গণতন্ত্র রক্ষা বনাম গণতন্ত্র হত্যা
৪ জানুয়ারি ২০১৮২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ নেয়নি৷ তারা শুধু নির্বাচন বর্জনই নয়, প্রতিহতেরও ঘোষণা দিয়েছিল৷ তাদের দাবি ছিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়৷ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও তার মহাজোটের শরিকরা অংশ নেয়৷ একতরফা নির্বাচনে সংসদের মোট ১৫৪টি আসনে প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন৷ আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে৷
এ বছরের ৫ই জানুয়ারির কর্মসূচি সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ঢাকাসহ সারাদেশে আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের কার্মসূচি নিয়েছি৷ প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছি৷ আমরা সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, সুযোগ পাইনি৷ এখন আমরা নয়াপল্টন বিএনপি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চাই৷ অনুমতি পাবো কিনা জানি না৷''
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিএনপি অফিসের সামনেও সমাবেশের অনুমতি দেয়নি৷ ৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি৷ সেখানে তারা বিস্তারিত জানাবে৷
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়৷ একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে৷ দেড়শ'রও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাশ করে, যা ছিল নজীরবিহীন৷ ওই সময় আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর নজীরবিহিন নির্যাতন চালনো হয়, মামলা দেয়া হয়৷ আর সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিদায় করা হয়৷ আর এসব কারণেই আমরা ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমরা অংশ নেবো৷ তবে আমরা চাই নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে৷ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ আমরা এজন্য আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছি৷ আলোচনায় না হলে জনগণকে নিয়ে রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে৷''
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস পালনে আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ সারাদেশে আনন্দ মিছিল ও আনন্দ র্যালির কর্মসূচি দিয়েছে৷ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীতে দু'টি আনন্দ সমাবেশ হবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ৷ তিনি বলেন, ‘‘জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে একই ধরণের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে৷''
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস কেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোট তখন ঢাকাসহ সারাদেশে হত্যা এবং নাশকতা চালিয়েছে৷ পুলিশ হত্যা করেছে৷ তারা চেয়েছিল, নির্বাচন বানচাল করে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে৷ গণতন্ত্র ধংস করতে৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে৷ গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে ওই নির্বাচন অপরিহার্য ছিল৷ ওই নির্বাচন না হলে দেশে সাংবিধানিক সংকট হতো৷ দেশ সংকটে পড়তো৷ বিএনপির জাতির কাছে এখন ক্ষমা চওয়া উচিত৷ তারা ওই নির্বাচন বানচাল করে দেশকে যে সংকটে ফেলতে চেয়েছিল, তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবেব তিনি বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে৷ নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন৷ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে৷ আশা করি, সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি বা অন্য কোনো দল নির্বাচনে না এলে, তাদের নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের না৷''