গাছের ডিএনএ দিয়ে গোয়েন্দাগিরি
১৯ জুলাই ২০১৬জঙ্গলে অপরাধের ঘটনা৷ খুন করে সব চিহ্ন মিটিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে৷ বিশাল এক গাছের নীচে লাশ পুঁতে দেওয়া হয়েছে৷ খুনির কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না৷ এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি দ্রুত তদন্তকারীদের নজরে এসে পড়েছে৷
কিন্তু অকুস্থলে তার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি৷ খুন রহস্যের এখনো কোনো কিনারা হয়নি৷ এমনকি বহু বছর পরেও অপরাধের এমন ঘটনা সেরা তদন্তকারীদের মনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোরাফেরা করে৷
উভে শ্লেয়েনবেকার আবার এই কেস ঘেঁটে দেখছেন৷ সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে গাছের একটি পাতা পাওয়া গেছে, যার ভিত্তিতে তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে – গাছেরও কি আঙুলের ছাপ আছে, যা দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা যায়? তিনি বলেন, ‘‘সে সময়ে আমরা প্রথমে মানুষের ডিএনএ নিয়ে কাজ করেছিলাম৷ তারপর প্রাণীদের ডিএনএ নিয়েও কাজ করলাম৷ তখন জানতাম না কোন গাছ আমরা ল্যাবে আনবো৷ ঠিক করলাম, একই সঙ্গে গবেষণা ও তদন্তের কাজ করবো৷''
অকুস্থলে যে গাছের নীচে লাশ পাওয়া গেছে, পাতাটা যে ঠিক সেই গাছের, তা কি প্রমাণ করা সম্ভব? শ্লেয়েনবেকার ডিএনএ তুলনা করে সেটা প্রমাণ করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় তুলতে চান৷ উভে শ্লেয়েনবেকার বলেন, ‘‘কিছু লোক বলেছিলেন, এত পুরানো উপকরণ থেকে কিছুই আলাদা করা যাবে না৷ পাতাটি সে সময়ে ছ'বছর পার করেছিল৷''
গাছপালার জেনেটিক মেটিরিয়াল বিশ্লেষণ করার কথা প্রায় কেউই ভাবেননি৷ যে ডিএনএ প্রতিটি পাতাকে নির্দিষ্ট গাছের সঙ্গে মেলাতে পারে, তা তখনো অজানা ছিল৷ শ্লেয়েনবেকার বলেন, ‘‘বিশ্লেষণ করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল৷ বই ঘাঁটাঘাঁটি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গাছপালার ডিএনএ বার করার প্রক্রিয়া শিখতে হয়েছে৷ তারপর নিজস্ব ল্যাবে অকুস্থলে পাওয়া পাতার বিশ্লেষণ প্রস্তুত করতে হয়েছে৷''
অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই এক্সট্র্যাকশনের কাজ তদন্তকারীর জন্য একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ও বড় সম্ভাবনা৷ পাতাটি চিহ্নিত করার কাজে সফল হলে তিনি পুলিশের ইতিহাসে স্থান পেয়ে যাবেন৷ উভে শ্লেয়েনবেকার বলেন, ‘‘জীবনে এমন কেস একবারই আসে৷ কাজ শেষ হলেই তা বোঝা যায়৷ অকুস্থলে পাওয়া কোনো বস্তু শেষ পর্যন্ত কাজে লাগবে কি না, তা জানার কোনো উপায় নেই৷ পরে দু'টি বস্তুর মধ্যে মিল আবিষ্কার করলে তা কেস সমাধানের ক্ষেত্রে চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে৷''
জেনেটিক পরীক্ষা সফল হয়েছে৷ ফলাফল নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই৷ সন্দেহভাজন ব্যক্তির গাড়ির মধ্যে পাওয়া পাতাটি অকুস্থলের পাশের গাছটি থেকেই এসেছে৷ তবে এই অকাট্য প্রমাণ গল্পের শেষ নয়৷ শ্লেয়েনবেকার বলেন, ‘‘তারপর প্রশ্ন ওঠে, আদালত আনকোরা নতুন এই পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেবে কিনা৷ তার উপর কেসটা উচ্চতর আদালতে যাচ্ছিল৷ তবে সর্বোচ্চ আদালত এই পদ্ধতিকে বৈধ হিসেবে মেনে নিয়েছে৷''
শ্লেয়েনবেকারের এই যুগান্তকারী কাজের ফলে তদন্তের এক সম্পূর্ণ নতুন প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷ গাছপালার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের প্রয়োগ অপরাধবিজ্ঞানকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে – এককালে মানুষের ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল৷
অপরাধীকে শেষ পর্যন্ত খুনের সাজা পেতে হয়েছে৷ গোটা বিশ্বে এই প্রথম কোনো তদন্তে গাছপালার ডিএনএ-র ভিত্তিতে রায় শোনানো হলো৷ সামান্য একটি পাতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে উঠলো৷