মোদী আমলে ভারত-চীন সম্পর্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪চীনের প্রেসিডন্ট শি জিনপিং প্রথমে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে৷ তিনি আসছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর প্রথম জন্মদিনে, অর্থাৎ ১৭ই সেপ্টেম্বরে৷ সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন মোদী স্বয়ং৷ সঙ্গে আসছেন চীনের শীর্ষ স্থানীয় কূটনৈতিক ও বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনৈতিক কর্তা-ব্যক্তিরা৷ বেজিং ছাড়ার আগে চীন সরকারের তরফে বলা হয়েছে প্রেসিডেন্টের ভারত সফর বিশ্বকে দেবে এক ইতিবাচক বার্তা৷ দু'দেশের সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নেই সহায়ক হবে না, গোটা এশিয়া তাতে উপকৃত হবে৷
এশিয়ার দুটি শক্তিশালী দেশের শীর্ষ বৈঠক যাতে সফল হয়, তার জন্য উভয় দেশ সচেষ্ট৷ পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে ভারতের তরফে যে, অর্থনৈতিক বিষয় আলোচনার শীর্ষে থাকলেও সীমান্ত সমস্যা, ভারতের সীমান্তে চীনা অনুপ্রবেশের মতো কৌশলগত ইস্যুগুলিও বৈঠকে উঠবে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ভারত যেমন ‘এক ও অখণ্ড' চীন নীতিতে বিশ্বাসী, তেমনি চীনকেও মনে রাখতে হবে ভারতের অখণ্ডতা৷ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল প্রদেশ ভারতের এমন একটি অঙ্গরাজ্য যার, চূড়ান্ত ভৌগলিক সীমা চিহ্নিতকরণ আজও অমিংমাসিত৷ এটাই ভারত-চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের বড় কাঁটা হয়ে আছে৷ এছাড়া অরুণাচল ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জন্য চীনের ‘স্টেপল' ভিসা, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অতি সক্রিয়তার প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠতে পারে৷
উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে স্বাধীন তিব্বত ও ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ম্যাক মোহন লাইন' স্বীকার করে না চীন৷ মানতে চায় না তিব্বত এক সময়ে স্বাধীন দেশ ছিল৷ ১৯৫০-এর দশকে মাও সে তুং চীন দখল করে৷ তিব্বতের সর্বময় ধর্মীয় গুরু দালাই লামা পালিয়ে আসেন ভারতে৷ গঠন করেন নির্বাসিত তিব্বতি সরকার, যার সদর দপ্তর হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায়৷ মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নির্বসিত তিব্বতি সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোয় বেজিং ক্ষুব্ধ হয়৷ সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে এবং সৌহার্দের বাতাবরণ বজায় রাখতে ঐ সময়ে দলাই লামার ডাকা একটি ধর্মীয় সভা পিছিয়ে দেবার অনুরোধ করেছে মোদী সরকার৷ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে চীনের প্রেসিডেন্টের দিল্লিতে থাকাকালীন তিব্বতিদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ওপর৷ স্মরণ করা যেতে পারে, বছর তিনেক আগে দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চীনের বিশেষ কূটনৈতিক প্রতিনিধি দাই বিনগুয়ো তাঁর দিল্লি সফর বাতিল করেছিলেন ঐ সময়ে দিল্লিতে বিশ্ব বৌদ্ধ শীর্ষ সম্মেলন বসার কারণে৷
ভারত-চীন শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু দু'দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা৷ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে একটা ভারসাম্য আনা মোদীর পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে৷
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, জাপানকে পেছনে ফেলতে চীন হয়ত ১,০০০কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে যারমধ্যে আছে পরিকাঠামো, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে শিল্প পার্ক এবং রেলওয়ের আধুনিকীকরণ৷ জাপানের মতো ভারতে বুলেট ট্রেনসহ উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেন এবং সেজন্য রেললাইনের সংস্কার ইত্যাদি৷ চীনের বুলেট ট্রেনের জন্য চেন্নাই-ব্যাঙ্গালোর কিংবা ব্যাঙ্গালোর-মুম্বই রুট নির্দ্রিষ্ট করা হতে পারে, বলছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা৷ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে মোদীর ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া' নীতির সূত্র ধরে ভারতে কারখানা তৈরির জন্য চীনকে বলা হবে৷ উৎপাদন হবে ভারতে৷ ভারতের বিশাল বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সেইসব পণ্য অন্যদেশেও রপ্তানি করা য়েতে পারে৷ তবে এই সফরের সাফল্যের মাপকাঠি হবে দু'দেশের মধ্যে আস্থার ঘাটতি দূর করার ওপর৷