চাপের মুখে সংশোধনী মেনে নিলেন জনসন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০দেশে-বিদেশে কড়া সমালোচনা সত্ত্বেও ব্রেক্সিট চুক্তির শর্ত ভেঙে আইন প্রণয়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ তবে নিজের দলের মধ্যে অসন্তোষ দূর করতে তিনি সেই আইনের খসড়ায় একটি পরিবর্তন মেনে নিতে রাজি হয়েছেন৷ টোরি দলের দুই সংসদ সদস্যের উদ্যোগে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করে আগামী সপ্তাহে সংসদে ভোটাভুটি হবে৷ সে ক্ষেত্রে বিতর্কিত আইন প্রণয়নের পথে বাধা দূর হবে বলে জনসন আশা করছেন৷ সংশোধনীর উদ্যোক্তা বব নেইল ও ডেমিয়ান গ্রিন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে সরকার শেষ উপায় হিসেবে বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের বাকি অংশের তুলনায় উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশে শুল্কের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম চালু করা হতে পারে৷ স্বেচ্ছায় সেই চুক্তি স্বাক্ষর করেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে সেই ধারা বাতিল করে দেশের অখণ্ডতার স্বার্থে এক ‘সেফটি নেট’ নিশ্চিত করতে চান৷ এমনটা করলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হবে জেনেও তিনি নিজের অবস্থানে অটল রয়েছেন৷ এবার সংশোধনীর মাধ্যমে উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশের সঙ্গে ইইউ-র স্থলসীমায় চেকপয়েন্ট বা নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা দূর করা হবে৷ ফলে মানুষ ও ব্যবসাবাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মনে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে৷
বিরোধী পক্ষ অবশ্য এমন সংশোধনী সত্ত্বেও সন্তুষ্ট নয়৷ লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ড বলেন, এমন রদবদল সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে ব্রিটেনের ভাবমূর্তির ক্ষতি এড়ানো যাবে না৷ এক টুইট বার্তায় তিনি মনে করিয়ে দেন, যে ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হবার পর সরকার ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটি পালন করা প্রয়োজন৷
প্রধানমন্ত্রী জনসন বুধবার বলেন, বছরের শেষে ব্রিটেন ও ইইউ চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে পারবে বলে তাঁর মনে সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে৷ তবে দুই পক্ষ অক্টোবর মাসের মধ্যেই সেই চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেও জনসনের প্রস্তাবিত আইনের কারণে ইইউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পাশাপাশি ব্রিটেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের ইঙ্গিতও দিয়েছে ব্রাসেলস৷
সংসদের এক কমিটির দুই ঘণ্টারও বেশি জেরার মুখে জনসন আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বলেন, শেষ পর্যন্ত ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্ভব না হলে সেই রাষ্ট্রজোট বাড়তি শুল্ক চাপিয়ে ব্রিটেনের ভূখণ্ড থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে খাদ্য ও কৃষিপণ্য ‘অবরোধ’ করতে পারে৷ তাঁর দাবি, ইইউ কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তবে এ ক্ষেত্রে তাঁর ভুল হতে পারে বলে জনসন স্বীকার করেন৷ হয়তো ইইউ শেষ পর্যন্ত এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না৷ তবে কোনো চরম পরিস্থিতি এড়াতে বিমা হিসেবে তিনি নতুন আইন প্রণয়ন করতে চান, বলেন জনসন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নও প্রস্তাবিত সংশোধনী সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি৷ ইইউ শুরু থেকেই প্রস্তাবিত আইনের খসড়া পুরোপুরি বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছে৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, একতরফাভাবে বিচ্ছেদ চুক্তি রদবদল, অমান্য বা ভুল প্রয়োগ করা যায় না৷ তিনি প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘ব্রিটেন চুক্তি ভাঙে না৷’’
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)
গতবছরের জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...