খাদ্যশস্য নিয়ে ফাটকা
১৪ মে ২০১৩খাদ্যশস্য নিয়ে ফাটকা একটি কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা৷ বিভিন্ন বিনিয়োগ তহবিলের মাধ্যমে ব্যাংক, হেজ ফান্ড ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানেরা কৃষিজাত কাঁচামালের দামের ওঠাপড়া নিয়ে ফাটকা খেলে থাকে৷ এ জন্য এই সব বিনিয়োগ তহবিলের অংশীদার হওয়া যায়৷ জার্মানিতে এই কৃষিজাত পণ্য সংক্রান্ত ফাটকা বাজারে প্রায় ১১ বিলিয়ন ইউরো খেলছে, যার মধ্যে ছয় বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ একা আলিয়ানৎস বীমা সংস্থার৷
গত সপ্তাহে মিউনিখে ছিল আলিয়ানৎসের শেয়ারহোল্ডার্স মিটিং৷ অক্সফ্যাম সংগঠন সেই হলের বাইরে আলুর বস্তা, লাল শালু আর পিচবোর্ডে রুলেট খেলার চাকা এঁকে প্রতিবাদ জানায় এই ‘‘আলিয়ানৎস ক্যাসিনো''-র বিরুদ্ধে৷ ক্যাসিনো বলতে পশ্চিমি জুয়া খেলার জায়গা, যেখানে রুলেট খেলা গ্রাহকদের বিশেষ প্রিয়৷ রুলেট খেলায় একটি চাকা ঘোরে; দান ফেললে ঘুঁটি গিয়ে শেষমেষ কোন নম্বরে দাঁড়াবে, তা নিয়েই যত উৎসাহ-উত্তেজনা৷ পুরোটাই সাট্টা, পুরোটাই ফাটকা৷
‘‘ক্ষুধা নিয়ে রুলেট''
অক্সফ্যাম তাদের একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে এই শীর্ষক দিয়ে: ‘‘ক্ষুধা নিয়ে রুলেট''৷ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, আলিয়ানৎসের মতো বীমা প্রতিষ্ঠান এবং ডয়চে ব্যাংকের মতো ব্যাংকগুলি খাদ্যপণ্যের মূল্যের ওঠাপড়ার উপর পরোক্ষ বাজি ধরার ফলে সেই ওঠাপড়া বেড়ে চলেছে৷ ভবিষ্যতে কোনো নির্দ্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দ্দিষ্ট খাদ্যশস্যের মূল্য কি দাঁড়াবে, সেটা আন্দাজ করে নিয়ে বিনিয়োগ তহবিলের তরফ থেকে সেই খাদ্যশস্য কেনা হয় কিংবা হয় না৷ ফলে সেই খাদ্যশস্যের দাম তুঙ্গে চড়তে পারে কিংবা অতলে নামতে পারে৷ এর সাথে সেই শস্যের বাস্তবিক উৎপাদন কি বিশ্বব্যাপী চাহিদার কোনো সম্পর্ক নেই৷
সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েই চলেছে৷ উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ইথিওপিয়ায় ভুট্টার দানার দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ; সোমালিয়ায় গমের দাম বেড়েছে ৩০০ শতাংশ, সুদানে ৯০ শতাংশ৷ এবং এই সব দরিদ্র দেশে, যেখানকার মানুষদের আয়ের ৮০ শতাংশ যায় খাবার কিনতে, সেখানে খাদ্যশস্যের দাম কিছুটা বাড়ার মানেই অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি৷ অপরদিকে খাদ্যশস্যের দাম দারুণভাবে পড়ে গেলে চাষিদের অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়তে পারে৷
‘ফিউচার্স', অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নিয়ে সওদা
আলিয়ানৎসের বক্তব্য হল, তাদের তরফ থেকে বিনিয়োগকারীদের বলা হয়, দাম যখন পড়ছে, তখন কেনো; দাম যখন চড়ছে, তখন বেচো৷ এর ফলে খাদ্যশস্যের দাম খুব বেশি বাড়তে কিংবা পড়তে পারে না৷ তাছাড়া তথাকথিত ‘ফিউচার্স' নিয়ে ব্যবসাতেও কাঁচামাল কেনাবেচা হয় না; কেনাবেচা হয় শুধু তার দামের ওঠাপড়ার ঝুঁকিটা নিয়ে৷ চাষিরা দাম পড়ার বিরুদ্ধে বীমা কেনে; তাদের পণ্যের ক্রেতারা দাম চড়ার বিরুদ্ধে বীমা কেনে৷
বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও মতভেদ আছে৷ একদলের মতে বীমা কোম্পানি কি ব্যাংকদের ফাটকা নয়, খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে পশুর খাদ্যের জন্য কৃষিভূমি চলে যাচ্ছে বলে, কিংবা বায়ো-ফুয়েলের জন্য কৃষিজমি আটকা পড়ছে, সেই কারণে৷ কিন্তু ‘‘ক্ষুধা নিয়ে রুলেটের'' পক্ষে কি বিপক্ষে যতো যুক্তিই থাক না কেন – এবং সেই সঙ্গে যুক্তিতর্ক – জার্মানির কিছু কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যেই এই মানুষের অন্ন নিয়ে ফাটকা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে: যেমন বাডেন-ভ্যুর্টেমবের্গ ও বার্লিনের প্রাদেশিক ব্যাংক; কমেরৎস ব্যাংক; ডেকা ব্যাংক৷ কিন্তু অক্সফ্যামের দাবি, শেষমেষ সরকারবর্গকেই এই খাদ্যশস্যের ফাটকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷