1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎসব ‘অক্টোবর ফেস্ট’

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জার্মানির মিউনিখ শহরে শুরু হয়েছে এ উৎসব৷ চলবে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত৷ নানা দেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ মাতিয়ে রেখেছেন এখন উৎসব প্রান্তর, পান করছেন বিয়ার, সেই সাথে বাভারিয়ার রকমারি খাবার তো রয়েছেই৷

https://p.dw.com/p/PPSe
ছবি: AP

অক্টোবর উৎসবের দ্বিশতবর্ষ পূর্ণ হল এবছর৷ ১৮১০ সালের ১৭ অক্টোবর তৎকালীন বাভারিয়া রাজ্যের ক্রাউন প্রিন্স লুডভিশের বিয়ে উপলক্ষে এক ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হয়েছিল মিউনিখ শহরে, যা রীতিমত এক উৎসবে পরিণত হয়েছিল সে সময়৷ তার রেশ ধরে পরের বছরও আয়োজন করা হয় এই উৎসবের৷ আশেপাশের গ্রামের কৃষিজীবীরা তাঁদের পণ্য উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়ে যান সেখানে৷

১৮১৯ সাল থেকে বিয়ার, ওয়াইন এবং মুখরোচক রুটি-বিস্কুটের স্ট্যান্ড আকৃষ্ট করতে থাকে দর্শকদের৷ সেই সাথে যোগ হয় নাগরদোলা, চরকিতে চড়ার আনন্দ৷ তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে বিয়ারের তৃষ্ণাটাই প্রাধান্য পেতে থাকে এখানে৷ অক্টোবর উৎসবের শুরুটা এভাবেই৷ ও হ্যাঁ, নামটা অক্টোবর ফেস্ট হলেও নিছক ব্যবসার দিকটাই মাথায় রেখেই সেপ্টেম্বরে শুরু করা হয় উৎসব৷ এই সময়টাতে আবহাওয়া কিছুটা হলেও সদয় থাকবে, দর্শকদের উপস্থিতি বাড়বে, বেঁচাকেনা ভাল চলবে, এই আশা থেকেই উৎসবকে কটা দিন এগিয়ে আনা হয়৷

বরাবরের মত এবারও মিউনিখের মেয়র শনিবার ঠিক রাত বারোটায় বিয়ারের ব্যারেল খুলে উদ্বোধন করলেন অক্টোবর ফেস্ট'এর৷ বিয়ারের প্রথম গ্লাসটি তুলে দিলেন তিনি বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে৷ সেই ভোর থেকেই অপেক্ষা করছিলেন দর্শকরা মূল তাঁবুতে একটুখানি জায়গা পাওয়ার জন্য৷ বিয়ারের উঁচু মূল্যও পিছপা করেনি তাঁদের৷

Deutschland München Oktoberfest 200 Jahre 2010
ছবি: picture alliance/dpa

এবারের অক্টোবর ফেস্টে বিশাল এক মগ বিয়ারের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৯ ইউরো৷ অন্যদিকে শহরের দোকানপাটে বাভারিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক মেয়েদের বিশেষ ধরনের ফ্রক ডির্নডেল ও পুরুষদের হাঁটু অবধি চামড়ার প্যান্টের চলছে রমরমা ব্যবসা৷ এ প্রসঙ্গে কোরিয়া থেকে আসা পোশাক বিক্রেতা আঙ্কে বলেন, ‘‘অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা মানুষরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে এবং এই পোশাক পরে উৎসব চত্বরে যেতে চাইলে আমরা খুশি হই৷''

এই সময় বাভারিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কদর এতটাই বেড়ে যায় যে, মালিকরা শুদ্ধ জার্মান বা অন্যান্য ভাষায় পারদর্শী বিক্রেতাদের নিয়োগ দেন তাঁদের দোকানে৷ কেননা বাভারিয়ার আঞ্চলিক ভাষাটা জার্মানির অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য বোঝা কঠিন৷ ইতোমধ্যে এই বিয়ারফেস্ট এক আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শোতেও পরিণত হয়েছে৷ তবে এই সব শোতে দেখানো অনেক পোশাকের সঙ্গে বাভারিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কোনো মিল নেই৷ বাভারিয়ার মানুষরা অবশ্য তা নিয়ে মাথা ঘামাননা৷ এ প্রসঙ্গে এক দর্শক বলেন, ‘‘এখানে দেখা যাবে কার্নিভালের মত নানা সংস্কৃতির মিশ্রণ৷ বছরের এই সময়টাতে সবাই আনন্দ উল্লাস করে৷ অনেক কিছু আশা করে মানুষ৷''

রঙ্গরস ও বিয়ার পানের ফাঁকে কাছাকাছি এসে যায় অনেকে৷ অন্তরঙ্গ কিছু মুহূর্ত কাটে মনের মানুষটির সাথে, সে যে দেশেরই হোক না কেন৷ এই তো যেমন অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে এক দল তরুণ-তরুণী , সবার পরনে হলদে টি শার্ট৷ তাদের একজন উচ্ছ্বাসভরে জানান, ‘‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার৷ আমরা এই উৎসবে বেশ কয়েকশ জন এসেছি৷ সবাই অস্ট্রেলিয়ার৷''

উৎসবের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিদেশে এই রীতিটা বেশ জনপ্রিয়৷ ৫, ১০ বা ২০ হাজার কিলোমিটার পার হয়ে কোনো জায়গায় দল বেঁধে গেলে সবাই এক ধরনের পোশাক পরে৷ কয়েক মগ বিয়ার পান করার পর দলের লোকজন যাতে হারিয়ে না যায়, এক রকম জামা কাপড় পরার সেটাও হয়তো একটা কারণ৷'' তবে কোন কোন বিদেশি অতিথির কাছে অক্টোবর উৎসবের আসল কথা হল , ‘‘ভাল বিয়ার, আনন্দোৎসব আর মদের নেশায় ডুবে যাওয়া৷''

উল্লেখ্য, বাভারিয়া রাজ্যে পানশালা ও রেস্তোঁরায় ধূমপান নিষিদ্ধ করার পর এই প্রথম অক্টোবর উৎসবের চত্বরও ধোঁয়ার কবল থেকে মুক্ত হল৷ তবে এই রৌদ্রোজ্জ্বল হেমন্তের দিনগুলিতে উৎসবে আসা মানুষদের আনন্দ উল্লাসে ভাটা পড়েনি তাতে৷ আশা করা হচ্ছে এবছর অক্টোবর ফেস্টে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৬০ লক্ষের মত হবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ