1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘুসের অভিযোগ প্রমাণের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বহুল আলোচিত পিকে হালদারের অর্থ পাচারের ঘটনায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার কোটি টাকা ঘুস নেয়ার অভিযোগ উঠে আসছে৷

https://p.dw.com/p/3pUmq
ছবি: Reuters/A. Rahman

পলাতক পিকে হালদারের যে সহযোগীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জবানবন্দিতে ঘুসের বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার ঘুস গ্রহণের অভিযোগ উঠে এসেছে।

আর এ নিয়ে সবেচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর এবং বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। শাহ আলম ঘটনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম ছিলেন আর এসকে সুর ছিলেন নির্বাহী পরিচালক। তারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করছেন। 

‘‘তথ্য পেতে অনেক সময় লাগে’’

পিকে হালদারের অনিয়মের সহযোগী হিসেবে আটক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও পরিদর্শক দল তাদের কাছ থেকে নিয়মিত পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা ঘুস নিতেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমও আছেন বলে দাবি করা হয়।

পিকে হালদারের আরেক সহযোগী এবং পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর অডিটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর এবং জিএম শাহ আলমসহ কয়েকজনকে এক কোটি টাকা করে মোট সাড়ে ৬ কোটি টাকা ঘুস দেয়া হয়েছে।

আটক দুইজনই বলেছেন, পিকে হালাদারের নানা আর্থিক অপকর্ম ঢাকতে কর্মকর্তাদের ওই অর্থ দেয়া হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর। তিনি বলেন, "তারা জবানবন্দিতে যা বলেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। হয়ত তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই তারা এখন এসব কথা বলছে।”  "তারা যে এসব বলছে, তাদের কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?'' এই প্রশ্ন রেখে তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতা ও সুনামের সাথে কাজ করেছি।'' 

‘‘তারা জবানবন্দিতে যা বলেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা’’

আর নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমও ঘুস নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারও দাবি,  পিকে হালদারের ঘটনায় দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই ধৃতরা এসব বলছেন। তিনি বলেন, "তাদের কথায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আছে। আমি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এসেছি। তার আগে তো আমি জুনিয়র অফিসার ছিলাম। আর তারা ২০০৯ সাল থেকে ঘটনার কথা বলছে।”

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম জানান, ‘‘এ পর্যন্ত পিকে হালদাদের ৬-৭ জন সহযোগী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তাতে তারা কী বলেছেন তা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আছে আছে। আমি সংবাদমাধ্যমে ওই জবানবন্দি ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার পিকে হালদারের সাথে আর্থিক লেনদেনের খবর  দেখেছি। আমার কাছে ওই জবানবন্দি পরে আসবে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," আমরা আমাদের তদন্ত করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক কী করবে তা আমি জানি না।''

তদন্তকারী দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসকে সুর এবং শাহ আলম ছাড়াও ব্যাংক ও বাজার বিভাগের আরো কয়েকজনের নাম তাদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। দুদক অধিকতর তদন্তের জন্য ওই জবানবন্দি ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সেই কর্মকর্তাদের তালিকা নিয়েছে। 

‘‘তাদের কথায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আছে’’

বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঘটনায় নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগের দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়েছে। কিন্ত তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে এখনো বহাল আছেন। আর সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর যেহেতু অবসরে তাই তার বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো ভাবনা নেই।  ঘটনা তদন্তে ডেপুটি গভর্নর সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, "এই কমিটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখবে। তবে তাদের কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। কারণ, তথ্য পেতে অনেক সময় লাগে।তারা কী প্রতিবেদন দেন তার ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ।''

দুদকের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন," অভিযোগ প্রমাণ হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম আছে।”