‘গাইডলাইন' করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকানো যাবে না
২২ মার্চ ২০১৫
চরমপন্থি শক্তিগুলো দিন দিন যেন আরো ‘মিডিয়া স্যাভি’ হয়ে উঠছে৷ আমাদের মতো সাংবাদিকদের আজকাল জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) তো বটেই, বাংলাদেশ বা ভারতে জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে, এমন সন্ত্রাসী বা আধাসন্ত্রাসী সংগঠনগুলির খবরও নিতে হয় ঐ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো থেকে৷
ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে প্রায় নিয়মিতই ছবি এবং ভিডিও ‘পোস্ট’ করে চলেছে আইএস৷ আর সেটা হবে না-ই বা কেন? শুধুমাত্র ফেসবুকই তো ব্যবহার করছে বিশ্বের কমপক্ষে ১.৪ বিলিয়ন, অর্থাৎ ১৪০ কোটি মানুষ৷ বাংলাদেশে এই মাধ্যমকে ব্যবহার করছে বাঁশেরকেল্লার মতো মৌলবাদী সাইটগুলোও৷ বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির অথবা ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবার বা আরএসএস এবং বিভিন্ন দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে স্বনামে-বেনামে ব্যবহার করছে৷
বিশ্বব্যাপী এমন কার্যক্রম বন্ধ করতে এবার ধীরে ধীরে সতর্ক হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকার৷ তাই এবার সেসব দেশের সরকারের সমর্থনে ইউটিউব, টুইটার এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষও উঠেপড়ে লেগেছে নিজস্ব ‘প্ল্যাটফর্ম’গুলোয় জঙ্গি কর্মকাণ্ড খানিকটা হলেও আয়ত্বে আনতে৷ এই যেমন ফেসবুক সম্প্রতি একটি নতুন নিয়মাবলী বের করেছে৷ বেছে বেছে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে সেইসব সংগঠনকে, মানে তাদের অ্যাকাউন্টগুলোকে, যারা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে৷ ফেসবুক এদের নাম দিয়েছে ‘বিপদজ্জনক সংগঠন’৷
আমার প্রশ্ন, এভাবে কি বিশ্বকে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদমুক্ত করা সম্ভব? না, সম্ভব নয়, কারণ, চরমপন্থি শক্তিগুলো বরাবরই অনেক বেশি সংগঠিত৷ তারা নানা নামে, নানা বেশে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমগুলোতে সক্রিয়৷ যেমন হালে ফেসবুক, টুইটারকে তোয়াক্কা না করে নিজেদেরই একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট খুলে বসেছে আইএস, যার নাম ‘খেলাফাবুক’ ৷ শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই অন্ততপক্ষে ১০০০টি নতুন অ্যাকাউন্ট আইএস-কে সমর্থন দিয়েছে বলে খবর৷
আগে জঙ্গিরা সাংবাদিকদের হুমকি দিত, অপহরণ করতো, অত্যাচার করতো, এমনকি শিরশ্ছেদও করতো, কিন্তু এখন তারা নতুন এই পথ বেছে নিয়েছে৷ নাম পাল্টে, ভোল পাল্টে নানা রকম মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী ধারণা প্রচার করছে তারা৷ আর এতে আমাদের কাজ আরো কঠিন হচ্ছে৷ ‘একজন অন্যরকম’, ‘ওমর মুজাহিদ’-এর মতো ছদ্মনাম দেখে বোঝা গেলেও, ‘মহম্মদ জাহিদ’ কিংবা ‘মীর আহমেদ বিন কাসেম’-এর পেছনে কে লুকিয়ে আছে, কেন লুকিয়ে আছে – সেটা বুঝবো কী করে? আবার ধরুন, বাংলাদেশে #স্টেপডাউনহাসিনা চলছে, চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন৷ ভালো কথা৷ কিন্তু অনেকে #স্টেপডাউনহাসিনা নামের অ্যাকাউন্ট তৈরি করে টুইটারে যা লিখে চলেছে, সেটা তো জঙ্গিবাদেরই নামান্তর৷ তাই আমার মতে, শুধু ‘গাইডলাইন’ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকানো যাবে না, যেতে পারে না৷ এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত এবং কার্যকর নজরদারি৷