গৃহকর্মীদের জন্য আইন
২ জুলাই ২০১৪কাজের বুয়া, কাজের লোক, পরিচারিকা কিংবা গৃহকর্মী – কত নামেই না পরিচিত এঁরা৷ এঁদের জন্য ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ'-এর পক্ষে আইন প্রণয়নের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হলে মঙ্গলবার শুনানি শেষে সরকারের ওপর রুল জারি করে আদালত৷ বিচারপতি সালমা মাসুদ ও বিচারপতি হাবিবুল গণির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সংক্রান্ত পলিসি এবং শিশু শ্রম নীতিমালা কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় আইন তৈরির পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে৷ চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সচিব, আইন, শ্রমও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে৷
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, দেশে লাখ লাখ গৃহকর্মী কাজ করলেও সংবিধান অনুসারে তাঁরা কোনো আইনের আওতায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না৷ এ কারণে তাঁরা মৌলিক ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ তাঁরা দিনে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা করে শ্রম দিচ্ছেন৷ কখনো কখনো নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন৷ তাই তাঁদের অধিকার এবং সুরক্ষার জন্য একটি নীতিমালা থাকা জরুরি৷ আর তাতে তাঁদের নিয়োগ, বেতন, কাজের ধরণ – সব কিছু সুনির্দষ্ট থাকতে হবে৷
বাংলাদেশে এখন ঠিক কত গৃহকর্মী রয়েছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই৷ তবে ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ'-এর হিসাব মতে এই সংখ্যা ৫ লাখ৷ বাস্তবে অবশ্য এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে মনে করেন গৃহকর্মী বিষয়ক গবেষক সিদ্দিকুর রহামান৷
তিনি জানান, এই গৃহকর্মীদের বড় একটা অংশ রাজধানীর বাসাবাড়িগুলিতে কাজ করেন৷ তাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি৷ সিদ্দিকুর রহামান জানান, তাঁদের মজুরি নির্দিষ্ট নয়৷ এছাড়া তাঁদের ওপর নানা ধরণের নির্যাতন করা হয়৷ গত ১০ বছরে ৮৯৯ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে৷ ইন্সটিউট অফ লেবার স্টাডিজ-এর হিসাব মতে, গত বছর ৫১ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে ঢাকায় নির্যাতনের শিকার হন ৩৪ জন৷
আইন ও শালিশ কেন্দ্র ২০১২ সালে সরকারের কাছে গৃহকর্মীদের জন্য ‘ডমেস্টিক ওয়ার্কার রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রটেকশন অ্যাক্ট' নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব করে৷ তাতে গৃহকর্মীদের নিবন্ধনের বিধান চালু করার কথা বলা হয়৷ আরো বলা হয় যে, নিবন্ধন ছাড়া গৃহকর্মীদের নিয়োগ দেয়া যাবে না৷ তাতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার কথা বলা হয়৷ তাছাড়া প্রস্তাবিত আইনে কাজের ধরণ এবং সময়ের উল্লেখ থাকতে হবে৷ গৃহকর্মীদের জন্য ৮ ঘণ্টা কাজের বিধান এবং ‘ওভার টাইম'-এর কথাও বলা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের ছুটি, বিনোদন – এ সবও নির্দষ্ট থাকতে হবে৷ আর গৃহকর্মী আবাসিক এবং অনাবাসিক এই দুই ধরণের হবে৷
আইনজীবী মনজিল মোরসদ বলেন, গৃহকর্মীদের জন্য আইন হলে শুধু তাঁদের অধিকার নয় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা গৃহকর্মী রাখেন, তাঁদের মানসিকতায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন আসা জরুরি বলে তিনি মনে করেন৷