1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাষে অনাগ্রহী সিঙ্গুর

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ জুলাই ২০১৯

যে সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষার জন্য একদিন আন্দোলন করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি, সেই সিঙ্গুরেরই আজ কৃষিকাজে মন নেই৷ বিধানসভায় নিজেই স্বীকার করেছেন মমতা৷

https://p.dw.com/p/3M8BU
West Bengal Chef-Ministerin Mamata Bannerjee
ছবি: UNI

বিরোধী নেত্রী মমতা ব্যানার্জির রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে পৌঁছনোর যে রাজনৈতিক উত্থান, তার শেষ ধাপ ছিল সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের আন্দোলন৷ শুরুটা হয়েছিল হুগলি জেলার সিঙ্গুরে৷ টাটা শিল্পগোষ্ঠী তাদের ছোট গাড়ি ‘‌ন্যানো'‌তৈরির কারখানা করবে বলে যে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার, তা মুক্ত করার দাবিতে৷ সিঙ্গুরে তৈরি হয়েছিল কৃষিজমি, জীবন ও জীবিকা বাঁচাও কমিটি৷ মমতা ব্যানার্জি পণ করেছিলেন, কিছুতেই দো–ফসলি, তিন–ফসলি কৃষিজমি কারখানার জন্যে নিতে দেবেন না৷
কিন্তু প্রায় এক দশক পর, সিঙ্গুরের অধিগৃহিত জমির এক বড় অংশ কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও চাষ হচ্ছে না সিঙ্গুরে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেই রাজ্য বিধানসভায় সম্প্রতি জানিয়েছেন, সিঙ্গুরে মোট ৯৯৭ একর জমির মধ্যে ৯৫৫.৯০ একর জমি ফেরত দেওয়া হয়েছে৷ তার ৬৪১ একর জমিতে চাষ শুরু হয়েছিল৷ কিন্তু পরের বছরই কমে যায় চাষের পরিমাণ৷ ২০১৮–১৯ সালে সিঙ্গুরে ৭৯২ জন কৃষক চাষ করেছেন মাত্র ২৬০ একর জমিতে৷ অনেকেই চাষ করা ছেড়ে দিয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, তাঁর সরকার জমি ফিরিয়ে দিয়েছে৷ চাষের সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে৷ কিন্তু কৃষকরা চাষ করবেন কি না, সেটা তাঁদের ব্যাপার৷ সরকার সেক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে চায় না৷

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বছরে ৩০ হাজার টাকা ভাতার বন্দোবস্ত করেছিল রাজ্য সরকার:রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

সিঙ্গুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক এবং সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম মুখ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আরও কিছু বাড়তি তথ্য দিলেন ডয়চে ভেলে–কে৷ তিনি জানাচ্ছেন, টাটাদের কারখানার জন্যে অধিগৃহিত জমির কিছুটা অংশ জলা জমি ছিল৷ আগেও সেখানে চাষ হতো না, এখনও হয় না৷ বাকি জমির একটা অংশে মাটির ভেতরে কারখানার জন্যে তৈরি করা কংক্রিটের ভিত এখনও রয়ে গেছে৷ মাটি খুঁড়ে সেটা বের না করে দিলে ওই জায়গার জমিও চাষ করা যাবে না৷ এবং সেটা কৃষক, বা সমবায়, কিংবা পঞ্চায়েত বা জেলা প্রশাসনের পক্ষে করা সম্ভব নয়৷ একাজে সরকারের সাহায্য লাগবেই৷ পুরো জমি উদ্ধার করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে৷
তবে সিঙ্গুরের বিধায়ক আরও একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করলেন৷ জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাসে ১৬ কেজি করে চাল এবং ২০০০ টাকা ভাতা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল রাজ্য সরকার৷ অর্থাৎ বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা৷ এবং সেটাও বিনা পরিশ্রমে৷ কৃষকদের একাংশ তাই মনে করছেন, তাঁদের জমি চাষের অযোগ্য হয়ে থাকলেই আখেরে লাভ বেশি৷ বিশেষত যে ছোট কৃষকের হয়ত ১০ কাঠা জমি, তিনি চাষ করে, ফসল ফলিয়ে কিছুতেই বছরে অত টাকা উপার্জন করতে পারতেন না৷ কাজেই সরকারি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা চালু রাখা ওই ছোট কৃষকদের কাছে অনেক বেশি লাভজনক৷
এর পাশাপাশি সিঙ্গুরের কৃষক পরিবারের ছেলেদের অন্য পেশায় চলে যাওয়ার প্রবণতাও আছে৷ যা
মনে পড়িয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একটি মন্তব্য৷ সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানা তৈরির সপক্ষে বুদ্ধদেবের অন্যতম জোরাল যুক্তি ছিল— কৃষকের ছেলে আর কৃষক হতে নাও চাইতে পারে৷ তাঁদের সেই উচ্চাশার কথাও সরকারকে ভাবতে হবে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান