চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়
চলে গেলেন সুরের সম্রাজ্ঞী, ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর৷ সাত দশক ধরে ভক্তদের কণ্ঠের জাদুতে মোহন করে রেখেছিলেন৷ মধুবালা থেকে কাজল পর্যন্ত শত নায়িকার ঠোঁটে শোনা যায় তাঁর গান৷ তার বিদায়ে বিষাদেও মনে পড়ে মধুর সব গান৷
চিরবিদায় ‘নাইটিঙ্গেল অফ বলিউড’
ভারতের গণমাধ্যমগুলো জানায়, চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এ শিল্পী৷ সম্প্রতি তার অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল৷ কিন্তু শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২) হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে৷ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১২ মিনিটে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷
জন্ম
১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে একটি মারাঠি পরিবারে জন্ম লতা মঙ্গেশকরের৷ বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী এবং মঞ্চ অভিনেতা৷ বাবার কাছে হাতেখড়ি হওয়ার পর ওস্তাদ আমানত আলী খাঁ সাহেবের কাছে সংগীত শিক্ষা হয় তাঁর৷
প্লেব্যাক জীবনের শুরু
১৯৪৩ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে মারাঠি ছবি গজবহুর মাধ্যমে প্লেব্যাক জীবনের শুরু তাঁর৷ এরপর ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি৷
বাংলা গান গাওয়া
১৯৫৯ সালে সলিল চৌধুরীর পরিচালনায় প্রথম বাংলা গানে কণ্ঠ দেন লতা মঙ্গেশকর৷ গানটি ছিল ‘না যেওনা, রজনী এখনো বাকি৷’ সলিল চৌধুরীর সুরে এরপর অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তিনি৷ তাঁর গাওয়া রঙ্গিলা বাঁশিতে, ও মোর ময়না গো, সাত ভাই চম্পা – এই গানগুলি এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে৷
মধুবালা থেকে প্রীতি জিনতা
২০ বছর বয়সে মহল ছবিতে যিনি মধুবালার জন্য গেয়েছিলেন অমর সেই গান, ‘আয়েগা আনেওয়ালা’, ৪৪ বছর বয়সে ডিম্পল কাপাডিয়ার জন্য তিনি ববি ছবিতে গাইলেন, ‘হাম তুম এক কামরেমে বন্দ হো’, ৬৯ বছর বয়সে একই শিল্পী যব পেয়ার কিসিসে হোতা হ্যায় ছবিতে ডিম্পলের মেয়ে টুইঙ্কেল খান্নার জন্য গাইলেন, ‘মদহোশ দিল কি ধড়কন’, ৭৫ বছর বয়সে বীরজারা ছবিতে প্রীতি জিনতার জন্য অবলীলায় গেয়ে দিলেন, ‘তেরে লিয়ে হাম জিয়ে!’
আশা ভোঁসলে
ছোট বোন আশা ভোঁসলে একসময় ছিলেন লতার ছায়াসঙ্গী৷ আশার স্বামী রাহুল দেব বর্মনের পরিচালনায় অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তিনি৷ এগুলোর মধ্যে ‘মেরে ন্যায়না শাওন ভাদো’, ‘বাহো মে চালে আ’ এখনো সবার মুখে মুখে৷
অভিনেত্রী লতা
পুরোদমে সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার আগে এবং পরেও ছবিতে অভিনয় করেছেন লতা মঙ্গেশকর৷ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আটটি এবং তারপর মাত্র একটি গানের দৃশ্যের জন্য একটি ছবিতে৷
পুরস্কার
২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন দেয়া হয় তাঁকে৷ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ৩ বার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার চারবার৷ এছাড়া পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, রাজীব গান্ধী পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি৷
ক্রিকেটের ভক্ত
ক্রিকেটের দারুণ ভক্ত লতা মঙ্গেশকর৷ তাঁর জন্য একটা বিশেষ আসন বরাদ্দ রয়েছে লর্ডসে৷
কেন বিয়ে করলেন না?
জবাবে লতাজী সবসময়ই বলে থাকেন, ‘‘গান গাইতে গাইতে আর সংসারের কথা ভাবতে ভাবতে বিয়ে করার সময়টা পেলাম কই!’’
সঙ্গীত অনুসরণ করে তাঁকে
লতাজীর বন্দনা করতে গিয়ে পরিচালক যশ চোপড়ার বলেছিলেন, ‘সব শিল্পী সংগীতকে অনুসরণ করে, আর সংগীত অনুসরণ করে লতাকে৷’
নেহেরুর কান্না
চীন-ভারত যুদ্ধের সময় এক অনুষ্ঠানে ‘অ্যায় মেরি ওয়াতন কে লোগো’ গানটা শুনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু অঝোরে কেঁদে ফেলেছিলেন৷
বিশ্ব রেকর্ড
১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য তাঁর নাম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ স্থান পায়৷ এ সময় তিনি প্রায় ৩০,০০০ গান রেকর্ড করেছিলেন৷ বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বর্তমানে তাঁর গানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার৷