1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘খেলোয়াড় নির্বাচনের বর্তমান প্রক্রিয়াটি অকার্যকর’

১ নভেম্বর ২০১৯

শাস্তি বহাল থাকলে আগামী এক বছর সাকিবকে পাবে না বাংলাদেশ দল৷ তাঁর বিকল্প না থাকায় ভারত সফরকে ঘিরেও জমেছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ এর কারণও বলেছেন এ সাক্ষাৎকারে৷

https://p.dw.com/p/3SKZS
ছবি: DW/A. Islam

ডয়চে ভেলে: ক্রিকেট বোর্ড কর্মকর্তা এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক থাকা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন? বাংলাদেশে এখন সেই সম্পর্কটা কতটা আছে?

ফারুক আহমেদ: ক্রিকেটে প্রতিটা বিভাগই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা, তারপর যারা তাদের পরিচালনা করে অর্থাৎ ক্রিকেট বোর্ড৷ দুই পক্ষ একে অপরের পরিপূরক৷ এটা একটা মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মত৷ একটা পার্ট ভালভাবে পারফর্ম না করলে পুরো ব্যাপারটাতে সমস্যা সৃষ্টি হবে৷ সবসময় সব বিভাগ ভালভাবে কাজ করতে হবে তা নয়, কিছু সমস্যা হতেই পারে৷ কিন্তু সমস্যাগুলো কীভাবে এড্রেস করব সেটা গুরুত্বপূর্ণ৷ সাম্প্রতিককালে তা ঘটেনি, কিছু ব্যাপার ঘটেছে৷ খেলোয়াড়দের কিছু দাবি দাওয়া ছিল৷ একটা টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে ক্রিকেটের  দীর্ঘ সংস্করণটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটাই সবচেয়ে অবহেলিত ছিল আমার মনে হয়৷ টাকা পয়সা, সুযোগ সুবিধা সব দিক থেকেই৷ গত ২০ বছরে সেখান থেকে যে আমরা ভাল অবস্থায় এসেছি তা নয়৷ আমাদের পাশের দেশ ভারত রঞ্জি ট্রফি, দিলীপ ট্রফিসহ বিভিন্ন  দীর্ঘ সংস্করণের লিগগুলো খুব মনযোগ দিয়ে খেলে৷ এটা আমাদের আরো আগেই নজর দেয়া উচিৎ ছিল৷ এক্ষেত্রে ম্যাচ ফি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এগুলোকে আকর্ষণীয় করতে হবে৷ 

‘‘এখানে কোন মোটিভেশন নাই’’

বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাদারির ঘাটতি আছে বলে মনে হয় কীনা?

ক্রিকেট বোর্ডের উচিৎ ছিল যেই জিনিসগুলো আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (সেগুলোতে মনযোগ দেয়া), হয়তোবা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তারা বেশি মনযোগ দিয়েছে, বেশি গুরুত্বপূর্ণগুলো তাদের মনযোগ এড়িয়ে গেছে৷ এইজন্যই সমস্যার শুরু হয়েছে বলে আমি মনে করি৷ আমার মনে হয় ক্রিকেট বোর্ডের উচিৎ কোন জিনিসগুলো আমাদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো চিহ্নিত করে সেভাবে এগিয়ে যাওয়া৷

খেলোয়াড়েরা দেশীয় কোচদের নিয়েও কিছু দাবি তুলে ধরেছেন৷ আমাদের দেশীয় কোচদের নিয়ে আপনার কী মূল্যায়ন?

আমি পুরোপুরি একমত৷ ওরা দাবিটা দুইভাবে করেছে, ওরা পেম্যান্ট নিয়ে বলেছে৷ বিদেশি কোচ যখন আসে তখন ওদের সাথে স্থানীয় কোচদের বেতন ভাতায় বিরাট পার্থক্য থাকে৷ যার কারণে কোচিংকে অনেকে পেশা হিসেবে নিতে পারছিল না৷ যেমন আমি নিজেও আসিনি কোচিংয়ে৷ ২২/২৩ বছর খেলেছি, ক্লাব পর্যায়ে অধিনায়ক ছিলাম ১৫/১৬ বছর, জাতীয় দলের দুই বছর অধিনায়ক ছিলাম, আমিও কিন্তু আসতে পারি নাই৷ কারণ এখানে কোন মোটিভেশন নাই৷ কোচদের জন্য ভাল ইনসেনটিভ থাকলে বেশি লোক আসবে৷ খেলোয়াড়রা যেমন বলেছে, কিছু জায়গায় আমরা চাইলের স্থানীয় কোচ নিয়োগ দিতে পারি৷ বয়স ভিত্তিক হতে পারে, বিভাগীয় পর্যায়ে হতে পারে৷ (জাতীয় পর্যায়ে) সবসময় দেশীয় কোচ দিয়ে চালাতে হবে সেটাও ঠিক না৷ ভারতে কয়েকবছর আগেও বিদেশি কোচ ছিল৷ তাতে আমি দোষের কিছু দেখি না৷ বিদেশী কোচ যদি ভাল হয় তাদের আনতে পারেন৷ কিন্তু একইসঙ্গে স্থানীয় কোচরাও যাতে ভাল হয়, তাদের প্রমোট যেন করতে পারি সেই ব্যবস্থাও করতে হবে৷ 

আপনি নিজে এক সময় নির্বাচক বোর্ডে ছিলেন৷ তখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় উঠে এসেছে৷ এখন পাইপলাইনের কী অবস্থা?

এখনে শুধু কমিটি আছে, যেটা নন ফাংশনাল বলব৷ সিলক্টরদের ধরা যাবে না, যদিও নামে দুজন আছেন৷ কিন্তু তারা কতটুকু অথরিটি নিয়ে কাজ করেন সেটা বিরাট কোশ্চেনমার্কড (প্রশ্নবিদ্ধ)৷ এখন টু টায়ার (দ্বিস্তর বিশিষ্ট) কমিটি বাংলাদেশে৷ পরিচালক পর্যায়ের লোকজন আছেন যারা কখনই মাঠে খেলা দেখতে যান না৷ তারা শুধু পরিচিত খেলোয়াড় চেনেন৷ আর নির্বাচকরা আছেন যারা মাঠে গিয়ে খেলা দেখেন৷ এই কম্বিনেশনটাই বিরাট কোশ্চেনমার্কড৷ যেজন্য ২০১৬ এর শেষ দিকে আমি পদত্যাগ করেছিলাম৷ কিন্তু এটা (খেলোয়াড় নির্বাচন ব্যবস্থা) কখনই কাজ করবে না৷ কারণ এমপ্লয়ার আর এমপ্লোয়ি যখন এক কমিটিতে থাকবে, তখন কখনই এমপ্লোয়ির কথা শোনা হবে না৷ সব সময় আপনাকে ওভাররুলড করতে পারবে এমপ্লোয়ার৷ এই দুইটা গ্রুপ যখন একসাথে হবে তখন ডিসফাংশনালই (অকার্যকর) হবে৷ যখনই কোন ডিরেক্টর বা বোর্ড প্রেসডেন্ট কিছু চাইবে সেটাই প্রধান্য পাবে৷ সিলেক্টরের কথা বিবেচনায় নেয়া হবে না৷ যেই কারণে তেমন কোন টেলেন্ট খেলোয়াড় আপনি খুঁজে পাবেন না৷ যেমন তামিমকে কেউ চিনত না যখন ২০০৭ বিশ্বকাপে তাঁকে সুযোগ দিলাম৷ অনূর্ধ্ব-১৯ এ কিছু ম্যাচ খেলেছে৷ তারপর মুশফিক যখন অনূর্ধ্ব-১৫ খেলে তখন তাঁকে আমরা ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিলাম৷ এটা কিন্তু এখন আর সম্ভব না৷ কারণ বোর্ড ডিরেক্টরা খেলা দেখতেই যায় না মাঠে৷ সেজন্য আমি যখন বলব একটা ছেলে টেলেন্টেড, সে তাকে কখনই নিবে না৷ এই ধরনের ক্ষেত্রে কারো জবাবদিহিতাও থাকে না৷ অন্যদিকে খারাপ খেললে দোষারপটা যাবে নির্বাচকদের দিকে যারা তথাকথিত নির্বাচন কমিটিতে আছেন, কারণ তারা এমপ্লোয়ি৷ আর ভাল করলে সবাই এটার বাহবা নিবে৷

সাম্প্রতিক যে পরিস্থিতি তৈরি হল, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন সার্বিকভাবে এখন কোন জায়গায় আছে?

শেষ এক বছর আমরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলি নাই, ফলাফলের বিবেচনায়৷ যেমন শ্রীলঙ্কায় তিন-শূন্যতে হেরেছি৷ বিশ্বকাপে অষ্টম হয়েছি, যদিও খুব ভাল শুরু করেছিলাম৷ তবে ক্রিকেটে সবসময় একইরকম অবস্থা যাবে না৷ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আপনার অন্য জিনিসগুলো ঠিক আছে কীনা৷ ঘরোয়া ক্রিকেট, ড্রেসিংরুমের অবস্থা, পাইপলাইন এগুলো ঠিক আছে নাকি৷ যখন এগুলোতে সমস্যা হবে তখন বিষয়টা উদ্বেগের৷ প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগের অবস্থা, পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং এবং টেবিলে খেলা হয় কোন টিম যাবে আগে পিছনে এই বিষয়গুলো যখন ঢুকে যাবে তখন পুরো ব্যাপারটাই গোলমেলে হয়ে যাবে৷ যেটা এখন কিছুটা হয়েছে৷ আমার মনে হয় বোর্ডেরও এগুলো সব দিকে নজর দিয়ে সব কিছু ঠিকঠাক করা উচিৎ৷ আমি কিন্তু দল খারাপ খেললে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হই না৷ সব সময় দেখি প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে নাকি৷ তো প্রক্রিয়াতেই মনে হয় এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় আছে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷