গিরগিটির ত্বকের আশ্চর্য গুণ
১৩ নভেম্বর ২০১৫টেক্সাসের ‘পিগমি শর্ট-হর্নড লিজার্ড' বা বামন একশৃঙ্গ গিরগিটির একটি বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে৷ তেষ্টা পেলে সরাসরি জল পান করার প্রয়োজন নেই – সরাসরি ত্বকের মাধ্যমেই তরল পদার্থ গ্রহণ করতে পারে এই প্রাণী৷ ত্বকের অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রের মাধ্যমে ভিজে বালুর মতো উৎস থেকে সে জল শুষে নেয়৷ সূক্ষ্ম নালীর মাধ্যমে সেই জল মুখে চলে আসে৷ আখেন শহরের আরডাব্লিউটিএইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আনা-ক্রিস্টিন জোয়েল বলেন, ‘‘আর্দ্রতা পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আসলে অতি শুষ্ক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কায়দা৷ অর্থাৎ জলের প্রতিটি বিন্দু কাজে লাগাতে হবে, মুখে পাঠাতে হবে৷''
আখেন শহরের আরডাব্লিউটিএইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গিরগিটির ত্বকের এই নালী পরীক্ষা করে প্লাস্টিক ও ধাতুর সারফেসের উপর তা সফলভাবে অনুকরণ করতে পেরেছেন৷ সারফেসের অত্যাধুনিক কাঠামো – এমনকি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরোয়া না করেও পরোক্ষভাবে নির্দিষ্ট একটি দিশায় তরল পাঠাতে পারছে৷ এর জন্য কোনো শক্তিরও প্রয়োজন পড়ছে না৷
মূল পরীক্ষার জন্য গবেষকরা টেক্সাসের বামন গিরগিটির সংরক্ষিত দেহ ব্যবহার করছেন৷ হাইস্পিড ক্যামেরার সাহায্যে তাঁরা ত্বকের উপর জল ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন৷ তাতে দেখা গেছে, যে জলের বিন্দু অন্যান্য দিকের তুলনায় মুখের অভিমুখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়৷ বায়োলজিস্ট ফিলিপ কোমান্স বলেন, ‘‘আমরা এই ত্বক ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি, যে প্রতিটি আঁশের মাঝে ক্ষুদ্র নালী রয়েছে৷ এত ক্ষুদ্র হওয়ার ফলে ‘ক্যাপিলারি এফেক্ট' বা কৈশিক প্রভাব দেখা যায়৷ অর্থাৎ জল নিজে থেকেই এগিয়ে যায়৷ এ ক্ষেত্রে গতি থাকে মুখের দিকে৷ অন্য যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি সেটা হলো এই, যে ত্বকের খাঁজে নালীর মোড়গুলি এমনভাবে সাজানো রয়েছে, যাতে জল মুখের দিকেই এগিয়ে যেতে পারে৷''
আরও একটি পরীক্ষার মাধ্যমে কোমান্স দেখালেন, পানি কত দ্রুত আঁশের ফাঁকে নালী দিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়৷ গিরগিটির পা নীল পানিতে ডোবালে সেই রঙিন পানির স্রোত উলকার বেগে পা থেকে বুকের উপর দিয়ে মুখের দিকে ধেয়ে যায়৷ ফিলিপ কোমান্স বলেন, ‘‘এখানে দেখা যাচ্ছে, যে পানি গিরগিটির শরীর বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ পা থেকে কনুই দিয়ে মাথার দিকে৷ গিরগিটির শরীর কিছুটা ঘোরালে নীল পানি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে৷ মানে সারা শরীরেই জলের বণ্টন ঘটে চলেছে এবং মুখের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যাতে গিরগিটি সেই জল পান করতে পারে৷''
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে আঁশের মাঝে নালী স্পষ্ট দেখা যায়৷ ক্ষুদ্র এই কাঠামো বিশ্লেষণ করে তার বৈশিষ্ট্য ধাতব বা প্লেক্সিগ্লাস সারফেসে প্রয়োগ করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ আকার-আয়তন ও ক্ষুদ্র জ্যামিতিক কাঠামো হুবহু নকল করতে হয়, যাতে জল নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে৷
গিরগিটির আঁশের কাঠামো নকল করতে গবেষকরা এমন এক সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা জৈব কাঠামো হুবহু বুঝে নিয়ে লেজার রশ্মির মাধ্যমে কৃত্রিম সারফেসের উপর প্রয়োগ করতে পারে৷
এবার এই সারফেসের উপরেও গিরগিটির মতো পরোক্ষভাবে পানি চলাচল দেখা যাচ্ছে৷ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নীচে গিরগিটির ত্বকের সঙ্গে কৃত্রিম সারফেসের কাঠামো তুলনা করলে অবশ্য বড় ধরনের পার্থক্য চোখে পড়ে৷ কিন্তু সেটাই তো কাম্য ছিল৷ ফিলিপ কোমান্স বলেন, ‘‘গিরগিটির ঘাটতি পূরণ করতে ত্বকের মধ্যে নানা বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছে৷ আমরা তার মধ্যে শুধু তরল পদার্থ চলাচলের গুণটি বেছে নিয়েছি৷ সেই প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে কৃত্রিম সারফেসের উপর তা প্রয়োগ করেছি৷''
গিরগিটির এই গুণ সম্ভবত কয়েক বছরের মধ্যে ইঞ্জিনের লুব্রিকেশন, কাচের উপর কন্ডেনসেশন পানি সরানো অথবা রেফ্রিজারেটরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে৷