জমে উঠেছে কোরবানিকেন্দ্রিক ব্যবসা
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কোরবানিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজার, হাট, পাড়া-মহল্লায় গরুর খাবারসহ কোরবানির আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদির ব্যবসা জমে উঠেছে৷
ট্রাক পিকআপের চাহিদা তুঙ্গে
ঢাকার বিভিন্ন পশুর হাটে ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি ট্রাক ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে কোরবানির পশু হাটে নিয়ে আসছে৷ আন্তঃজেলা পরিবহণের জন্য বড় ট্রাক এবং ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় পরিবহণের জন্য পিকআপের চাহিদা এখন সারাবছরে সবচেয়ে বেশি৷ তবে চালকদের অভিযোগ, বিভিন্ন চাঁদা দেওয়ার পর তাদের হাতে তেমন কিছুই আর থাকে না৷
মোবাইলে আর্থিক লেনদেন
কোরবানিকে কেন্দ্র করে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন মোবাইল আর্থিক পরিষেবার লেনদেন বেড়ে যায় বহুগুণ৷ সংশ্লিষ্টরা জানান, যেহেতু কোরবানি ঈদে প্রচুর নগদ টাকার লেনদেন হয়, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা এখন ক্যাশলেস পদ্ধতি আর্থিক লেনদেন করতেই বেশি আগ্রহী৷
গবাদিপশুর খাবার
ঢাকার একাধিক হাট ঘুরে দেখা যায়, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন পরিবহণে করে গবাদিপশুর খাবার আসছে৷ ব্যবসায়ীরা জানান, আঁটিপ্রতি শুকনা খড় ২০ টাকা ও ঘাস ১৫০ টাকা, কেজিপ্রতি ধানের তুষ ৩০ টাকা, গমের ভূষি ৬০ টাকা, বুটের ছাল ৮০ টাকা, লবণ ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা৷ তবে চাহিদা বাড়লে দামও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা৷
পশু সাজানোর উপকরণ
সারাবছর তেমন ব্যবসা করতে না হলেও কোরবানি ঈদের মৌসুমে পশু সাজানো উপকরণের ব্যবসা জমজমাট থাকে বলে জানান গাবতলি হাটের মৌসুমি মালা বিক্রেতা মোঃ কবির হোসেন৷ মালার দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ঝুনঝুনি মালা প্রতি পিস ২০০ টাকা, নূপুর জোড়া ৫০০ টাকা, দড়ি ৫০ টাকা, চুমকি ৫০ টাকা, গলার মালা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি৷’’
ডিপ ফ্রিজের চাহিদা বেশি
কোরবানির ঈদে ফ্রিজের চাহিদা অনেকগুণে বেড়ে যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷ ঢাকার শেওড়াপাড়ার ওয়াল্টন শোরুমের বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ সাঈদুর রহমান বলেন, ‘‘ভার্টিকাল ফ্রিজের চেয়ে ডিপ ফ্রিজের চাহিদা ঈদুল ফিতরে কিছুটা বেশি৷ তবে সকল পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফ্রিজের দামও কিছুটা বেড়েছে বিধায় মধ্যবিত্তরা এখন সাশ্রয়ী ও ছোট ফ্রিজ কেনাতে বেশি আগ্রহী৷’’
মশলার বাজারে আগুন
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বিভিন্ন মশলার দাম৷ আদা, শুকনা মরিচ, জিরা, হলুদ, ধনিয়া, লবঙ্গ, পিঁয়াজ, রসুন, দারুচিনির দাম ৩০ শতাংশ থেকে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা৷
চামড়া শিল্পে বড় জোগান আসে ঈদুল ফিতরে
ঢাকার ট্যানারি মোড়, সাভার ট্যানারি পল্লী, হাজারিবাগ ঘুরে দেখা যায়, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তাঁদের ব্যস্ততা অনেকগুনে বেড়েছে৷ তারা বলেন, ‘‘দেশে চামড়াশিল্পের জোগানের সিংহভাগ আসে ঈদুল ফিতরের কোরবানির পশু থেকে৷ তাই আগেভাগেই তারা এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন৷’’
ব্যক্তিগত খামারের পশুর চাহিদা বাড়ছে
করোনা মহামারির পর থেকে অনলাইনে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে গড়ে উঠা খামারের পশুর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ অনেকেই কোরবানিকে সামনে রেখে সারাবছর বিভিন্ন জাতের গরু মোটাতাজা করেন এবং সেগুলো বিক্রি করেন৷ ঢাকার খিলগাঁওয়ে ছাদখামার এভোক এগ্রোর মালিক কাজী মশিউর রহমান বলেন, ‘‘ঈদকে সামনে রেখে আমরা সীমিত পরিসরে গরু লালনপালন করে থাকি৷ কোরবানির ঈদে ব্যক্তিগত খামারের পশুর চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷’’
খাটিয়া ও চাটাইয়ের কদর শুধু কোরবানিতেই
ঢাকার শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে কোরবানি পশু কাটার জন্য কাঠের গুঁড়ি এবং বাঁশের চাটাই নিয়ে বসেছেন হাবিবুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবছর কোরবানিতে তিনি এই দুই আইটেমের ব্যবসা করেন৷ খাটিয়া ও চাটাইয়ের আকারভেদে দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে৷’’