। এদিন মেঘের বাবা-মায়ের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। তাই ম্যাচটি না খেলেই ঢাকায় ফিরে এসেছে মেঘ। মেঘ অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং করে। তবে বোলিংটা একটু বেশি পছন্দ তার। মেঘ বলছিল, "আমি যদি টানা এক বছর অনুশীলন করতে পারি তাহলে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে তো খেলতে পারবোই। তারপর জাতীয় দলেও খেলতে পরাবো ইনশাল্লাহ”।

সাকিব, মাশরাফী ও মুস্তাফিজ প্রিয় তারকা মেঘের। তাদের তিনজনের খেলাই ভালো লাগে। তাদের মতোই একদিন জাতীয় দলে খেলে দেশের জন্য অবদান রাখার স্বপ্ন নিয়েই মেঘ এখন ক্রিকেট শিখছে শেখ জামাল ধানমন্ডি কাবের একাডেমিতে।

সাকিবকে নিয়ে মেঘ বলছিল, "আমি সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে চাই। আমি চাই সাকিব যেভাবে ক্রিকেট খেলে সুনাম অর্জন করেছেন এবং দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন সে রকম খেলতে। আমি সব সময় সাকিবের খেলা অনুসরণ করি।” তবে সাকিব স্পিন আর মেঘ পেস বল করে। ব্যাটিং বা বোলিং- দু'টোকেই সমান গুরুত্ব দেয় মেঘ। প্রথমদিকে ইন্দিরা ক্রিকেট একাডেমীতে অনুশীলন করলেও এখন শেখ জামাল ধানমন্ডি কাবের একাডেমিতে অনুশীলন করে মেঘ। এখানে দেশি-বিদেশি নামকরা কোচেরা প্রশিক্ষণ দেন।

খেলার বাইরে কীভাবে সময় কাটে মেঘের? জানতে চাইলে নওশের রোমান বলেন, "পড়াশোনাতে মনোযোগের কোন ঘাটতি নেই। এর বাইরে যে সময়টা ও পায় তার পুরোটাই ক্রিকেট নিয়ে থাকে। ফিটনেস নিয়ে থাকে। করোনার মধ্যে যখন কেউ ঘর থেকে বের হতে পারে না, তখনও বাড়িতেই নিয়মিত ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করেছে সে। আসলে স্কুল, ক্রিকেট প্র্যাকটিস করে আর সময় থাকে না। এভাবেই বড় হচ্ছে মেঘ।”

বাবা-মায়ের কথা কী ওর মনে পড়ে? জবাবে নওশের রোমান বলেন, "প্রথমদিকে কিছু জানতে চাইলেও এখন আর ওভাবে কিছু জানতে চায় না। তবে কিছু কিছু শব্দ ওকে ভাবাচ্ছে। যেমন ধরেন ‘ধামাচাপা"। সেদিন আমার কাছে ও জানতে চাইল মামা ধামাচাপাটা কী? এই ধরনের কিছু শব্দ ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সবসময় আমরা ওকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি। হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করি। পাশাপাশি আবদারগুলোকে খুবই গুরুত্ব দেই।”