গঙ্গায় দূষণ রুখবে জার্মানি?
২৩ এপ্রিল ২০১৬গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে নেমে উত্তরাঞ্চল, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে আড়াই হাজার কিলোমিটার প্রবাহপথ পেরিয়ে গঙ্গাসাগরে পড়েছে ভারতের দীর্ঘতম নদী গঙ্গা৷ উত্তরাখন্ডে আরও দু'টি নদী অলকানন্দা ও মন্দাকিনী মিশেছে গঙ্গার জলধারায়৷ হিন্দুদের কাছে ধর্মীয় পবিত্রতার প্রতীক এই নদী৷ কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে ভারতের এই জলসম্পদ ক্রমক্ষীয়মান৷
গঙ্গা দূষণের রয়েছে নানা কারণ৷ দীর্ঘ প্রবাহ পথের দু'ধারে ৫০ কোটিরও বেশি লোকের বসতি৷ ছোট-বড় অসংখ্য শহরের অশোধিত নোংরা জল এবং আবর্জনা, শিল্পকারখানার বর্জ্য পদার্থ এবং কীটনাশকের মতো বিষাক্ত পদার্থ প্রতিনিয়ত পড়ছে এই নদীতে৷ এর পরিমাণ দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি লিটার, দেখা গেছে একটি সমীক্ষায়৷
গঙ্গার অপমৃত্যুর দিকে প্রথম সরকারের নজর পড়ে ১৯৮৫-৮৬ সালে৷ গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার অভিযানে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় গঙ্গা অ্যাকশন প্লান৷ এরপর থেকে প্রতি বছর এতে প্রচুর টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং খাতা কলমে সেই টাকা খরচও দেখানো হয়৷
কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি৷ এত বছর পরেও গঙ্গা দূষণমুক্ত হয়নি বরং নদীতে দূষণের পরিমাণ বেড়েছে৷ এর কারণ রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার অভাব, প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাব এবং তার পাশাপাশি রয়েছে প্রশাসনিক দুর্বলতা৷ মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র গঙ্গা তীরের বারাণসী শহরে দাঁড়িয়ে গঙ্গা অ্যাকশন প্লানকে ২০২০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ করার অঙ্গীকার করেছেন এবং এর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথাও বলেছেন৷
সর্বশেষ ভারতের জলসম্পদকে বাঁচাতে, তাকে পরিবেশ অনুকূল করতে মোদী জার্মান সহযোগিতার দিকে হাত বাড়িয়েছে৷ কারণ রাইন এবং ডানিয়ুব নদীকে দূষণমু্ক্ত করতে জার্মানির সফল অভিজ্ঞতা সর্বজনবিদিত৷ তাই গঙ্গাকে পুনরুজ্জীবিত করতে গত ১৩ই এপ্রিল নতুন দিল্লিতে সই হয় ‘নমামি গঙ্গা প্রকল্প' রূপায়নের সহযোগিতা চুক্তি৷ প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও জার্মানি দেবে প্রায় ২৩ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান৷ ভারতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ডক্টর মার্টিন নে বলেন, ভারতের সঙ্গে জার্মানির এক সফল ও দীর্ঘস্থায়ী ‘পার্টনারশিপ' আছে৷ জার্মানি চূড়ান্ত লক্ষ্য গঙ্গাকে তার আসল রূপে ফিরিয়ে আনা, যেটা জার্মানি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছে রাইন নাদীর ক্ষেত্রে৷
গঙ্গা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে তিন ধাপে৷ প্রথম ধাপে নদীর উজানভূমির উন্নয়ন৷ এক্ষেত্রে হবে উত্তরাখন্ড৷ চিহ্নিত করা হবে দূষণের প্রধান কারণগুলি৷ যেমন জলনিকাশি ব্যবস্থা, কলকারখানার অশোধিত বর্জ্য পদার্থ নির্গমন ইত্যাদি৷ তবে সব কিছু করা হবে রাজ্য প্রকল্প পরিচালন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে৷ দ্বিতীয় ধাপে দৃষ্টি দেওয়া হবে নদীর সমগ্র অববাহিকা অঞ্চলের দিকে যাতে গঙ্গার জলধারা থাকে নির্মল ও অবিরাম৷
আর তৃতীয় ধাপে নজর দেওয়া হবে ভবিষ্যতে গঙ্গার জল আবারো যাতে দূষিত হয়ে না পড়ে সেদিকে৷ গড়ে তোলা হবে বর্জ্য পদার্থ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম৷ উন্নত করা হবে পয়প্রণালী ব্যবস্থা৷ উত্তরাখন্ডের প্রকল্পগুলির জন্য জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী, সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান জার্মান রাষ্ট্রদূত৷ নদী দূষণরোধে কড়া নজর রেখেছে জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল৷ কেন্দ্রের নমামি গঙ্গা প্রকল্পের অধীনে দিল্লি সরকারের জলবোর্ডকে বরাদ্দ করা হয় ১৪০০ কোটি টাকা৷ সেই টাকা কিভাবে খরচ করা হবে, তার হলফনামা পেশ করতে বলা হয়েছে৷ কারণ দিল্লির মতো মহানগরীর নোংরা জল নিকাশী ব্যবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, যেটা যমুনা নদী দূষণের অন্যতম কারণ৷