জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশের দুই কোটি শিশু
২৩ অক্টোবর ২০১৯বন্যা এবং নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবারকে শহরের বস্তিতে গিয়ে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে বসবাস করতে হচ্ছে৷ সেখানে তারা স্বাস্থ্যকর খাবার, শিক্ষা, পর্যাপ্ত স্বাস্থসেবা, স্যানিটেশন এবং নিরাপদ খাবার পানির সংকটে থাকেন৷
এসব বস্তিতে বসবাকারী শিশুরা অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে৷ সেখানে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে, সহিংসতা ছাড়াও শিশুদের উপর বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের শিকার হতে হয়৷
ইউনিসেফের 'দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন ২০১৯, চিলড্রেন, ফুড এবং নিউট্রেশন, গ্রোয়িং ওয়েল ইন এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা ও বন্যায় বাংলাদেশের কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ দেশটির ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কৃষির উপর জীবিকা নির্বাহ করে৷
‘‘এর অর্থ এই যে, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ক্ষুধায় মুখে পড়ার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে৷ খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার দাম বেড়ে যায় এবং দরিদ্র পরিবারগুলোর উপর এর বিরূপ প্রভাব পরে৷''
ইউনিসেফ বলছে, পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতি, অপরিকল্পিত নগরায়নসহ নানাবিধ কারণে শিশুসহ তাদের পরিবারের মধ্যে হেপাটাইটিস এ, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া জ্বরসহ বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে৷
মেঘনা নদী ভেঙে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে রুমানার৷ এরপর স্বামী আলী আকবর, মেয়ে সানজিদা (৩) এবং ছেলে শাহানকে নিয়ে (৯) ঢাকার চলন্তিকা বস্তিতে আসেন তিনি৷ রুমা বলেন, ‘‘যদিও এখানে জীবনধারণের ব্যয় নির্বাহ করতে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে তবুও আমরা একটু শুকনা মাটিতে পা রাখতে পারছি৷
"এখানে আমার স্বামী মাসে প্রায় সাত হাজার টাকা আয় করেন৷ এদিয়ে আমরা বাসা ভাড়া দেই এবং নিত্যপণ্য কিনি৷ এরপর খুব টাকা আর হাতে থাকে না৷ কিন্তু এখানে আমরা উপার্জন করতে পারছি, যা আমরা আমাদের গ্রামে থেকে করতে পারতাম না৷''
পানির উপর বাঁশের খুটি ও কাঠ দিয়ে বানানো একটি ছোট রান্নাঘর অন্য ১০টি পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয় রুমাকে৷ তিনি বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিনই মসুর ডাল দিয়ে ভাত খাই, খুব কম সময় মাছ-মাংস খেতে পারি, ছেলে শাহান অপুষ্টিতে ভুগছে৷
এই বস্তিতে নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যকর টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ এখানে ঠিকমত বিদ্যুৎও থাকে না৷ ইঁদুর আর পোকামাকড়ের যন্ত্রণায় জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে জানিয়ে এনিয়ে খেদ প্রকাশ করেন রুমা৷
বাংলাদেশ সরকার এ বছর জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং অ্যাকশন প্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করতে যাচ্ছে৷ ওই পরিকল্পনায় দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকাদের চাহিদার ভিত্তিতে ক্ষেত্রগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে৷ ছাড়া শিশুপুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশনের মত বিষয়গুলো নিশ্চিতের চেষ্টা করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
এসআই/কেএম