ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের ত্রাণে রাজ্যপাল
১৪ মে ২০২১পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিকহামলা চলছে। সেই সব ঘটনায় বিজেপি কর্মীরা যেমন আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমনই আক্রমণের শিকার বামপন্থি কর্মীরা, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরাও। সোশাল মিডিয়ায় তৎপর বিজেপি শুরু থেকেই এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনাগুলিকে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরে৷ সদ্য নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন চালু করার দাবিও তুলেছে তারা। বিজেপির পক্ষে যারা, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী-সমর্থক, তারা প্রত্যেকেই এই দাবি আরো জোরদার করছেন পরিকল্পিত প্রচারে। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে হিংসাত্মক প্ররোচনা ছড়ানোর দায়েই কঙ্গনা রানাওয়াতের টুইটার অ্যাকাউন্ট চিরকালের জন্য সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও ভোটের পর থেকে অতি তৎপর হয়ে উঠেছেন৷ নতুন সরকার শপথ নেওয়ার আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব এবং পুলিশ কর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে তিনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন; কেন্দ্র থেকে সরেজমিন তদন্তে আসা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; এবং এখন নিজেই বেরিয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের ‘উপদ্রুত' অঞ্চল ঘুরে দেখতে। বৃহস্পতিবার তিনি গিয়েছিলেন কোচবিহার। সেখানে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন, কেন অভিযুক্তদের ধরতে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয়, সে নিয়ে ভর্ৎসনা করেন স্থানীয় পুলিশকর্তাকে। শুক্রবার রাজ্যপাল সরাসরি চলে গিয়েছেন আসামে, যেখানে রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে বাঁচতে ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি এদিন আরেকপ্রস্থ সমালোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সরকার রাজ্যপালের এই সক্রিয়তা এবং কোচবিহারে যাওয়াকে ভালোভাবে নেয়নি। এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাজ্যপালকে রীতিমতো চিঠি দিয়ে, সরকারকে এড়িয়ে তার এই ‘অতি সক্রিয়তায়' অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালও সেই চিঠির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন কঠোর ভাষায়৷ প্রথমে কোচবিহারে, তারপর আসামে দাঁড়িয়েও তার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মমতা ব্যানার্জির সরকারের পাল্টা সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল।
ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা তথাগত রায় মনে করেন, জগদীপ ধনকড় তার সাংবিধানিক এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করছেন না। তার বক্তব্য, ‘‘সংবিধানে লেখা আছে রাজ্য সরকার বা মন্ত্রিসভা রাজ্যপালকে পরামর্শ দেবে। তার মানে এই নয় যে, রাজ্যপাল নিজের রাজ্যে ঘুরতে পারবেন না। নিজের ইচ্ছেমতো কোথাও যেতে পারবেন না।'' তথাগত রায় মানছেন যে, সচরাচর রাজ্যপালেরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না। কিন্তু তিনি কোথাও যেতে পারবেন না, এটা কোথাও লেখা নেই। কাজেই রাজ্যপাল ধনকড়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার যা বলছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য। অতীতেও একাধিক রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের অসদ্ভাব দেখা গেছে, এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না।
কিন্তু রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যপাল ধনকড় কেন বিজেপি কর্মীদেরই সুরক্ষা নিয়েই শুধু উদ্বিগ্ন? সব দলের কর্মীরাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। তাহলে রাজ্যপালের নজর কেন পক্ষপাত দোষে দুষ্ট?