উদ্বাস্তু সংকট নিয়ে চিন্তাভাবনা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫জি-সেভেন গোষ্ঠী – অর্থাৎ ব্রিটেন, ক্যানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – এবং সেই সঙ্গে অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুউডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীবর্গ তাদের যৌথ বৈঠকে ইউএন এজেন্সিগুলিকে এক দশমিক ৮ বিলিয়ন অর্থসাহায্য দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর মধ্যে জার্মানি দেবে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বা ১১৩ মিলিয়ন ডলার৷ জাতিসংঘ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ছ'কোটি উদ্বাস্তুকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে: এই উদ্বাস্তুরা বিভিন্ন সংঘাত থেকে পালাতে চায়; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি যাবৎ এত বেশি মানুষ বাস্তু ছেড়ে পলায়ন করেননি৷
জি সেভেন ও অন্যান্যদের প্রতিশ্রুতি মোটামুটি তাদের পূর্বপ্রদত্ত প্রতিশ্রুতির অনুরূপ৷ অপরদিকে জাপান যে পৃথকভাবে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন সাহায্য দেবার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে, তা থেকে বোঝা যায়, মধ্যপ্রাচ্য তথা ইউরোপের উদ্বাস্তু সংকট এখন বৈশ্বিক মঞ্চে উন্নীত হয়েছে৷ জাপানের অর্থসাহায্যের অর্ধেকের কিছু বেশি ব্যয় হবে সিরিয়া ও ইরাকের অভ্যন্তরে এবং ঐ দু'টি দেশ থেকে পলায়নপর উদ্বাস্তুদের কল্যাণে; বাকি অর্ধেক যাবে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় শান্তি আনয়নে৷
মনে রাখা দরকার, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন নিউ ইয়র্কে সাধারণ সম্মেলনের বৈঠক শুরুই করেছিলেন এই বলে যে, জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলি বস্তুত ‘‘দেউলিয়া''৷ জাতিসংঘ এ বছর এ কাজের জন্য মোট ২০ বিলিয়ন ডলার চাইছে, যা কিনা একটা রেকর্ড এবং দশ বছর আগের তুলনায় ছ'গুণ বেশি৷
উদ্বাস্তু সংকটের মূল
ইউরোপের উদ্বাস্তু সংকটের মূল যে কোথায়, তা সকলেরই জানা৷ নতুন হলো, এবার আন্তর্জাতিক কূটনীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেই সত্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে অথবা দিচ্ছে – নয়ত দু'বছর পরে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মধ্যে সিরিয়া – ও সেই সঙ্গে ইউক্রেন – নিয়ে কথোপকথন সম্ভব হতো না – জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনের অবকাশে৷ দু'পক্ষের মনোভাব ও অবস্থানে পার্থক্য থেকে গেলেও, সিরিয়ায় সংঘাতের অবসানের আর কোনো পন্থা দৃশ্যত এ যাবৎ কারো জানা নেই৷
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আজ বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের যে বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করবেন, তার আলোচ্য বিষয় হবে, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি থেকে যে বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে, তার মোকাবিলা করা৷ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর মোকাবিলা করার জন্য আসাদকে রাখা প্রয়োজন, না বিদায় দেওয়া প্রয়োজন, সে'বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন এখানেও সম্ভব হবে, বলে মনে হয় না৷
গ্লোবাল কোটা
হাঙ্গেরি ইতিমধ্যেই ‘ইউরোপের' উদ্বাস্তু সমস্যার একটি ‘বিশ্বায়িত' সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে৷ হাঙ্গেরির বক্তব্য হলো, ইউরোপের পক্ষে সিরিয়া থেকে পলাতক উদ্বাস্তুদের ভার একা বহন করা সম্ভব নয়; এ জন্য বিশ্বব্যাপী ‘কোটা' চালু করা উচিত৷ বিশ্বের সব ‘মেজর প্লেয়ারদের' কিছু ভার বহন করা উচিত, বলেছেন হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেটার সিয়ার্তো৷ তিন লক্ষের বেশি উদ্বাস্তু এ বছর হাঙ্গেরি পৌঁছেছেন৷
কড়াকড়ি
জার্মানিতে উদ্বাস্তুদের আগমনের হার বর্তমানে দিনে প্রায় আট থেকে দশ হাজার৷ কাজেই জার্মানিও এখন তথাকথিত ‘‘অর্থনৈতিক উদ্বাস্তুদের'' জার্মান আসা থেকে নিরস্ত করার চেষ্টা করছে৷ আলবানিয়া, কোসোভো এবং মন্টেনিগ্রোকে এবার ‘নিরাপদ' দেশগুলির পর্যায়ে ফেলা হয়েছে, অর্থাৎ এ সব দেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ সেই সঙ্গে বার্লিন সরকার উদ্বাস্তুদের যে নগদ অর্থ দেওয়া হয়, তা কমাতে চাইছেন, এছাড়া নগদের পরিবর্তে জামাকাপড়, খাবারদাবার ইত্যাদি দেওয়ার কথা ভাবছেন৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, এপি, রয়টার্স)