চোখের রেটিনা বলে দেবে আলসহাইমারের লক্ষণ
১৮ এপ্রিল ২০১১তাদের আশঙ্কা যে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দুই কি তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে৷ তাই এই রোগ প্রতিরোধে কী করা যায়, সেটা নিয়ে দিনরাত গবেষণা করে যাচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা৷
রোগের লক্ষণ ও ফলাফল
তবে তার আগে এই রোগ সম্পর্কে কিছু বলে নিই৷ সাধারণভাবে বলতে গেলে, স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলাটাকে আমরা আলসহাইমার বলে জানি৷ অনেকে একে স্মৃতিভ্রষ্টতা বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ মানুষের শরীরের স্নায়ু কোষে থাকা বেটা অ্যামিলয়েড এবং টাউ প্রোটিন এদিক সেদিক হয়ে গেলেই মানুষ আলসহাইমারে আক্রান্ত হয়৷ এর ফলে দেহের স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কোষগুলোর একে অপরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত হয়৷
উল্লেখ্য, মানুষের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল করটেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস অংশটি চিন্তা করতে এবং কোন কিছু শিখতে এবং চিনতে সাহায্য করে৷ কিন্তু স্নায়ু কোষের ক্ষতির ফলে যা হয় তা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিটির মস্তিষ্কের এই অংশগুলো আর ঠিকমত কাজ করতে পারে না৷ মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে যেতে শুরু করে এবং তার আকারও কমতে থাকে৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে ভয়াবহ আলসহাইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের আকার শতকরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়৷
আলসহাইমারে আক্রান্ত হলে একজন মানুষের স্মৃতি শক্তি কমে যেতে শুরু করে৷ প্রাথমিকভাবে তার শেখার ক্ষমতা কমে যায়৷ সাধারণত মানুষের ১৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে এই আলামত বুঝতে৷ এর পরবর্তী পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি সহজে কোন কিছু মনে করতে কিংবা চিন্তা করতে পারে না৷ কোন কথা গুছিয়ে বলতেও তার সমস্যা হয়৷ আলসহাইমারের এই পর্যায়ে এসে মানুষের আচার আচরণও বদলে যেতে থাকে৷ তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে মানুষ তার আশেপাশের কাউকে সহজে চিনতে পারে না এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে৷ এমনকি স্থান কিংবা সময়জ্ঞানও তারা হারিয়ে ফেলে৷ নিজের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মানুষ এবং এভাবেই তার দিন কাটতে থাকে৷
বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা
আলসহাইমার রোগের বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখনও তেমন সাফল্য দেখাতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা৷ কোন আলামতটি মস্তিষ্কের স্মৃতিভ্রষ্টতা আর কোনটা দ্বিধাগ্রস্ততা তার পার্থক্য করতে করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়৷ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স টোমোগ্রাফ কিংবা নিউক্লিয়ার মেডিসিন প্রয়োগ করে এই রোগ নির্ণয় করা যায়, কিন্তু ততদিনে মস্তিষ্কের এক তৃতীয়াংশ কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই আগে থেকেই এই রোগ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা চলছে৷
আর এই ক্ষেত্রে নতুন এক ধারণা দিয়েছেন জার্মানির বিজ্ঞানী ইয়খেন হ্যার্মস৷ মস্তিষ্ককে নয় বরং চোখকে পর্যবেক্ষণ করেই আলসহাইমার রোগের লক্ষণ আগে থেকে ধরার একটি উপায় বাতলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন এই জার্মান বিজ্ঞানী৷ আর যদি এটি সম্ভব হয়, তাহলে বহু আলসহাইমার রোগী তার দুরবস্থা থেকে বেঁচে যেতে পারবে৷
চোখের রেটিনা পর্যবেক্ষণ
জার্মানির মিউনিখের ইন্সটিটিউট ফর নিউরোপ্যাথলজি-তে ইয়খেন হ্যার্মস এর নেতৃত্বে ২০ জন গবেষক এখন এই নিয়েই কাজ করে চলেছেন৷ তাঁরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান৷ প্রথমে তাঁরা একটি ইঁদুরের মস্তিষ্ক স্ক্যান করেন, এরপর ইঁদুরের রেটিনাকে বিশেষ ধরণের একটি স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করেন৷ হ্যার্মস এর মতে, আলসহাইমার রোগীর মস্তিষ্কে যেসব পরিবর্তন ঘটে চলে তার একটি ছাপ পড়ে চোখের রেটিনাতেও৷ তাই চোখের রেটিনায় কী ধরণের পরিবর্তন ঘটে চলেছে তা যদি আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে আলসহাইমারকেও নির্ণয় করা সম্ভব হবে৷ বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে মানুষের ওপরও এই ধরনের একটি পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে স্নায়ুকোষে যদি কোন পরিবর্তন ঘটে তাহলে সেটা রেটিনাতে এসে শেষ হয়৷ আর চোখের রেটিনাও মস্তিষ্কেরই একটি অংশ৷
আলসহাইমার নিয়ে জার্মান বিজ্ঞানীদের এই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে তিন বছর, যা শেষ হবে এই বছরের শেষ নাগাদ৷ প্রায় চার মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আশার সঞ্চার হয়েছে৷ ইয়খেন হ্যার্মসের ধারণা সঠিক হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হয়তো তা একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন