খালেদা নির্বাচনের কথাই বলেছেন, তবে...
১৩ নভেম্বর ২০১৭বিশ্লেষকরা মনে করেন, সমাবেশে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথাই বলেছেন৷ কিন্তু নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তাঁর সংশয় আছে৷ তিনি মনে করেন, আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের৷ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব৷
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির রোববারের সমাবেশ ছিল ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি' দিবস উপলক্ষে৷ সমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো৷ যদিও সকাল থেকে ঢাকায় দেশের বাইরে থেকে যানবাহন প্রবেশ করতে পারেনি৷ আর ঢাকার ভিতরে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল৷ বিএনপি'র অভিযোগ, তাদের সমাবেশ যাতে সফল না হয়, সে জন্যই সরকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়৷ আর সরকারপক্ষের কথা, বিএনপি যনবাহন চলাচল বন্ধ করে সমাবেশ করেছে৷
সমাবেশের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রয়োজন৷ দেশের এই অবস্থা থেকে মানুষ পরিবর্তন চায়, এদের হাত থেকে মুক্তি চায়৷ আর এই পরিবর্তন ভোটের মধ্য দিয়ে আসতে হবে৷ সেজন্য মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে৷ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে৷’’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় কী পরিমাণ চুরি করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে৷আওয়ামী লীগ চুরি করে জিততে চায়, তারা জনগণকে ভয় পায়৷ এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশনের নির্বাচনে খুলনায় আমাদের লোকদের নমিনেশন পেপার পর্যন্ত জমা দিতে দেয়নি৷ একই অবস্থা চিকিৎসক, শিক্ষকদের নির্বাচনেও৷ সব নির্বাচনে তারা চুরি করে জিততে চায়৷’’ তিনি বলেন, ‘‘এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে৷ এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে বোঝাতে হবে৷ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার চলবে না এবং ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য ইসিকে ভূমিকা রাখতে হবে৷’’
খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘‘নির্বাচনে নির্দ্বিধায় মানুষ ভোট দিতে যাবে৷ যাকে পছন্দ, তাকে ভোট দেবে- এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে৷ হাসিনার অধীনে কোনও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না, হবেও না৷’’
খালেদা জিয়া এর বাইরে রোহিঙ্গা শরণার্থী, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার বিভাগ, দ্রব্য মূল্য, দুর্নীতি প্রভৃতি নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বর্তমান সরকারকে ক্ষমা করলেও জনগণ ক্ষমা করবে না৷ তারা ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবে৷’’
খালেদা জিয়ার এ ভাষণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার বক্তব্য খেয়াল করলে দেখা যাবে, তিনি পুরোপুরি একটা নির্বাচনমূখী বক্তব্য দিয়েছেন৷ তিনি তার কথায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তার দাবির কথা বলেছেন৷ তিনি কেমন নির্বাচন চান, তাই বলেছেন৷ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না- এই কথা তাঁর নির্বাচন বর্জনের কথা নয়৷ এটা তাঁর নির্বাচনের আগে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে৷ তাই আমি মনে করি, এখন সব পক্ষকে কিছুটা হলেও সংযত আচরণ করতে হবে৷ নির্বাচনের ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷’’
আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়৷ আমি মনে করি, তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে৷ তবে তারা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দিহান৷ তারা চায়, নির্বাচন সঠিক এবং নিরপেক্ষ হোক৷ কার অধীনে বা কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে এটা আর তাদের কাছে বড় ইস্যু নয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন এই সরকারকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব৷ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব৷ সেটা করতে হলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে৷ এবং তাদের ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার না দিয়ে তাদের সঙ্গে আলাদা ম্যাজিষ্ট্রেট দিলেও হবে৷’’
ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, ‘‘দেশে সুশাসনের জন্য গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার৷ আজকের(রবিবার) পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে আসুক তা সরকার চায় না৷ তা না হলে জেলা থেকে যানবাহন আসা বন্ধ করা হবে কেন? এটা সরকারের একটা ভুল সিদ্ধান্ত৷’’
ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী এবং ড. শান্তনূ মজুমদার মনে করেন, নির্বাচনে সব দলের অংশ গ্রহণ প্রয়োজন৷ আগেরবারের মতো কাউকে বাদ দিয়ে বা নির্বাচন বর্জন করে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...