গণতন্ত্রকে সুসংহত করার অঙ্গীকার
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয় রাত ১২টার পর থেকেই৷ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন৷ তার পর থেকেই সব শ্রেণির মানুষের ঢল নামে শহিদ মিনারে৷ আর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর৷ দোয়েল চত্বর থেকে বইমেলা হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত৷ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যেন পরিণত হয় জনস্রোতে৷ সব পথ গিয়ে মেশে এক পথে – কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে৷ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় মিনারের বেদি৷
সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, নারী-পুরুষ-শিশু সবাই আসেন শহীদ মিনারে৷ আর বিদেশিদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মত৷ তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাষার জন্য চরম আত্মত্যাগ আর তাদের জন্য পুরো জাতির এই বিনম্র শ্রদ্ধায় অভিভূত৷
কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মনে করেন, শহীদদের আত্মত্যাগের লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি৷ শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা আজিমপুরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ৷ কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এ দেশে গণতন্ত্র এখনো সুসংহত হয়নি৷ ফলে সাধারণ মানুষ তার অধিকার পায়নি৷ এমনকি বাংলা ভাষাকেও তার মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি৷'' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাকে সর্বস্তরে চালু করা এখনো সম্ভব হয়নি৷ উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এ জন্য অনেক কাজ করতে হবে৷ সেই কাজ হয়নি৷ এখনো একটি শ্রেণি আছে যারা বাংলাকে গুরুত্ব দিতে চান না৷ বরং বাংলাকে বিকৃত করতে তাদের উত্সাহের কমতি নেই৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক – সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৫২'র ভাষা আন্দোলন আমাদের লড়াই করতে শিখিয়েছে৷ শিখিয়েছে দাবি আদায় করতে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ গণতন্ত্রের লড়াই এখনো শেষ হয়নি৷ দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবেনা৷ ভাষার মর্যাদা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত করা যাবেনা৷
আর বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, মানুষের ভোটের অধিকার নেই৷ নেই বাক স্বাধীনতা৷ তাই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে৷ গণতন্ত্রকে সংহত করতে৷ বিএনপি সেই লড়াইয়ে পিছপা হবেনা বলে জানান তিনি৷
এদিকে শহিদ দিবসে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের৷ তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রকে সংহত করতে হলে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷ নিশ্চিত করতে হবে যুদ্ধাপরাধের বিচার৷