জাতিসংঘে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সংঘাত
২৫ এপ্রিল ২০২৩আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়ার দিনকাল ভালো যাচ্ছে না৷ সশরীরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থিত হতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন ভূখণ্ডে পা রাখতে শেষ মুহূর্তে ছাড়পত্র পান তিনি৷ রুশ সাংবাদিকরা অবশ্য ভিসা না পাওয়ায় প্রতিনিধিদলের অংশ হতে পারেন নি৷ তার উপর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেশ লাভরভের পাশে বসে সরাসরি ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার কড়া নিন্দা করেন৷ তিনি বলেন, এই হামলার ফলে ইউক্রেনের মানুষের দুর্দশা ও ধ্বংসলীলা চলছে এবং করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিভ্রাটের আরও অবনতি ঘটছে৷ গুতেরেস বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে বলেন, প্রধান শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে৷ ফলে বেপরোয়া পদক্ষেপ বা ভুল হিসেবের কারণে সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেন, সম্ভবত শীতল যুদ্ধের তুলনায় আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ মাল্টিল্যাটারিজম বা বহুপক্ষীয়তাবাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে ‘সংখ্যালঘু' হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, সত্যি কথা হলো কেউ তাদের মানবজাতির হয়ে কথা বলার অধিকার দেয় নি৷
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড লাভরভের ভাষণ সম্পর্কে তীর্যক মন্তব্য করে বলেন, ‘আজকের সভার ভণ্ড আহ্বায়ক' হিসেবে রাশিয়া তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে জাতিসংঘের সনদের মূলে আঘাত করেছে৷ বেআইনি, প্ররোচনাহীন ও অপ্রয়োজনীয় এই যুদ্ধ সবচেয়ে পবিত্র নীতির বিরোধী৷ তিনি বলেন, আগ্রাসনের লক্ষ্যে যুদ্ধ ও জমি দখল কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে৷
জাতিসংঘে উভয় পক্ষের প্রবল বাকযুদ্ধ সত্ত্বেও আগামী ১৮ই মে-র পরেও কৃষ্ণ সাগর হয়ে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব সেই ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন৷ তিনি আরও এক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া থেকেও খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি সহজ করার ক্ষেত্রে সহায়তার অঙ্গীকার করেন৷ রাশিয়া অবশ্য সার রপ্তানি সংক্রান্ত বোঝাপড়া ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে৷ গুতেরেশের মতে, বৃহত্তর নিরাপত্তা ও সবার সমৃদ্ধির স্বার্থে এমন সহযোগিতা যে অপরিহার্য, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷
রাশিয়া অবশ্য এখনো ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি সংক্রান্ত বোঝাপড়া শেষ করার হুমকি দিয়ে চলেছে৷ সোমবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উলটে ইউক্রেনের সরকারকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে৷ কিয়েভের প্রশাসনের ‘সন্ত্রাসী হামলা'-র কারণে খাদ্যশস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়োনার উদ্যোগকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে৷ গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের উপর ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে মস্কো৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)