জলপরি নয়, এরা হলো ‘জলপত্নী’
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামে পুরুষরা শুধুমাত্র পানি এনে দেওয়ার জন্য বহুবিবাহ করেন! দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রীর কাজ বাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা করা৷ এরাই হলো ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’৷
একজন পুরুষের তিনজন স্ত্রী
৬৬ বছর বয়সি সাখারাম ভাগতের এখন মোট তিনজন স্ত্রী৷ ওঁদের একজনের নাম সাখরি, পরের জন টুকি এবং তৃতীয় বউ ভাগি৷ ‘‘আমার প্রথম স্ত্রীকে সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়, তাই পানি আনার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করি৷ কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী যখন অসুস্থ হয়ে যায়, তখন পানি আনতে ভীষণ সমস্যা হতো৷ তাই তৃতীয়বার বিয়ে করি আমি’’, বলেন শাখারাম৷
‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর সম্মান
ছবিতে ভাগত তাঁর দুই স্ত্রী ভাগি এবং সাখরিকে নিয়ে পানি আনতে যাচ্ছেন৷ এর জন্য তাঁদের গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়৷ সংসারের প্রয়োজনে যাঁরা এতদূর থেকে পানি বয়ে আনেন, তাঁদের, অর্থাৎ এই ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের গ্রামের মানুষরা কিন্তু খুবই সম্মানের চোখে দেখেন৷
অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ
ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ফেডারেল রাজ্য ‘মহারাষ্ট্রের’ এমনই একটি গ্রামর চিত্র এটি৷ কুয়ার সামনে স্থানীয় এক ‘জলপত্নী’ পানির পাত্র আর কলসিগুলোতো একে একে পানি ঢালছেন৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত বছর ভারতের প্রায় ১৯ হাজার গ্রামে খাবার পানি ছিল না৷
বাঁচার জন্য পানি সঞ্চয়
মহারাষ্ট্রে খরা নতুন কিছু নয়৷ শেষবারের খরার সময় সাখারাম ভাগতের পরিবার জলকষ্টে ভীষণভাবে ভুগেছে৷ তাই আর জলের কষ্ট নয়! পিতলের কলসিগুলোতে আজকাল সব সময়েই যথেষ্ট পরিমাণে পানি ভরে রাখছে ওরা, যাতে আর ভোগান্তি না হয়৷
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ
ভারতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত এ সমস্ত গ্রামে ‘ওয়াটার ওয়াইফ’-এর রীতি বেড়ে চলেছে৷ তবে বেশিরভাগ সময়ই যেসব পুরুষ শুধু পানি আনার জন্য বিয়ে করেন, তাঁরা ‘জলপত্নী’-দের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো এক বিছানায় ঘুমান না৷ ঠিক সেরকমই একটি পরিবারের কর্তা নামদেব৷ তাঁর দুই স্ত্রী শিবারতি (বামে) এবং বাগাবাই৷
মাথায় পানি, কোলে নাতি
নামদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী শিবারতি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথায় পানি বহন করে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে৷ কোলে নাতিটিকেও সঙ্গে নিতে হয়েছে তাঁর৷ ‘ওয়াটার ওয়াইফ’ বা ‘জলপত্নী’-দের জীবন এরকমই৷ তাঁরা এক হয় বিধবা অথবা একক মা৷ আগের পক্ষের সন্তান বা নাতি-নাতনিকে বড় করে তোলার জন্য অনেকক্ষেত্রে একাই অভিভাবকের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁদের৷
সাদা-কালো স্মৃতি চিহ্ন
নামদেবের প্রথম স্ত্রী বাগাবাই৷ তাঁর ঘরের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের পুরনো আমলের সাদা-কালো একটি ছবি৷ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ত্রীর মর্যাদা যে প্রথম স্ত্রীর সমান নয়, দেয়ালের ঠিক মাঝখানে টাঙানো ছবিটি সেটাই বলে দিচ্ছে৷ তারপরও স্বামীকে একেবারে নিজের বলার উপায় আছে কি?