1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গৃহকর্মীদের কান্না শোনার কেউ নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ নভেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না৷ নির্যাতনের শিকার কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেন৷ এছাড়া ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে৷ কিন্তু এর আইনি প্রতিকার হয় না৷ মামলা হয় অর্ধেকেরও কম৷

https://p.dw.com/p/3TBV0
ফাইল ছবিছবি: DW/M. M. Rahman

মানবাধিবার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট (জানু-অক্টোবর) মাসে ৩২ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১১ জন নিহত হয়েছেন৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২ জন৷ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকারও হয়েছেন গৃহকর্মীরা৷ কিন্তু এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ১৫টি৷ নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে৷

ঢাকাসহ সারাদেশে যারা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন তাদের ৯০ ভাগেরও বেশি নারী৷ এরমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা ১৮ বছরের নীচে৷ জরিপে দেখা গেছে যারা হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয় তাদের অধিকাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে৷ তারপরেই রয়েছে সাত থেকে ১২ বছরের শিশুরা৷

২০১৮ সালে ১৮ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন৷ আত্মহত্যা করেছেন পাঁচজন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার জন৷ মোট নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৫৪টি৷ কিন্তু ২২টি ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি৷ ২০১৭ সালে নিহত হন ১৯ জন, ধর্ষণের শিকার হন সাত জন৷ ৪৩টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে মাত্র ২৫টির৷ ২০১৬ সালে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন৷ ৪০ জন নিহতের মধ্যে ১৮ জনই ছিল শিশু৷ 

নূর খান

আসকের এই হিসাব কয়েকটি নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা, কিন্তু বাস্তব চিত্র অনেক ভয়াবহ৷ কারণ অনেক নির্যাতনের ঘটনায় অর্থ ও চাপের মুখে সমঝোতা করা হয়৷ গৃহকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দরিদ্র হওয়ায় তারা মামলা মোকদ্দমায় যেতে চান না বা যেতে সাহস পান না৷ প্রভাবশালীরা অনেক নির্যাতনের ঘটনাই ধামাচাপা দিয়ে ফেলেন৷

গত মার্চে আইএলও বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ তাতে বলা হয়, যারা বাড়িতে সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন তাদের শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন৷ মানসিক নির্যাতনের শিকার হন প্রায় ২৬ ভাগ৷ যৌন নির্যাতনের শিকার হন তিন ভাগ৷ আর তীব্র মৌখিক নির্যাতনের শিকার হন শতকরা ৪৮ ভাগ৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাতে ঘুমনোর সময় ৬৬ ভাগ গৃহকর্মীই নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না৷

আইএলও বলছে, বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের শতকরা ৯৭ ভাগ নারী৷ আর যে তিন শতাংশ পুরুষ তাদের প্রায় সবাই ছেলে শিশু৷

গৃহকর্মীদের নিয়ে কাজ করে ‘শ্রমিক জোট বাংলাদেশ'৷ এই সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক কাজি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৫ সালে বাংলাদেশে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন হলেও তাতে নির্যাতন কমছে না৷ কারণ নির্যাতন হয় ঘরের মধ্যে৷ আর গৃহকর্মী ও তাদের পরিবার গরিব হওয়ায় আইনগত প্রতিকারও পায় না৷ তাদের চাপ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে সমঝোতায় বাধ্য করা হয়৷''

কাজি সিদ্দিকুর রহমান

আরেকটি সমস্যা হলো মামলা করলেও সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া কঠিন, যা আগেই নষ্ট করে ফেলা হয় বলে জানান সিদ্দিকুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলে এরজন্য প্রয়োজন সচেতনতা৷ যারা গৃহকর্মী নিয়োগ দেন তাদের মানবিক দিক দিয়ে সচেতন করতে হবে৷ এর কোনো উদ্যোগ নেই৷ আমরা গৃহকর্মীদের তাদের অধিকার ও আইনের ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা করছি৷ কিন্তু গৃহকর্তাদের সচেতনকরবে কে? আমরাতো আর তাদের ঘরের মধ্যে যেতে পারি না৷''

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘যেদেশে আইন ও বিচার ধনীদের নিয়ন্ত্রণে সেখানে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচার ও তাদের সুরক্ষা কঠিন৷ আইন থাকলেও তার কার্যকর প্রয়োগ নেই৷ আর প্রভাবশালীদের কারণে অনেক নির্যাতনের ঘটনাই প্রকাশ পায় না৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘গৃহকর্মীদের অভিযোগ গ্রহণ, তাদের আইনি সহায়তাসহ আরো সব সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের সহায়তা সেল থাকা দরকার৷ আর ওই সেলে তারা যাতে অভিযোগ জানাতে পারে তার সহজ ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাহলে যদি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য