গ্রিসে গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই
২৯ জুন ২০১৫আগামী রবিবার গ্রিসের মানুষ এক গণভোটে অংশ নেবার সুযোগ পাচ্ছেন৷ কিন্তু কোন বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন? আন্তর্জাতিক অর্থদাতারা ব্যয় সংকোচ ও সংস্কারের শর্তে যে আর্থিক প্যাকেজ দিতে চাইছে, তার পক্ষে বা বিপক্ষে? এমন এক প্রশ্নই উদ্ভট ও হাস্যকর৷ কারণ যার অস্তিত্বই নেই, তা নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়? গ্রিস আলোচনা বানচাল করে দেবার পর ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীরা এই প্রস্তাব কার্যত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ এই মুহূর্তে গ্রিস সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েছে এবং দ্রুত রাষ্ট্র হিসেবে দেউলিয়া হবার পথে এগিয়ে চলেছে৷
গ্রিকরা যদি গণভোটে আর্থিক প্যাকেজের পক্ষে রায় দেন, তার ফলে সরাসরি কিছুই ঘটবে না৷ তখন আবার নতুন করে দরকষাকষি করে এক সহায়তা কর্মসূচি স্থির করতে হবে৷ কিন্তু কার সঙ্গে সেটা করা হবে? প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস-এর নেতৃত্বে চরম বাম ও দক্ষিণপন্থি সরকারের সঙ্গে সে পথে এগোনো সম্ভব নয় কারণ তিনি গণভোটে জনগণকে নেতিবাচক ভোট দেবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ যে সরকার সংস্কারের বিপক্ষে, তার পক্ষে সেই সংস্কার বাস্তবায়ন করা কখনোই সম্ভব হবে না৷
ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা
অর্থাৎ গণভোটে ইতিবাচক রায় এলে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং দ্রুত নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু আশঙ্কা হলো, মৌলিক কমিউনিস্ট ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ এই সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখবে৷ গত কয়েক সপ্তাহের ট্র্যাজিক ভুলগুলির পর স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা যে জনগণের কল্যাণের পরোয়া করে না৷ ছলনা করে তারা আলোচনা ভণ্ডুল করে দিয়েছে এবং এখন গণভোটের আড়ালে আশ্রয় নিচ্ছে৷ কয়েক সপ্তাহ আগেই তারা জনগণের রায় নিতে পারতো – দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কার জন্য অপেক্ষা করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না৷
ভোটাররা যদি নেতিবাচক রায় দেন, তখন আর ফেরার কোনো পথ খোলা থাকবে না৷ আন্তর্জাতিক দাতা ও ইউরো গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক স্থায়ীভাবে ছিন্ন হয়ে যাবে৷ প্রধানমন্ত্রী সেটাই চান৷ এর ফলে কার যে লাভ হবে, সেটা একমাত্র তিনিই জানেন৷ কিন্তু এটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে, যে বাইরে থেকে সাহায্য ছাড়া গ্রিস ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে পড়তে বাধ্য৷
অস্ট্রিয়ার অর্থমন্ত্রী হান্স ইয়র্গ শেলিং প্রথম রাজনীতিক হিসেবে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা বলেছেন৷ ইউরো এলাকা থেকে বিদায় অবশ্যম্ভাবী৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ হাল ছেড়ে দিয়েছেন৷ আইএমএফ আর এভাবে গ্রিসকে সাহায্য করতে পারবে না৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো গ্রিসকে সচল রাখতে সাহায্য করছে৷ আর কতকাল সেটা চলবে, তা সম্ভবত আগামী রবিবারই স্পষ্ট হয়ে যাবে৷
গ্রিসই শুধু গণতন্ত্র নয়
গ্রিক প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কে এক টেলিফোন সংলাপে বলেছেন, বেঁচে থাকার জন্য গ্রিসের যথেষ্ট ‘অক্সিজেন' রয়েছে৷ গ্রিস হয়ত আরও একবার কোনোরকমে টাকা-পয়সা জোগাড় করে ৩০শে জুনের মেয়াদ অতিক্রম করে আইএমএফ-কে তার প্রাপ্য অর্থ দিতে পারবে৷ তবে তাতে গ্রিসের দৈন্যদশার কোনো পরিবর্তন হবে না৷ কর বাবদ আয় কমে চলেছে, অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে৷ ঢাকঢোল পিটিয়ে গণভোট করিয়ে অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না৷ আন্তর্জাতিক সহায়তার কাঠামোর মধ্যে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আর্থিক নীতি প্রণয়ন করলে তবেই ফল পাওয়া যাবে৷
গ্রিক সংসদে গণভোট সংক্রান্ত বিতর্কের সময় দাতা ও সামগ্রিকভাবে ইউরোপের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও অপমানজনক মন্তব্য শোনা গেছে৷ সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও উদ্ভট অভিযোগ ছিল, একমাত্র গ্রিসেই নাকি প্রকৃত গণতন্ত্র রয়েছে৷ বাকি সবাই মিলে অগণতান্ত্রিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে৷ অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য দেশেই গণতন্ত্র চালু আছে৷ এবং তারা শুধু গত পাঁচ বছরেই সংহতি দেখায়নি৷ মনে রাখতে হবে, বহু দশক ধরে গ্রিস ইইউ-র মধ্যে তার অবদানের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়ে এসেছে৷
ইউরোপের সঙ্গে, নাকি ইউরোপকে ছাড়া
সিরিসা ও দক্ষিণপন্থি আনেল দল গণতন্ত্র আবিষ্কারও করেনি, গণতন্ত্রের ইজারা নিয়েও তারা বসে নেই৷ ঋণ ও আর্থিক দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা যায় না৷ অর্থাৎ গ্রিকদের বুঝতে হবে, তাঁরা গণভোটে শুধু সাহায্য কর্মসূচির পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দিচ্ছেন না৷ তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক দিকনির্দেশও করতে চলেছেন – হয় ইউরোপের সঙ্গে, কিংবা ইউরোপকে ছাড়াই৷ তাঁরা যদি বামপন্থি ব়্যাডিকাল শক্তি ও তাঁদের বিফল পরীক্ষার পথ বেছে নেন, তখন তাঁদের সেই সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে৷ ইউরোপে কেউ গ্রিকদের পদানত করতে চায় না – যদিও অনেক মহলেই এমন অভিযোগ শোনা যায়৷ তবে মনে রাখতে হবে, শেষ পর্যন্ত তাকেই সাহায্য করা যায় যে সাহায্য নিতে প্রস্তুত৷