গ্রিসের সংকট
১৪ এপ্রিল ২০১২ঋণ ভারে জর্জরিত গ্রিসের জনসাধারণকে এখন সব দিক দিয়েই কৃচ্ছ্রসাধন করতে হচ্ছে৷ অনেকেই হয়ে পড়ছেন বেকার ও গৃহহীন, চিকিত্সাসেবাও তেমন ভাবে পাচ্ছেন না তারা৷ এদেরই এক জন ৪০ বছর বয়স্ক ভাসিলিস৷ এক মাস ধরে গৃহহীন৷ ছয় মাস আগে চাকরি হারিয়েছেন৷ ২৫ বছর কাজ করেছেন ওয়েটার হিসাবে৷ তাঁর মালিক সামাজিক বিমা করিয়ে দেবেন বলে বার বার অঙ্গীকার করলেও সে কথা রাখেননি৷ অবশেষে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ছাটাই-এর কবলেও পড়তে হয়েছে তাঁকে৷ কিছু দিন আগে ফুটানো গরম পানি পড়ে ভাসিলিসের পা ভয়ানক পুড়ে যায়৷ সাথে সাথে চিকিত্সা করা জরুরি হয়ে পড়ে৷ তাই সাহায্যের আশায় ডক্টর্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সংস্থাটির শরণাপন্ন হন তিনি৷ ভাসিলিস জানান, ‘‘এখানে আমি প্রথম শ্রেণির যত্ন -আত্তি পেয়েছি৷ তা না হলে আমার ক্ষতে সংক্রমণ দেখা দিত৷ দুই মাস আসতে হবে এই কেন্দ্রে৷''
গ্রিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ডক্টর্স অব দ্য ওয়ার্লড ২০ বছরেরও বেশি দিন ধরে গ্রিসে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে৷ প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র ক্রিস্টিনা সামার্টজি বলেন, ‘‘আগে শুধু অভিবাসীরা এলেও ২০১০ সালের শেষ দিক থেকে গ্রিক রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এটা একটা নতুন ব্যাপার, যা অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷
ক্রিস্টিনা সামার্টজি আরো জানান, ‘‘এই সংস্থায় সাহায্যের আশায় যে সব গ্রিক আসছেন, তারা হয় বেকার নয়তো প্রবীণ৷ সামান্য পেনশনের অর্থ দিয়ে ওষুধ পত্র কেনা সম্ভব নয় তাদের পক্ষে৷ এ ছাড়া কিছু কিছু পরিবারও আসেন, যারা বাচ্চাদের জন্য টিকার খরচ বহন করতে পারেন না৷''
আর্থিক সংকট প্রকট
অর্থনৈতিক সংকটের দরুণ সামাজিক তহবিল শূন্য৷ এ কারণে চিকিত্সা বিমা থাকলেও ওষুধ পত্র নিজেদেরই কিনতে হয় রোগীদের৷ পরে অবশ্য আংশিক অর্থ ফেরত দেয়া হয়৷ স্বল্প আয়ের মানুষদের'' ওপর এ এক অতিরিক্ত বোঝা৷ খাদ্য দ্রব্য, বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সামলাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষদের৷
ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ ইয়র্গস পাপাডাকিস বলেন, ‘‘উচ্চ রক্ত চাপ ও ডায়বেটিসে আক্রান্ত প্রবীণ রোগীদের অনেকেই প্রতি মাসে ওষুধ কিনতে পারেন না৷ তারা আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, আমরা তাদের ওষুধ দিতে পারি কিনা৷''
ডক্টর্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড প্রতিষ্ঠানটির সরু করিডোরে অপেক্ষমাণ রোগীদের ভিড় সামলানো সহজ নয়৷ এক তলার ছোট কক্ষগুলিতে রোগীদের পরীক্ষা করা হয়৷ দোতলায় ডাক্তার ও নার্সরা কাজ করেন৷ অন্যান্য তলা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত৷ চিকিত্সকদের এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকে৷ এছাড়া স্বদেশেও চিকিত্সাসেবা থেকে বঞ্চিত, অসুস্থ মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ায়৷
নিখরচায় চিকিত্সাসেবা
আগে ডক্টর্স অব দ্য ওয়ার্লড প্রতিষ্ঠানটিতে দরিদ্র রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীরাই চিকিত্সার জন্য আসতেন৷ এখন প্রতি পাঁচ জনে এক জন রোগীই গ্রিক৷ গ্রিসের অন্যান্য অঞ্চলে সাহায্য প্রতিষ্ঠানটির কোনো কোনো আঞ্চলিক কেন্দ্রে গ্রিক রোগীদের সংখ্য ৮০ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়৷ এথেন্সের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে প্রতি দিন ১০ জন কর্মী ১০০ রোগীর দেখা শোনা করেন৷ ভাসিলিস এসেছেন গৃহহীনদের জন্য বিশেষ এক কর্মসূচির অনুমোদনপত্র নিতে৷ তিনি জানান, ‘‘এইডস ও হেপাটাইটিসের জন্য আমার রক্তের বিশেষ পরীক্ষার প্রয়োজন, কিন্তু এ বাবদ ৫০ ইউরো ফি দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই৷''
ভাসিলিসের মতো অবস্থা গ্রিসের অন্যান্য বহু রোগীর৷ নিখরচায় চিকিত্সা নেয়ার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে দেশটিতে৷ একারণে ডক্টর্স অব দ্য ওয়ার্লড উন্নয়নশীল দেশগুলির চেয়ে গ্রিসেই চিকিত্সা সেবা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে৷ বলেন ক্রিস্টিনা সামার্টজি৷ আলজেরিয়ার কর্মসূচি সম্পূর্ণ বাদ দিতে হয়েছে৷ তাঞ্জানিয়া ও উগান্ডায় প্রতিষ্ঠানের কাজ কর্ম এখনও চলছে, তবে কতো দিন তা চালিয়ে যাওয়া যাবে, তা বলা কঠিন৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ